
শেয়ারবাজারে অস্থিরতা কোনোভাবেই থামছে না। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে দেশের শেয়ারবাজারের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও যুদ্ধের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। এতে একদিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমে যায় প্রায় দেড় শ পয়েন্ট। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হলেও আস্থা ফেরাতে পারেনি। বরং উল্টো প্রতিদিন শেয়ার সূচক কমেছে। এতে গত আট মাসে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সূচক কমেছে এক হাজার পয়েন্টের।
বাজার পরিস্থিতির উন্নতি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে গত কয়েকদিন ধরে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার মতিঝিলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করে। কাফন মিছিল করে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবি জানায়। এর আগেও একাধিকবার তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বাজারে ধারাবাহিক পতনের জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অযোগ্যতা ও শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞান শূন্যতাকে দায়ী করে আসছেন বিনিয়োগকারীরা।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান করে নতুন কমিশন গঠন করা হয়। এই পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে শেয়ারবাজারে ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করা হলেও তা হয়নি। উল্টো নতুন কমিশনের নিয়োগের দিন থেকে গত ৮ মে পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ২ পয়েন্ট। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার দিন লেনদেনের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৯০৪ পয়েন্ট। যে সূচকটি সর্বশেষ ৮ মে বৃহস্পতিবার ১ হাজার ২ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯০২ পয়েন্টে এসেছে। অর্থাৎ নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সূচকটি কমেছে ১৭ শতাংশ। গত আট মাসে বাজার মূলধন অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা মোট শেয়ারে মূল্য কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বছরের ১৮ আগস্ট বাজার মূলধন বা সব সিকিউরিটিজের দাম ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। যা ৮ মে নেমে এসেছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকায়। এই সরল হিসাবে বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের দাম কমেছে ৫৬ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে আরও অনেক বেশি। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫টি ট্রেজারি বন্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। যেগুলোর দর বাজার মূলধনে যোগ হয়েছে। এখন ওই সব ট্রেজারি বন্ড যদি বাজার মূলধন থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে অনেক বেশি। এগুলো বাদ দিলে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ১ লাখ ৮ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা (ব্রোকার) শেষ হয়ে গেছি। টানা লোকসানে অস্তিত্ব না থাকার মতো অবস্থা। এরই মধ্যে অনেক ব্রোকার হাউসে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। তবে সব কর্মী ছাঁটাই করেও টিকে থাকা যাবে না, যদি বিদ্যমান মন্দা চলতে থাকে। বাজারে কোনো প্রকার ইতিবাচক কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে বলে কর্তৃপক্ষের আচরণে বোঝা যাচ্ছে না।