Image description

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দ্রুততা যেন শুধুই নামে। ঢাকার চারটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় থাকা ৩৪টি মামলার মধ্যে মাত্র ১৩টির বিচারকাজ চলছে। বাকি ২১টি মামলার ওপর রয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় দুই শতাধিক মামলা ফেরত পাঠানো হয়েছে আগের আদালতে।

অবস্থাটি আরো স্পষ্ট হয় পরিসংখ্যানেএই চার ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে বিশেষ দায়রা আইনে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯২৭টিতে। অথচ এসব আদালত গঠন করা হয়েছিল চাঞ্চল্যকর, গুরুতর অপরাধ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যেই।

স্থবিরতায় আটকে দ্রুত বিচার : আইনজীবী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘসূত্রতা ও স্থগিতাদেশের জট থেকে বের না হলে দ্রুত বিচার অর্থহীন হয়ে পড়বে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালেও বিচার দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে, বিচারকের নির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে, সময়সীমা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং প্রসিকিউশনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

২০০২ সালে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলার নিষ্পত্তির সময়সীমা আইনে নির্ধারিতপ্রথম ৯০ কার্যদিবস, পরে দুই দফায় ৩০ ও ১৫ দিন করে সর্বোচ্চ ১৩৫ কার্যদিবস। এর পরও নিষ্পত্তি না হলে মামলাটি ফেরত যায় আগের আদালতে। কিন্তু বাস্তবে বেশির ভাগ মামলাই এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না। বিচারকের অভাব, প্রসিকিউশনের দুর্বলতা ও আইনি জটিলতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দ্রুত বিচার ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য।

কী বলছে পরিসংখ্যান?

ঢাকার চারটি ট্রাইব্যুনালের প্রতিটির তথ্য বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, দ্রুত বিচার আইন কার্যকর হলেও তা প্রয়োগে গতি নেই।

ট্রাইব্যুনাল-১ : দ্রুত বিচার আইনের মামলা ১৩টি (বিচারাধীন আট, স্থগিত পাঁচ)। বিচারাধীন বিশেষ দায়রা মামলা এক হাজার ৪৯টি। মোট মামলা এসেছে ২১৫ (২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ৪২টি); নিষ্পত্তি ১৫৮টি, ফেরত ৫১টি।

ট্রাইব্যুনাল-২ : দ্রুতবিচার মামলা আটটি (বিচারাধীন এক, স্থগিত সাত)। বিচারাধীন বিশেষ দায়রা মামলা দুই হাজার ৮৭টি। মোট মামলা এসেছে ১৯১টি; নিষ্পত্তি ১৩৬টি, ফেরত ৪৪টি।

ট্রাইব্যুনাল-৩ : দ্রুত বিচার মামলা ৯টি (বিচারাধীন দুই, স্থগিত সাত)। বিচারাধীন বিশেষ দায়রা মামলা এক হাজার ৬৮৩টি। মোট মামলা এসেছে ২৮০টি; নিষ্পত্তি ১৯৭টি, ফেরত ৭৪টি।

ট্রাইব্যুনাল-৪ : দ্রুত বিচার মামলা চারটি (বিচারাধীন দুই, স্থগিত দুই)। বিচারাধীন বিশেষ দায়রা মামলা এক হাজার ১০৮টি। মোট মামলা এসেছে ২৮১টি, নিষ্পত্তি ২৪৪টি, ফেরত ৩৬টি।

আইন সংশোধনের পরামর্শ

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, প্রথমদিকে ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারকাজ ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থগিতাদেশ ও দীর্ঘসূত্রতায় গতি থেমে গেছে। আইন সংশোধন করে মামলার বিচার কার্যক্রম স্থবির না হয়সেটি নিশ্চিত করতে হবে।