Image description

পিতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর পর থেকে আর্তনাদ করছেন কন্যা সামিরা তানজিন চৌধুরী। বিচার চাইবেন কার কাছে। কে দেবে সান্ত্ব্তনা। নির্মম সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অসহায়ের মতো পিতার মৃত্যু দেখেছেন। পিতাকে শেষ সমাহিত করতে পারেননি নিজ এলাকা কানাইঘাটে। তবে, মুক্ত পরিবেশে মরদেহ এসেছে নিজ এলাকায়। সমাধি হয়েছে এতিমখানার উঠোনে। পিতার মৃত্যুর সময় শোক সইতে না পেরে হাসপাতালে ছিলেন সুইডেন সরকারের এনার্জি ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ নায়েম শফি চৌধুরী। পিতার মৃত্যুতে পাহাড়সম অভিমান তার। পিতার কবর কানাইঘাটে স্থানান্তরিত হওয়ার পর কিছুটা অভিমান ভেঙেছে। বোনের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত দেশে আসার জন্য মত দিলেন সুইডিশ এ এনার্জি বিশেষজ্ঞ। রোববার এলেন দেশে। বোন সামিরা তাকে রিসিভ করলেন। ইউরোপের এনার্জি ট্রেডিং ইন্ডাস্ট্রিতে যে স্বল্প কয়জন ব্যক্তি এক্সপার্ট হিসেবে বিবেচিত হন তাদের একজন মোহাম্মদ নায়েম শফি চৌধুরী।

ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমপর্যায়ের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে পড়াশোনা শেষ করে সুইজারল্যান্ড সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েছেন। স্বজনরা জানিয়েছেন, কানাইঘাট তথা বৃহত্তর জৈন্তিয়ার মেধাবীদের গর্ব শফি কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গত দুই দশক ধরে নিজ জন্মভূমিতে আসতে পারেননি। তার পিতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হারিছ চৌধুরী বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি মিথ্যা মামলা ও মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের দুই বছর আগে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। পিতার এমন করুণ মৃত্যুর ঘটনায় নায়েম চৌধুরী দেশের প্রতি প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে বিদেশেই অবস্থান করছিলেন। কয়েক মাস আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তার পিতার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মাননার সঙ্গে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে কানাইঘাটের মাটিতে সমাহিত করার আদেশ কার্যকর করলে নায়েম চৌধুরীর অভিমান দূর হয়। বড় বোন ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে তিনি দেশে আসতেও রাজি হন।

হারিছ তনয়া সামিরা জানিয়েছেন, ‘আগামী শুক্রবার তার ভাই কানাইঘাটের সড়কের বাজার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করবেন এবং পিতার কবর জিয়ারত করবেন। পিতার কবরের পাশে একটি মেমোরিয়াল গার্ডেনের কাজেরও উদ্বোধন করবেন। এর পরের দিন হারিছ চৌধুরীর গড়ে তোলা কিছু প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন।’ তিনি বলেন, ‘তার পিতা হারিছ চৌধুরীর রেখে যাওয়া বিভিন্ন শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান, এস এস ট্রাস্ট এবং জনহিতকর কাজের জন্য দানকৃত সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিকে সঠিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত করার জন্য তারা ভাইবোন মিলে ‘মরহুম আবুল হারিছ চৌধুরী ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলার একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। এই ফাউন্ডেশনটিকে কার্যকর করাও নায়েম চৌধুরীর দেশ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।’ এদিকে, ভাইয়ের দেশে ফেরা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছে সামিরা।

 সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘১/১১-র পর থেকে বাবার ওপর ১৪ বছর ধরে চালানো অত্যাচারের কালো অধ্যায়টি জুড়ে ছিল তার বুকভরা যন্ত্রণা আর চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস। ছেলে হয়ে বাবার জন্য কিছু করতে না পারার শ্বাসরুদ্ধকর ক্ষোভ; এরপর বাবা হারিয়ে তীব্র অভিমান নিয়ে দীর্ঘদিন দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিল সে। আমি সাক্ষী তার জীবনের সম্পূর্ণ আকাশ জুড়ে ছিল বাবা, আমাকে বলেছিল ‘আব্বুর কিছু হলে আমার আকাশ ভেঙে পড়বে আপু’। তিনি লিখেন, ‘স্বৈরাচারের গোয়েন্দা আর নতজানু হলুদ মিডিয়া আব্বুর মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যা খবর প্রচার করে। আরেক দফা শুরু হয় শিকারি সাংবাদিকদের সংবাদ সন্ত্রাস, নানা মিথ্যাচার আর কল্পকাহিনী রচনা করা হয়। বহুদিন আব্বুর খবরের অনুসন্ধানরত মতি আঙ্কেলকে (মতিউর রহমান চৌধুরী) আমার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন মুশফিক চাচা (মুশফিকুল ফজল আনসারী) যেন আমি সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারি। আমি তখন ঢাকাতে আব্বু যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেখানে একা ও অনিরাপদ। আমি একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে লেখা থেকে বিরত থাকেন মতি আঙ্কেল। অবশেষে আব্বুর মৃত্যুর তিন মাস পর তিনি সত্য প্রকাশ করতে পারেন।’