Image description
2

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় শিক্ষার্থী হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা  মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামনে এসেছে নানা প্রশ্ন। তার গ্রেপ্তার নিয়ে সরকারের একজন উপদেষ্টা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নুসরাত ফারিয়াকে ফ্যাসিস্টের সহযোগী বলে আদালতে উল্লেখ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে তার ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন তিনি জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থনসূচক ফেসবুক পোস্টও দিয়েছেন। 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া কানাডায় ছিলেন। আন্দোলনের পরে তিনি গত ৮ মাস দেশেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু রোববার থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে ভাটারা থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয়া হয়। গ্রেপ্তার দেখানো হয় আন্দোলন চলাকালে এনামুল হক নামের এক শিক্ষার্থী হত্যাচেষ্টা মামলায়। নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে। বিদেশে থেকে তিনি কিভাবে এনামুল হত্যা চেষ্টা করেছেন, এ ছাড়া তাকে কখনো আন্দোলনবিরোধী কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। তবুও তাকে জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে অর্থের যোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তাকে শেখ হাসিনার সহযোগী ফ্যাসিস্ট হিসেবে মামলায় দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে জুয়ার বিজ্ঞাপনের মডেলিং  করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ফারিয়াকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে নড়েচড়ে বসেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেছেন, ফারিয়াকে গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো। আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। এ ছাড়া তার গ্রেপ্তার নিয়ে তার পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ৬২৬ জনকে নিরাপদে বের করে দিয়ে এখন নুসরাত ফারিয়াকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা খুব বিচার করছেন? এগুলো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও গতকাল সচিবালয়ে বলেছেন, তাকে ছেড়ে দিলে সবাই বলতো কেন ছেড়ে দিলেন। 
নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তারের পর সামনে উঠে এসেছে জুলাই আন্দোলনকে ঘিরে ঢালাও মামলা বাণিজ্যের বিষয়টি। 

গ্রেপ্তারের পর রোববার পুরো রাত মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন নুসরাত ফারিয়া। সেখানে তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তোলা হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় মাইক্রোবাসে করে আদালতে নেয়া হয়। তাকে রাখা হয় সিএমএম আদালতের হাজতখানায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল ভূঁইয়া ফারিয়াকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়াও মামলার পরবর্তী জামিন শুনানির জন্য আগামী ২২শে মে দিন ধার্য করেন আদালত।

সরজমিন দেখা যায়, নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজির করার খবরে প্রচুর জনসমাগম ছিল আদালতপাড়ায়। এদিন সকাল ১০টার একটু পরে তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালতে নুসরাত ফারিয়াকে বিমর্ষ দেখা গেছে। তিনি আদালতে কোনো বক্তব্য দেন নি, তবে আইনজীবীর সঙ্গে ইশারায় কথা বলেছেন। সিএমএম কোর্টের প্রধান পিপি যখন একের পর এক যুক্তি তুলে ধরেছিলেন, তখনো নুসরাত ফারিয়া ছিলেন বিমর্ষ। তিনি কাঠগড়ায় দুই হাত রেখে পিপির বক্তব্য শুনছিলেন। এসময় তাকে কান্না করতেও দেখা গেছে।
ফারিয়াকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৯শে জুলাই এনামুল হক ভাটারা থানার সামনে পাকা রাস্তার উপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় মামলার ১০ নম্বর আসামি থেকে শুরু করে মামলার ২৮৩ নম্বর আসামি পর্যন্ত সকলে ছাত্র আন্দোলন দমনে তাদের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এ ছাড়াও এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, ডিবি  হারুন অর রশীদ, বিপ্লব কুমার বিশ্বাস, অসীম কুমার উকিল, মো. ইমরান হোসেন, গোলাম রুহানী, অপু উকিল, গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমকে যথাক্রমে ১ থেকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এসব আসামির হুকুমেই হামলা চালানো হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। ওই মামলায় নুসরাত ফারিয়াকে ২০৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তার নামের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নুসরাত ফারিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে অর্থ যোগানদাতা এবং আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি পদ-প্রার্থী ছিলেন। মামলার বাদী এনামুল হক এজাহারে আরও বলেছেন, গত ১৯শে জুলাই সকাল ১১টায় ভাটারা থানার সামনে আন্দোলন করার সময়ে, হাসিনা গং (১ থেকে ৯ নম্বর আসামি) দের নির্দেশে নুসরাত ফারিয়াসহ আরও ২৭৩ আসামি এবং আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠন এবং ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ সকলে মিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলে দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় এনামুল হক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এ ঘটনায় গত ৩রা মে ভুক্তভোগী এনামুল বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করেন। মামলাটি ৩রা মে এজাহার হিসেবে রেকর্ড হয়।

মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে ফারিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান আদালতকে বলেন, আমার মক্কেল একজন সুপরিচিত অভিনেত্রী। অভিনয় তার পেশা। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নুসরাত ফারিয়া বিদেশে অবস্থান করছিলেন। তিনি বিদেশে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষেও লেখালেখি করেছিলেন, সহমর্মিতাও প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি নুসরাত ফারিয়া যে ওই সময় বিদেশে অবস্থান করছিলেন, এর স্বপক্ষে সব প্রমাণপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান আরও বলেন, নুসরাত ফারিয়া আন্দোলনের সময় কানাডায় ছিলেন। পেশাগত কাজ শেষে গত বছরের ১৪ই আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন। এসময় তিনি ফারিয়ার পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্র আদালতের কাছে জমা দেন।

ওদিকে ফারিয়ার আইনজীবীর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সিএমএম কোর্টের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, নুসরাত ফারিয়া অভিনেত্রী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী। পিপি বলেন, নুসরাত ফারিয়া কেবল ফ্যাসিস্টের সহযোগী নন, তিনি অনলাইনে জুয়ার প্রমোট করছেন। তিনি একটি জুয়ার অ্যাপসের শুভেচ্ছাদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে যখন আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতা আন্দোলন করছিলেন, তখন একদল শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রী তাদের শরীরে গরম পানিও ঢেলে দিয়েছিলেন। তারা অনলাইনে গ্রুপ খুলেছিলেন। জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ওমর ফারুক ফারুকী আরও বলেন, নুসরাত ফারিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বায়োপিকে অভিনয় করেছিলেন। রুপালি পর্দায় তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় করা কোনো দোষের কিছু নয়। কিন্তু তিনি পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন, প্রতিটা ঘরে শেখ হাসিনা রয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়াও তিনি সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে চেয়েছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী হওয়ার কারণে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আদালতকে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা আরও একজন অভিনেতাকে খুঁজছি। তিনি হলেন রুপালি পর্দার নায়ক ফেরদৌস। তিনি ভোট চুরি করে এমপিও হয়েছিলেন। ফ্যাসিস্ট শাসকেরা যেটা করেন, যেসব শিল্পী, যেসব অভিনেতার পরিচিতি আছে, তাদের ফ্যাসিস্টরা কাজে লাগান। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাও সেই একই কাজ করেছেন। নুসরাত ফারিয়া, ফেরদৌসদের মতো অভিনেতা, শিল্পীদের কাছে টেনেছিলেন। তারাও ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামল দীর্ঘায়িত করতে সহযোগিতা করেছেন।

নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুইদিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিলো। ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাতো অনেকদিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নার্ভাসনেস থেকেই হয়তোবা এইসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ক’দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।

নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে দলীয়ভাবে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই গ্রেপ্তারকে লোক দেখানো বলে অভিহিত করেছে দলটি। 
সোমবার রাতে এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়। বিবৃতিতে এ ধরনের ঢালাওভাবে আসামি করা মামলায় গ্রেপ্তার ও জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণের ঘটনা গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়াকে লঘু করে দেখানোর প্রবণতা সৃষ্টি করছে বলেও উল্লেখ করা হয়। 
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি মনে করে এ ধরনের ঘটনা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করছে। অথচ আমরা দেখেছি, জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চলতি মাসেই কোনো রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই দেশত্যাগ করেছেন। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রিত ৬২৬ ব্যক্তির পরিচয় এখনো প্রকাশিত হয়নি।

এনসিপি জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রশাসনের মধ্যে থাকা একটি পক্ষ এই ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ‘জুলাই গণহত্যা’ এবং এর বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। অথচ এখন পর্যন্ত এই গণহত্যার বিচারে আমরা দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। 

ওদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে নুসরাতের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি লিখেছেন, সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিকে দেশ থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়, শিরীন শারমিনকে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে বাসায় গিয়ে পাসপোর্ট করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল জানুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও মে মাসে এসেও শুরু হয়নি। ইন্টেরিম, ৬২৬ জনের লিস্ট কোথায়?  ৬২৬ জনকে নিরাপদে বের করে দিয়ে এখন নুসরাত ফারিয়াকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা খুব বিচার করছেন? এগুলো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন।

ওদিকে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার নামে মামলা ছিল বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তার নামে যদি কেস থাকে তাহলে আপনি কি করতেন? ছেড়ে দিলে আপনারাই তখন বলতেন স্যার আপনি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। নির্দোষ প্রমাণ হলে ছেড়ে দেয়া হবে। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটা ওনার ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। যারা জুলাই গণহত্যায় প্রকৃত অপরাধী তারাই যাতে গ্রেপ্তার হয়, কেউ যেন ভোগান্তির শিকার না হয়, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।