Image description
আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বরাদ্দ । সবচেয়ে বেশি কমছে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে, বাড়ছে মেট্রোরেল লাইন-৫ এর বরাদ্দ ।

সর্বোচ্চ খরচের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মেগা ১০ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) এডিপিতে ছিল ৩৪ হাজার ৮১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ আছে ৩০ হাজার ৫০৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ হিসাবেও নতুন উন্নয়ন বাজেটে কমছে ২ হাজার ১১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এদিকে ১০ প্রকল্পের মধ্যে বরাদ্দ কমছে ৮টিতেই এবং বাড়ছে দুটিতে। সবচেয়ে বেশি কমছে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে এবং বাড়ছে মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পের বরাদ্দ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রোববার যুগান্তরকে জানান, অনেক মেগা প্রকল্পের নকশাও বদলে যাচ্ছে। ফলে বরাদ্দ হেরফের হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বেশ কিছু প্রকল্পে কম বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যাতে অপচয় না হয়। যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন না হলেও ধীরে চলা হচ্ছে। কেননা এ প্রকল্পটি ঘিরে স্থানীয় নানা ধরনের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন প্রকল্প আলাদাভাবে নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পের বিষয়ে আগে ভাবা হয়নি কেন? সেগুলোতেও অনেক বরাদ্দ দিতে হচ্ছে। কিছু প্রকল্পে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ রকম নানা কারণে বরাদ্দ কমলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে খুব বেশি সমস্যা হবে না।

প্রকল্পগুলো হলো-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প। এছাড়া দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, মেট্রোরেল লাইন-৬, মেট্রোরেল লাইন-১, মেট্রোরেল লাইন-৫ নর্দার্ন রুট এবং মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রূপপুর পারমাণকি বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় করা হচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজার ২২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। পরে এডিপি সংশোধনের সময় বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে দেওয়া হয় ৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। এখন আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার ১১ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে মূল সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় নতুন বরাদ্দ বাড়লেও মূল এডিপির তুলনায় কমছে ৪৯১ কোটি টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়িয়ে ধরা হয় ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য ব্যাপক কমিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তুলনামূলক বরাদ্দ কমছে ৫ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল লাইন-৬) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয় ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ কমছে ৬২৮ কোটি টাকা। এখন পর্যস্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫৩ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয় ২ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। তুলনামূলকভাবে এ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে ৫ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-৫ নর্দার্ন রুট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৯৬৮ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয় ৮৬৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ৫২২ কোটি টাকা।

সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩১৫ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয় ১১৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া হচ্ছে ১৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে মূল এডিপির তুলনায় কমছে ১৫৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে কিছুটা কমিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ হাজার ৩৭৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তুলনামূলক বরাদ্দ কমছে ১ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয় ৩ হাজার ৬৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে মূল এডিপির তুলনায় কমছে ৪৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয় ১ হাজার ৯৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে আরও কমিয়ে ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে মূল এডিপির তুলনায় কমছে ২ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে কমিয়ে ধরা হয় ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে আরও কমিয়ে ধরা হচ্ছে ৫৬২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে রামু থেকে গুনদুম অংশের রেলপথ বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে বরাদ্দ কমছে ৮৮৮ কোটি টাকা।