Image description
 
 

চাকরি ফিরে পাওয়াসহ ৪ দফা দাবিতে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনী থেকে বরখাস্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত সদস্যরা। গতকাল রোববার দিনভর জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় অবস্থান ও বিক্ষোভ করেন তারা। বিকেল থেকে প্রেস ক্লাবের ভেতরে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার আলোচনায় দাবি-দাওয়া বিবেচনার আশ্বাস পাওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। আজ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জানাবেন বিক্ষোভকারীরা। 

এদিকে গতরাত ১১টার পর পরিস্থিতি তুলে ধরে একটি বিবৃতি দেয় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এতে বলা হয়, পরপর দু’বার সফল বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দল ফেরত আসার সময় কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বরখাস্ত সেনা সদস্যের উস্কানিতে সেনাবাহিনীর গাড়ির সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত আচরণ এই সুশৃঙ্খল বাহিনীর ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।  চাকরিচ্যুত সদস্যদের ৪ দাবি হলো– চাকরিচ্যুতির সময় থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল। যদি কোনো সদস্যের চাকরি পুনর্বহাল করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধাসহ সম্পূর্ণ পেনশনের আওতাভুক্ত করা। যে আইন কাঠামো ও একতরফা বিচার ব্যবস্থার প্রয়োগে শত শত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেই বিচার ব্যবস্থা ও সংবিধানের আর্টিকেল-৪৫ সংস্কার করা এবং গ্রেপ্তারকৃত আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত সৈনিক নাইমুল ইসলামের মুক্তি।  

 
 

আন্দোলনকারীরা জানান, ‘বাংলাদেশ সহযোদ্ধা প্ল্যাটফর্ম’-এর ব্যানারে গতকাল সকাল ৭টার পর থেকেই তারা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। বেলা ১১টার দিকে প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর গেটের দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দেন। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেওয়ায় এগোতে পারেননি। দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীর সঙ্গে কথা বলতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন সেনাবাহিনীর ‎ভেটেরান ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান। তিনি আন্দোলনরত কয়েকজনের সঙ্গে প্রেস ক্লাবের ভেতরে আলোচনায় বসেন। 

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান প্রেস ক্লাব থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যান। ওই সময় বাইরে থাকা চাকরিচ্যুতরা গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। পরে তিনি আবার তাদের সঙ্গে কথা বলেন। চাকরিচ্যুতরা প্রেস ক্লাবে বসেই সমস্যার সমাধান করতে বলেন। ফলে সেখানে আবার আলোচনা শুরু হয়।

বৈঠক শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের কথা শুনেছি। এগুলো নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের বলেছি সবাইকে আলাদা আবেদন করতে। আবেদনের ঠিকানা আমরা দিয়ে গেছি। ইনডিভিজুয়াল কেসের মেরিট অনুযায়ী আমরা বসব। আলাপ-আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব আমরা জানাব।’

তারা কি আপনাদের কথা মেনে নিয়েছেন– এমন প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান বলেন, ‘হ্যাঁ, মেনেছেন। তারা অপেক্ষা করবেন।’

গতকাল তাদের একজনকে গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘ওটা একটা আইনি বিষয়। মামলার বিষয় এবং তাঁকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায় আমরা করব।’ 
সেনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরখাস্ত সৈনিক মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব সৈনিকের চাকরির বয়স ১০ বছরের নিচে ছিল, তাদের পুনর্বহালের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা। যাদের চাকরির বয়স নেই, তাদের পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, তবে গ্রেপ্তার নাইমুলসহ অন্যদের মুক্তি না দিলে ফের কর্মসূচি দেওয়া হবে।

চাকরিচ্যুত নৌবাহিনীর নাবিক বাহাউদ্দিন বলেন, ‘৯ মাস ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। তাই আমরা অবস্থান কর্মসূচিতে গিয়েছি। আমাদের প্রধান সমন্বয়ককে ধরে নেওয়া হয়েছিল। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছেন, কাল বা পরশুর মধ্যে প্রথম ধাপে একটা ফলাফল দেবেন। যে অপরাধ করেনি তাকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আসা হবে। তবে গুরুতর অপরাধীকে কিছু দেওয়া যাবে না।’ 
‎এ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশমুখ ও চারপাশে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা। সকাল থেকে জাহাঙ্গীর গেট, বিএএফ শাহীন কলেজ, মহাখালী রেলগেট, কাকলী, বনানীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়; ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। সরেজমিন দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর গেট এলাকার উভয় পাশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কড়া পাহারা। এ ছাড়া বিএএফ শাহীন কলেজের সামনে মহাখালী রেলগেট, কাকলী, বনানী, কচুক্ষেতেও ছিলেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে এসব এলাকায় কাউকে জড়ো হতে দেখা যায়নি।

সেনাবাহিনীর বিবৃতি 
আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে রোববার বরখাস্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্যরা তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল, শাস্তি মওকুফ, আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেছেন। শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় প্রেস ক্লাবে যায়। তারা অত্যন্ত ধৈর্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের বক্তব্য শোনেন। প্রতিনিধি দল সেনাবাহিনীর প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসারে দাবি-দাওয়া যাচাই ও সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে অভিযোগগুলো কোনো তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে না পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি উপস্থাপনের পরামর্শ দেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৪ মে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল– এ ধরনের ৮০২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে। যার মধ্যে ১০৬টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকি আবেদনগুলো প্রক্রিয়াধীন। সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও মানবিকতার সঙ্গে এটা বিবেচনা করছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং অশ্রাব্য ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয়। দিনজুড়ে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহমর্মিতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু সংখ্যক বিশৃঙ্খল সাবেক সদস্যকে ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছে। সাংবিধানিক কাঠামো ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুনরায় সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।