Image description

একসময় সিলেটের ভোলাগঞ্জ কোয়ারি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ। তাকে অনেকেই ‘পাথর’ শামীম হিসেবে আখ্যায়িত করেন। টানা ১৫ বছর কোম্পানীগঞ্জে নানা অঘটনের পর এবার শামীম ব্যাকফুটে। মামলায় জর্জরিত। চলে গেছেন আত্মগোপনে। এখন ভোলাগঞ্জে নতুন নাম রুবেল আহমদ বাহার। সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক। তার নেতৃত্বেই গত ৮ মাসে ভোলাগঞ্জে হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। এখন ভোলাগঞ্জ জুড়ে একটি নাম, সেটি হচ্ছে বাহার। তার এই অপকর্মে বিব্রত স্থানীয় বিএনপি নেতারা। প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় গতকাল সিলেটের পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বাহার, তার সহযোগী তানভীর আহমদ গিয়াস ও কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি নেতা শওকত আলী বাবুলকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেটি সম্পর্কে ভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছে বাহার ও বাবুল। গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগে যারা দস্তখত করেছেন তারা অনেকেই বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মী। এর মধ্যে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি এলাইছ মিয়া। ভোলাগঞ্জ কোয়ারির এক পাশে আছে সাদাপাথর পর্যটন স্পট ও অন্যপাশে বাঙ্কার। দু’টি এলাকাকেই বলা হয় সংরক্ষিত। কিন্তু এ দু’টি এলাকা থেকে এবার সবচেয়ে বেশি পাথর লুট করা হয়েছে। অভিযোগকারী লোকজনের মতে, কয়েক হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। এর নেতৃত্বে রয়েছে বাহার ও রজন। শেল্টার রয়েছে বাবুলের। তাদের বাহিনী কোয়ারিতে পুলিশের নামে চাঁদাবাজি করে। দিনে অর্ধকোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। গতকাল দেয়া অভিযোগে তারা বলেন, রুবেল আহমদ বাহার টাকার বিনিময়ে যুবদলের পদ নিয়ে বিএনপি’র দলীয় লোক পরিচয়ে কোয়ারিতে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বাহার ও তার লোকজন কালীবাড়ী গ্রামের বিধবা সালাতুন নেছার প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তি জবরদখল করে জোরপূর্বক পাথর লুট করে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ ও একসময়ের রঞ্জিত গ্রুপের ক্যাডার বর্তমান এসআই তন্ময় দাসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই মহিলার জমি থেকে পাথর লুট করছে। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি করে আসছে। এ ঘটনায় মহিলা সালাতুন নেছা ১৬ই এপ্রিল সিলেটের  জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। অভিযোগে তারা জানান- রুবেল আহমদ এক সময় অস্ত্রের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার নাম এলাকায় ‘পিস্তল বাহার’ হিসেবে পরিচিত। অস্ত্র মামলায় তার দুই ভাই কারাবরণ করেছে। এছাড়া মোস্তাকিম আহমদ ফরহাদ মদ, চিনি সহ নানা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চোরাই পথে উতমার লাইনের ব্যবসায় মোস্তাকিম আধিপত্য বিস্তার করে। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়; ভোলাগঞ্জের রূপওয়ের বাংকার ও শারপিন টিলা এবং ধলাই ব্রিজের নিচ থেকে প্রতিদিন বালু-পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করছে বাহার ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি’র প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। এসব সিন্ডিকেট অতীতে ইউএনও ও সহকারী কমিশনার ভূমি যখন অভিযানে গেছেন তাদের উপর হামলার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ তদন্তে পাওয়া যাবে। এজন্য ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, শারপিন টিলা, ধলাই সেতু সহ গোটা কোয়ারি এলাকার বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না বলে দাবি করেন তারা।

স্মারকলিপিতে তারা বাহার ও  কোম্পানীগঞ্জের ওসি’র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানান। এদিকে সালাতুননেছা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পত্তিতে গত ৮ই এপ্রিল পাথর তুলতে যায় বাহারের লোকজন। এ সময় তার দুই ছেলে বাধা প্রদান করেছিল। ওই সময় বাহার সিন্ডিকেট তাদের পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনার পর রাতে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসতে চাইছে পথিমধ্যে তাদের ওপর বাহারের নেতৃত্বে ফের হামলা করা হয়। এ সময় হামলা থেকে বাঁচাতে পুলিশ এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ওসি উজায়েরের নির্দেশে ও বাহারের ইন্ধনে তার গুরুতর আহত দুই ছেলেকে রাতে একটি মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করে। তিনি বলেন- ওসি প্রত্যক্ষ শেল্টার নিয়ে বাহার ও তার সিন্ডিকেট কোম্পানীগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এদিকে- কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি নেতারাও বাহারকে নিয়ে বিব্রত। ওসি’র শেল্টারে অপকর্ম করে দলকে বিতর্কিত করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। দরখাস্তকারী কোম্পানীগঞ্জ শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি এলাইছ মিয়া জানিয়েছেন- বাহারকে দলীয়ভাবে শেল্টার দেন বাবুল। তার মাধ্যমে টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। এর বাইরে বাহারের স্বজন আওয়ামী লীগের নেতারা দাপটের সঙ্গে কোয়ারি থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করছে। অথচ লুটের সকল দায় বিএনপি’র উপর দেয়া হচ্ছে। যা কোনোভাবেই ঠিক নয়। এ কারনে দুর্র্নাম ঘুচাতে আমরা ন্যায় বিচারের জন্য লড়াইয়ে নেমেছি। কোম্পানীগঞ্জে পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন যুবদল নেতা বাহার। তিনি বলেছেন- সালাতুন নেছা ভুমি দখলে তিনি জড়িত নয়। তারা নিজেরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তার উপর দোষ দিচ্ছে। পাথর ও বালু লুটে  কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি’র সম্পৃক্ততাও নেই বলেও দাবি করেন। তবে ভোলাগঞ্জে দুলা মেম্বার ও তার দুই ছেলে লুটপাট করছে বলে জানান- তিনি। বিএনপি নেতা শওকত আলী বাবুল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তার পিতা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন। কোম্পানীগঞ্জে তার পরিবারের ঐতিহ্য রয়েছে। একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে তাকে বিতর্কিত করতে পাথর লুটে তার নাম জড়াচ্ছে। তিনি বৈধ, অবৈধ কোনো পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয় বলেও দাবি করেন।