Image description

নিউইয়র্কভিত্তিক সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর সম্পাদক ও বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ডা. ওয়াজেদ খান বলেছেন, এখন সময় এসেছে ৫৪ বছর পর বাংলাদেশে রাজনীতির কিছু অধ্যায় চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার। তাঁর মতে, অতীতমুখী রাজনীতি আমাদের সামনের দিকে এগোতে বাধা দিচ্ছে। যেসব বিষয় ইতোমধ্যে ইতিহাস হয়ে গেছে, সেগুলো নিয়ে বারবার আলোচনা না করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

ডা. ওয়াজেদ বলেন, "জামায়াতে ইসলামী এখন আর কোনও ধর্মীয় দল নয়। তারা বাংলাদেশে ধর্মীয় শাসন কায়েম করতে পারবে না। তাদের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মাওলানা মওদুদী, যিনি ১৯৪২ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিলেও একটি আসনও পায়নি। এরপর ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল এবং ভারত বাংলাদেশ দখল করে নেবে বলে আশঙ্কা করেছিল।"

তিনি উল্লেখ করেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার পরেও জামায়াত দুঃখপ্রকাশ করেনি। তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী পরিষদে জামায়াতের চারজন মন্ত্রী ছিল। ১৬ ডিসেম্বরের পরও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি, যদিও পরবর্তী সময়ে কিছু দুঃখপ্রকাশের ঘটনা ঘটেছে।

ডা. ওয়াজেদ খান বলেন, ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বিএনপি, এরশাদ, এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গেও তারা কখনো সরাসরি, কখনো পারস্পরিক স্বার্থে রাজনৈতিকভাবে একত্র হয়েছে। তিনি বলেন, "২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারে জামায়াত দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পায়। এর আগে ৯১ এবং ৯৬ সালের নির্বাচনেও তারা বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল। আবার এক সময় তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও ঐক্য করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে।"

তিনি বলেন, জামায়াতের রাজনৈতিক বিকাশের জন্য কোনো একটি দল এককভাবে দায়ী নয়, বরং দেশের সব বড় রাজনৈতিক দলই কমবেশি দায়ী। তবে তিনি স্বীকার করেন, বর্তমান প্রজন্ম যারা ছাত্রশিবির হয়ে জামায়াতের নেতৃত্বে এসেছে, তারা বাংলাদেশেই জন্মগ্রহণ করেছে এবং সরাসরি ১৯৭১ সালের যুদ্ধপরাধে যুক্ত ছিল না। তবে তারা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করেছিল।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৪ সালের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা করে দেয়। জামায়াতের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে জামায়াতের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করলেও তাদের পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, "জামায়াত এখন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে গেছে। তাদের বারবার একাত্তরের দায়ে ঠেলে দেওয়া বা বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলার চিন্তা অবাস্তব। তারা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে যে তারা ভুল করেছে এবং ক্ষমা চায়, তাহলে অতীত নিয়ে টানাহেঁচড়া না করে ভবিষ্যতের দিকে তাকানো উচিত।"