
পূর্বাচল নতুন শহর সচল করতে বিভিন্ন সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) উদ্যোগ নিলেও কার্যত সেভাবে সচল হয়ে ওঠেনি। এবার আগামী জুনের মধ্যে রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত করতে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে রাজউক।
একই সঙ্গে এই নতুন শহরের নাগরিক সেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, পূর্বাচলকে সচল করতে রাজউকের প্রস্তাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে আসা। দ্বিতীয় প্রস্তাবে পূর্বাচলকে আলাদা একটি সিটি করপোরেশন করা অথবা আলাদা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পূর্বাচল শুরুতে উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় নেওয়ার বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরে আশপাশের কিছু আবাসিক এলাকা নিয়ে আলাদা সিটি করপোরেশন হতে পারে। শুরুতেই নতুন সিটি করপোরেশন করলে সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
এই বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উত্তর সিটির সীমানায় পূর্বাচলকে আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি আমরা। কারণ মানুষ বসবাস শুরু করলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সে বিষয়টি মাথায় রেখে এটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজউকের পক্ষ থেকে আমাদের পূর্বাচলের লেকগুলোর পাশে গাছ লাগানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো প্রকল্পের অধীনে না হয়ে প্রাইভেট কোনো পার্টনারের মাধ্যমে করা হবে। পুরো পূর্বাচলে সব ওয়াটার বডিতে গাছ লাগানো হবে।’
পূর্বাচল শহর ডিএনসিসির আওতায় আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই রকম একটি প্রস্তাব রয়েছে। তবে সেটার জন্য পূর্বাচল আগে সচল হতে হবে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে পূর্বাচল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের সীমানায় পড়েছে। তাই সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে আগে মন্ত্রণালয় হয়তো সিদ্ধান্ত নেবে।’
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে পূর্বাচল নতুন শহরের প্রতিটি প্লটের সঙ্গে সংযোগ সড়ক শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তা, নতুন ও ভাঙা ড্রেনেজ পরিষ্কার এবং সংস্কার করা, দুটি কাঁচাবাজারের কাজ এবং চারটি উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ শেষ করা হবে। স্কুলগুলোর মধ্যে ১ নম্বর সেক্টরে ইউসূফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৩ নম্বর সেক্টরে প্রগতি হাই স্কুল, ৪ নম্বর সেক্টরে জনতা হাই স্কুল এবং ৩০ নম্বর সেক্টরে পলক স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ শেষের দিকে। এ ছাড়া ৩০ নম্বর সেক্টরে একটি আধুনিক কবরস্থানের কাজ শেষ পর্যায়ে। ১০টি মসজিদের ডিজাইনের কাজও এই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। অনুমোদন সাপেক্ষে মসজিদগুলোর কাজ শুরু হবে আগামী বছর। একটা মন্দির, একটা প্যাগোডা ও বৌদ্ধ মন্দিরের কাজও করা হবে।
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট আয়তন ৬২২৭.৩৬ একর। ঢাকার খিলক্ষেত, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জমি নিয়ে প্রকল্পটি গড়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণির (আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক, অন্যান্য) ও আয়তনের মোট ২৯ হাজার ৭৭৬টি প্লট আছে। প্রকল্পে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নগর সেবাকেন্দ্রিক প্লট আছে দুই হাজারের বেশি। প্রকল্প এলাকায় ৩৬৫ কিলোমিটার সড়ক, ৫২টি সেতু, ৪৩ কিলোমিটার লেক তৈরি, শীতলক্ষ্যা নদী ও বালু নদের তীর সংরক্ষণ, পুরো এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ নানা কাজ করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) এবং পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জুনের মধ্যে পূর্বাচলে সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এরই মধ্যে বিদ্যুতের শতভাগ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৫টি সেক্টরে পানির শতভাগ ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এরই মধ্যে তিনটি সেক্টরে পানির শতভাগ ব্যবস্থা করা হয়েছে। চারটি ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে রাজউক এই ব্যবস্থা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্লট মালিকদের অনুরোধ করছি আপনারা বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালসহ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ পাওয়া প্লটগুলোতে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করে চালু করুন। কারণ আমরা সব নাগরিক সুবিধা দিলেও শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে।’