Image description

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজনকে থানা হেফাজত থেকে নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে আনেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। এ ঘটনায় বিব্রত হয়েছে দলটি। এ প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করছে দলের নীতিনির্ধারকরা।

সোমবার (১৯ মে) রাতে ধানমন্ডিতে মব সৃষ্টি করে একজন পাবলিসার্সকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে তার বাসার সামনে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক। পরে সেখান থেকে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। হেফাজতে নেওয়ার পর সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়া একজনকে নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে আনার ঘটনায় আলোচনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে এনসিপির নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের কেউ কেউ দলীয় প্রধান নাহিদ ইসলাম এবং শৃঙ্খলা কমিটিকে বিষয়টি অবহিতও করেন।

এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতা কালবেলাকে বলেন, হান্নান মাসউদের আসামি ছাড়িয়ে আনাকে আমরা নেতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তার কারণে এনসিপির ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে। এনসিপিকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টা নিয়ে দলের ভেতরে বেশ আলোচনা হচ্ছে। অব্যাহতি প্রাপ্ত একজনকে এভাবে ছাড়িয়ে আনতে পারেন না তিনি। এই কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট সবাই। শীর্ষ পর্যায়ের নেতা না হলে এতক্ষণে শোকজও করা হতো। আমরা চাই না আগামীতে এই ঘটনা আর ঘটুক।

 

শৃঙ্খলা কমিটির এক সদস্য কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে অনেকেই অভিযোগ আকারে আমাদের জানিয়েছেন। যেহেতু তিনি প্রথম সারির একজন নেতা, সেহেতু তার বিষয়ে দলের আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব দেখবেন।

এনসিপির প্রথমসারির এক নেতা কালবেলাকে বলেন, কারো সাথে আলোচনা না করেই একক সিদ্ধান্তে হান্নান মাসউদ থানায় গিয়ে ছাড়িয়ে এনেছেন। আমরা এটা নিয়ে ইতোমধ্যে কথা বলেছি এবং কাল আবার বসব, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

 

শোকজ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শোকজ দেওয়া হবে না, অনানুষ্ঠানিকভাবে শীর্ষস্থানীয় নেতারা বসবেন।

মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবিধানিকদের এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আলাদা স্বতন্ত্র একটি প্লাটফর্ম। তারা নতুন করে কাউন্সিল করবে শুনেছি। নতুন নেতৃত্ব আসলে আশাকরি বিশৃঙ্খলা দূর হবে। আর হান্নান মাসউদের বিষয়টি আমরা শুনেছি, তদন্ত করছি, খতিয়ে দেখছি।

এদিকে মোহাম্মদপুর থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আটক নেতাদের বিষয়ে কেন থানায় গিয়েছেন, তা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক স্ট্যাটাসে তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করেন।

স্ট্যাটাসে হান্নান মাসউদ লেখেন, ‘মোহাম্মদপুর থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ তিনজনকে আটক করা হয় মব সৃষ্টির চেষ্টাকালে। যার ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয়ে স্টুডেন্টরা ধানমন্ডি থানায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছিল।’

‘এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধে আমি সেখানে যাই। সেখানে গেলে প্রশাসনের অনুরোধে বিষয়টির মধ্যস্থতা করি। যেহেতু প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ রুজু করেননি এবং করতেও চাচ্ছিল না।’

প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী একটা মঞ্চের ব্যানারে নিয়মিত মব সৃষ্টি করা ব্যক্তিদের মধ্যেও একজন সেখানে ছিল, যেটা পরবর্তীতে আমি জানতে পারি। এই বিষয়ে প্রশাসনকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ এই মব সৃষ্টির মূল হোতারা দ্রুত অ্যারেস্ট হবে। ডিএমপিকে তাদের ব্যাপারে ইনফর্ম করা হয়েছে বলেও লেখেন হান্নান মাসউদ।