
বারের ওয়েটার থেকে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন তামান্না শারমিন। চট্টগ্রামের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাবল মার্ডারসহ ছয় খুনের আসামি সাজ্জাদ হোসেন (ছোট সাজ্জাদ) চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, হাটহাজারীসহ চট্টগ্রাম নগরবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম। পোশাক কারখানা থেকে ঝুট কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে অনুসারীদের দিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে খুনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ৫৫ দিন আগে ছোট সাজ্জাদকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিন। স্বামীকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে জেল থেকে বের করার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসা তামান্নাকে অবশেষে গত শনিবার রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তদন্তে নতুন নতুন তথ্য বের করে আনছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মদের বারের ওয়েটার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন তামান্না শারমিন। তামান্না ছিলেন চট্টগ্রাম নগরের একটি মদের বারের ওয়েটার। বারে পরিচয় হয়েছিল চট্টগ্রাম কারাগারে খুন হওয়া আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরির সঙ্গে। অমিতের সঙ্গে সখ্য তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। অমিতের সহযোগিতায় তামান্না বহু সন্ত্রাসীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০১৭ সালে অমিত মুহুরি গ্রেপ্তার হলে মদের বারে চাকরি নিয়ে দুবাই চলে যান তামান্না। পরে আবার চট্টগ্রামে ফেরেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের একজন উপকমিশনার কালের কণ্ঠকে জানান, স্বামী শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ যেমন, তাঁর স্ত্রী তামান্নাও ঠিক তেমনি চটপটে। গত ১৮ মার্চ স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাজ্জাদের অপরাধ সাম্রাজ্য সামলাচ্ছিলেন তামান্না। পুলিশ তামান্নার অপরাধপ্রবণতা, অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ে কাজ করছে।ব্যক্তিজীবন নিয়ে খুব বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করেনি পুলিশ। তাঁর চারটি বিয়ে হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এমইএস কলেজে পড়াশোনা করেছেন তামান্না। গত ১৫ মার্চ ঢাকা থেকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদের ২৫-২৬ জন স্ত্রী রয়েছেন। তাঁর স্ত্রীরাও অপরাধের সহযোগী।
স্ত্রী স্বামী সাজ্জাদের অপকর্মের সহযোগী—এই বক্তব্যের সত্যতা মেলে তামান্নার একাধিক ফেসবুক লাইভ থেকে। স্বামীকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে ১০-১২ দিনের মধ্যে জেল থেকে বের কারার ঘোষণা দিয়েছিলেন তামান্না। ওই সময় তিনি ফেসবুক লাইভে এসে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা যাঁরা ভাবতেছেন আমার জামাই গ্রেপ্তার হয়েছে, আর কোনো দিন বের হবে না। তাঁদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি বান্ডেল বান্ডেল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব।’ জানা গেছে, পুলিশ দীর্ঘদিন অনুসরণ করে গত শনিবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বারইপাড়ার একটি বাসা থেকে তামান্নাকে আটক করে। চট্টগ্রামের বাকিলা থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তামান্নাকে বহদ্দারহাট থেকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে ডাবল মার্ডারের মামলায় শুনানির জন্য সময় দিয়েছেন আদালত। এই আদেশটি রবিবার পেয়েছি। তবে বিশেষ ক্ষমতা আইনের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে তামান্নার বিরুদ্ধে এক মাসের ডিটেনশন দেওয়া আছে বায়েজিদ থানায়। সেই আলোকে তাঁকে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
তামান্নার ৯ ও ১০ মের ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটি কালো গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও আপলোড করেন। ৯ মে আপলোড করা ভিডিওতে কক্সবাজার লিখলেও মূলত সেটি ছিল চট্টগ্রাম নগরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এলাকার। এরপর ১০ মে তিনি আরো একাধিক ভিডিও আপলোড করেন। সেটা দেখে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের পার্কিং, বিমানবন্দরসংলগ্ন সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন ব্রিজ চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। নগরীর বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সেই গাড়ির অবস্থান নিশ্চিত করে পুলিশ। পরে নগরের চান্দগাঁও থানার বারইপাড়ার অবস্থান নির্ণয় করা ভবনটিতে মহিলা পুলিশের একাধিক সদস্য নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে তামান্নাকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের আগে থ্রিপিসের সঙ্গে তামান্নাকে লাল ওড়না পরা অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি পুলিশের কাছ থেকে জামা পরিবর্তনের সময় চেয়ে নিয়ে দামি জামাকাপড় পরে একেবারেই স্বাভাবিকভাবে বের হন। গ্রেপ্তারের পর এক ভিডিওতে তামান্নাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি ব্লগার। আমার পাঁচ লাখ অনুসারী আছে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের পর তাঁর সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল স্ত্রী তামান্নার হাতে। সাজ্জাদ কারাগারে থাকা অবস্থায় ডাবল মার্ডার মামলার আসামি ও চাঁদাবাজির একটি মামলার আসামি হন। তাঁর অনেক সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মামলার তদন্তে কারো নাম এলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।