Image description

এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড। ২৩ হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাজ করেন এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে। এই কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি যে আয় করে তার প্রকৃত হিসাব না দেখিয়ে অন্তত শতকোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এই কর ফাঁকি দিতে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ। কর ফাঁকি দিয়ে কোম্পানিদের মালিকদের নামে-বেনামে সম্পদ গড়ারও তথ্য মিলেছে অনুসন্ধানে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নিজের ও স্ত্রীর নামে অন্তত ৩২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩ শতাধিক যৌথ অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতেই কৌশলে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রতি বছর শুল্ক ফাঁকি দিতেই এই জালিয়াতিতে জড়িয়েছে কোম্পানিটি। তথ্য গোপন করেছে আরও ২৪০০ কোটি টাকার। 

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর গোয়েন্দা বিভাগের অগ্রগতি প্রতিবেদন ঘেঁটে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি বছর কোম্পানির সামান্য আয় দেখিয়ে এর মালিক পুরো টাকাই স্ত্রী ও তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রেখেছেন। কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ, ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ও প্রকৃত ব্যাংক স্থিতিতে অর্থের পরিমাণ কম দেখিয়েছেন। এ ছাড়া স্থায়ী সম্পদের তথ্য, ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়ের তথ্য গোপন কোম্পানি এবং কোম্পানির মাধ্যমে পাওয়া অর্থপ্রাপ্তির প্রকৃত তথ্য গোপন করেছে এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড কোম্পানি। আর এভাবেই এই কোম্পানিটির মালিকেরা ৭ বছরে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য হাওয়া করে দিয়েছেন। তাই সিকিউরিটি সার্ভিসের আড়ালে অবৈধ সম্পদ ব্যবস্থাপনার আশঙ্কা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রায় দুই যুগ ধরে  কোম্পানিটির অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন করে সরকারের প্রায় একশ’ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় কর্মী সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ২ যুগ ধরে এ কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড। ১৯৯৯ সালের ১১ই নভেম্বর এলিট ফোর্স নামের এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। ২০০১ সালের পর থেকে এলিট ফোর্সের কর্মক্ষেত্র বিস্তৃতি ঘটেছে। ব্যাংক ও তাদের বুথের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এলিটের গার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে তালিকার প্রথম সারিতে রাখছে। দেশের স্কুল-কলেজ, শপিংমল, বেসরকারি কোম্পানি, ব্যাংক, বীমা, ব্রকারেজ হাউজ, হাসপাতাল, বাসাবাড়ি, মার্কেট, শিল্পপতি, গার্মেন্টস, পাওয়ার প্লান্ট, দূতাবাস, সিমেন্ট ও জাহাজ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সাল থেকে ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসেও সিকিউরিটির দায়িত্ব পালনে কাজ করছে এলিট সিকিউরিটি। 

গোপনে যেসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন আজিজ পরিবার: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কোম্পানির আয়কর নথিতে কোম্পানির নামে মাত্র ৯টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্তে কোম্পানির নামে ৩৭টি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। এদিকে আয়কর নথিতে এলিট সিকিউরিটির মালিক শরীফ আজিজের মাত্র ৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্তে এই দম্পতির অন্তত ৩ শতাধিক ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে এনবিআর। এরমধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৪টি, সিটি ব্যাংকে ৩টি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ১৪টি, ব্র্যাক ব্যাংকে ১০টি, ট্রাস্ট ব্যাংকে ৮টি, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে ১০টি, সীমান্ত ব্যাংকে ২টি, ইস্টার্ন ব্যাংকে ১০টি, আইএফআইসি ব্যাংকে ২টি, ইসলামী ব্যাংকে ৮টি, কমিউনিটি ব্যাংকে ৩টি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান-এ ১টি, এক্সিম ব্যাংকে ২টি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ২১টি, ব্যাংক আল ফালাহয় ১০টি, উরি ব্যাংক বাংলাদেশ এ ১৭টি, এসবিএসি ব্যাংক ১৫টি, এবি ব্যাংকে ২টি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ৩টি, ডেল্টা ব্যাংক হাউজিং লিমিটেড-এ ১৪টি, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-এ ১টি, অগ্রণী ব্যাংক-এ ১টি, হাবিব ব্যাংক বাংলাদেশ-এ ১টি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান- লংকাবাংলা লিমিটেড-এ ৭টি, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড-এ ৭টি, এইচএসবিসি লিমিটেড-এ ১টি, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-এ৭টি, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড-এ ১৫টি। এসব ব্যাংকে হিসাবধারী এলিট সিকিউরিটির ব্যবস্থাপনা শরীফ আজিজ ও তার স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শরীফ সেনে সেমবিল। কোম্পানিটির আয়-ব্যয়ের অধিকতর তথ্য সংগ্রহে ও আয়-ব্যয়ের ধারণা নিতে মানবজমিন এলিট সিকিউরিটির অন্তত ৩ জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কাওরান বাজারের একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে কর্মরত একজন সিকিউরিটি গার্ড মানবজমিনকে বলেন, তাদের দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। বেতন পদ অনুসারে ৮ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। বেশি বেতন পেতে তাদের বেশির ভাগ কর্মী ওভারটাইমও করেন। এতে কখনো কখনো ১২ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়। এদিকে কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী এলিট ফোর্সে ২০২৩ সালে প্রহরীর (গার্ড) সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৫০০ জন। তাদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, একজন কর্মী যদি মাসে গড়ে ১০ হাজার টাকা বেতন পান, তাহলে কোম্পানির মোট মাসিক বেতন ব্যয় দাঁড়ায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা। এতে বছরে দাঁড়ায় ২৭০ কোটি টাকা। গার্ডদের বেতন ছাড়াও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা, তিনটি ট্রেনিং একাডেমির ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং ১৫ থেকে ২০টি ডগ স্কোয়াডের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ নানা ধরনের ব্যয় আছে কোম্পানিটির। সবমিলিয়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ২০২৩-২৪ করবর্ষে কোম্পানিটি আয় দেখিয়েছে ১৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ব্যয় দেখিয়েছে ১৩৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। মুনাফা দেখানো হয় ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যা কর্মীর সংখ্যা ও আয়ের হিসাবের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর এভাবেই গত ৭ বছরে ধারাবাহিকভাবে কম আয়-ব্যয় দেখিয়েছে কোম্পানিটি। গত ৭ বছরের আয়কর নথিতে এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড ৯টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিয়েছে। সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে এ তথ্য যাচাই-বাছাই করে এনবিআরের কর গোয়েন্দা ইউনিট। সবমিলিয়ে সংস্থাটির দেয়া প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানির প্রকৃত ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ৩৭টি। এতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটি তাদের চার ভাগের তিন ভাগ ব্যাংক হিসাবের তথ্যই গোপন করেছে। প্রতিবেদনে কর গোয়েন্দারা জানান, গোপন করা হিসাবগুলোতে নিয়মিত বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হতো। ৭ বছরে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। কিন্তু কোম্পানির আয়কর নথিতে দেখানো হয়েছে মাত্র ৭৬১ কোটি টাকা। নথিপত্র বলছে, ৭ বছরে বিভিন্ন হিসাবে ১ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য গোপন করেছে কোম্পানিটি। গোয়েন্দাদের ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ৭ বছরে বিপুল পরিমাণ স্থিতি গোপন করেছে। গত ৭ বছরে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু আয়কর নথিতে দেখানো হয়েছে ৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এসব স্থিতির বিপরীতে সুদও পেয়েছে কোম্পানিটি। অবশ্য সুদের তথ্যও গোপন করা হয়েছে। কর গোয়েন্দাদের হিসাবে, স্থিতি গোপন করে আয়কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে সাড়ে ২২ কোটি টাকা। সুদ ও জরিমানাসহ যা আরও বেশি হবে।   

বিপুল পরিমাণ সম্পদ গোপন: ঢাকার গুলশান, বারিধারা ও নদ্দা এলাকায় এলিট ফোর্সের কয়েকটি অফিস ও স্থাপনার সন্ধান পেয়েছে কর গোয়েন্দারা। তারা জানান, কোম্পানিটির তিনটি ট্রেনিং একাডেমি এবং একটি অফিস আছে। কিন্তু এসব একাডেমির তথ্য নেই আয়কর নথিতে। প্রতিটি একাডেমি প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এসব স্থাপনার বাজারমূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা। যা আয়কর নথিতে দেখানো হয়নি। 

ব্যক্তিগত নথিতেও তথ্য গোপন: এলিট সিকিউরিটি ফোর্স লিমিটেড কোম্পানিটি একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শরীফ আজিজ। ১৯৯৯ সালে তিনি কোম্পানি শুরু করেন। তার স্ত্রী শরীফ সেনে সেমবিল, ছেলে শরীফ শামাম আল ওয়াফি, কন্যা শরীফ জুয়েনা জাইম কোম্পানির পরিচালক। শরীফ আজিজ ও শরীফ সেনে সেমবিল আয়কর নথিতে মাত্র ৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দু’জনের নামে, একক ও যৌথ, তিনশর বেশি হিসাবের তথ্য পেয়েছেন কর গোয়েন্দারা। ব্যাংক হিসাব গোপন করে শরীফ সেনে সেমবিল ১৬১ কোটি টাকার এফডিআর গোপন করেছেন। এ ছাড়া ব্যাংকে বিভিন্নভাবে থাকা আরও ৫৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা গোপন করেছেন তিনি। অন্যদিকে, শরীফ আজিজের গোপন করা ব্যাংক হিসাবে মিলেছে ২১৩ কোটি টাকার এফডিআরের তথ্য। এফডিআর ছাড়া আরও ছিল ৫৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। 

স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সম্পদের পরিমাণ: এনবিআরে শরীফ আজিজ দম্পতির দাখিল করা ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর নথির তথ্যও পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। সবশেষ হিসাবে, শরীফ আজিজের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এই করবর্ষে তিনি আয় দেখান প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। কর দেন ১৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। শরীফ আজিজের স্ত্রী শরীফ সেনে সেমবিলের বৈধ সম্পদের পরিমাণ এখন ৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ করবর্ষে তিনি আয় দেখান ৬৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। কর দেন ১৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ফ্ল্যাট আছে এই দম্পতির। আয়কর গোয়েন্দাদের হিসাবে, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতি ও সুদ আয় গোপন করে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছেন এই দম্পতি। শরীফ আজিজের ফাঁকির পরিমাণ ২৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। শরীফ সেনে সেমবিলের ফাঁকির পরিমাণ ২২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কর ফাঁকি নির্ণয়ে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত ব্যাংক জমা বিবেচনা করেননি গোয়েন্দারা। 

এনবিআরের সঙ্গেও জালিয়াতি: এলিট সিকিউরিটি যেসব কোম্পানিকে গার্ড ও সেবা দেয়, সেসব কোম্পানি ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করে। বিল পরিশোধের সময় উৎসে কর কেটে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয় ব্যাংকগুলো। যা পরবর্তিতে নিট মুনাফা ও করের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। কর গোয়েন্দাদের হিসাবে, গত ৭ বছরে উৎসে করের ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এনবিআর থেকে ফেরত নিয়েছে এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসেস। এর মধ্যে আড়াই কোটি টাকা কর সমন্বয় করা হয় ও বাকিটা চেকের মাধ্যমে ফেরত নেয় কোম্পানিটি।  এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসের কর ফাঁকি তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে কর গোয়েন্দা ইউনিট। তবে এরই মধ্যে একটি সাময়িক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তদন্ত চলাকালে দফায় দফায় অভিযুক্তদের বক্তব্য নেয়া হয়। তবে কোনো সদুত্তর মেলেনি। গোয়েন্দাদের ধারণা, গোপন করা সম্পদগুলো ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব অবৈধ সম্পদের মালিক বা এর সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে। তাদের খুঁজে বের করতে ব্যাংক হিসাবের তথ্য ধরে তদন্ত করা যেতে পারে বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। 

যা বলছেন শরীফ আজিজ: অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ মানবজমিনকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। ওখানে তারা যে অভিযোগ করেছেন আমরা তার ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত আছি। তাদের প্রতিবেদনে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। আমরা এত অপরাধ করিনি। তারা যেভাবে বলছেন। আপনারা রিপোর্ট করবেন তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে সত্যটা লিখবেন এটাই চাওয়া। এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর ও অমানবিক। গত ৪ মাস আগে তারা (এনবিআর) যা কিছু জানিয়েছে, তার বৈধতা এবং সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। তাদের (এনবিআর) প্রতিটি বিষয়ের ওপর ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করে আসছি। এখন পর্যন্ত ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আমাদের কিছুই জানায়নি। সবকিছু একতরফা ছিল। ভালো হয়েছে যে, আমরা ইতিমধ্যেই কর পরিশোধ করা শুরু করেছি। এনবিআর যদি সঠিক হয় তাহলে আমরা সমস্ত অভিযোগ মেনে নিবো। এবং সমস্ত কর পরিশোধ করবো। এমনকি অপরিশোধিত করও। এ ছাড়া আমরা আর কী করতে পারি। করজনিত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমি আল্লাহর কাছে আবেদন করছি। এনবিআর যে অবিচার করছে, তার জন্য এখনো সর্বশক্তিমানের কাছে অভিযোগ করছি।