Image description
♦ ভারতের পদক্ষেপে স্থলবন্দরে অচলাবস্থা, আটকে গেছে এলসি করা পণ্য ♦ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক আজ ♦ পাল্টাপাল্টি নয়, আলোচনা করে সমাধানের তাগিদ সংশ্লিষ্টদের

স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টারস খ্যাত সাত রাজ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। স্থলবন্দরগুলোতে পণ্য নিয়ে আটকে আছে ট্রাকের সারি। নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির উদ্দেশ্যে এলসি করা পণ্যগুলো ছাড় পাবে কি না, সে বিষয়েও নিশ্চয়তা মেলেনি। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও আসেনি বন্দরের কাস্টমস অফিসগুলোতে। ফলে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টারসে পণ্য রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে দেশটির সাত রাজ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে ভারতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে জরুরি সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ (মঙ্গলবার) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির চ্যালেঞ্জ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে আন্তমন্ত্রণালয়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতের সিদ্ধান্তে যে পাঁচটি বন্দর নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে, সেগুলো দিয়েই মূলত সেভেন সিস্টারসে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়। ফলে ভারতের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সেভেন সিস্টারসে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেল। কলকাতা দিয়ে সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব না, কারণ এতে পরিবহন ব্যয় ও পণ্য ছাড়ের সময় দুটোই বেড়ে যাবে, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলেও যোগ করেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন এফবিসিসিআই প্রশাসক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় আট কোটি জনগণের বিরাট বাজার হচ্ছে সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাত রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড ও মণিপুর। এর মধ্যে ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় এবং মিজোরাম এই চার রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এই সীমান্ত বন্দরগুলোতে। গত শনিবারের এই নিষেধাজ্ঞার পর থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকে আছে স্থলবন্দরগুলোতে।

এদিকে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গতকাল সিলেটের শেওলা স্থলবন্দর থেকে পণ্যবোঝাই ১১টি ট্রাক ফিরে গেছে। ভারতের ওপাশে সুতারকান্দি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়ায় রপ্তানিকারকরা পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো স্থলবন্দর থেকে ফিরিয়ে নেন। শেওলা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শাহ আলম জানান, স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য ভারতে রপ্তানি হয় তার বেশির ভাগই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে। ফলে পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো ফিরিয়ে নিয়েছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস জানান, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে দুদেশের ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আলোচনা করে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা গেলে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও জনগণ লাভবান হবে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে লালমনিরহাট সীমান্তবর্তী বুড়িমারী স্থলবন্দরেও অন্তত ৩০টি খাদ্যপণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে।

স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার রাহাত হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে এসব মালামাল ভারতে যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি। ফলে নিষেধাজ্ঞার আগে এলসি করা পণ্য ছাড় হবে কি না, সে বিষয়েও কোনো নিদের্শনা নেই আমাদের কাছে। অপরদিকে ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে হুমকির মুখে পড়বে রপ্তানি কার্যক্রম। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে প্রায় অর্ধশত ট্রাক বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে ত্রিপুরায় গেলেও নিষেধাজ্ঞার পর সোমবার মাত্র ১৬টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রপ্তানি বন্ধ থাকায় শুল্ক স্টেশন, বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন।

ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে বেনাপোল স্থলবন্দরেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বন্দরের রপ্তানি কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। গতকাল রপ্তানিপণ্য নিয়ে ৩৬টি ট্রাক ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও পরে তা আটকে দেওয়া হয়। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কামাল উদ্দিন শিমুল জানান, স্থলবন্দরের পরিবর্তে সমুদ্র ও আকাশপথে পণ্য রপ্তানি করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের ব্যবসায়ীরা। আর বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বন্দর দিয়ে কাঁচামালজাতীয় পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে, তবে নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সিলেট, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি)।