Image description
 

লোকসানের বোঝা বহন করা সত্ত্বেও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) অর্গানোগ্রাম সংশোধনের মাধ্যমে নতুন করে ৪৩৫টি পদ সৃষ্টি করে জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে অন্তত ১০০ জন কর্মকর্তা থাকবেন প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে।

ডেসকো সূত্রে জানা গেছে, আগামী মঙ্গলবার (৬ মে) বোর্ড সভায় এই সংশোধিত অর্গানোগ্রাম উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতির ফলে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে ডেসকোর আগে থেকেই প্রাপ্ত ৫৪১ কোটি টাকার নিট লোকসানের ওপর।

একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেছেন, নতুন অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী বিশেষভাবে লাভবান হবেন। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা ৭৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত না করেই এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বঞ্চনার অভিযোগ ও অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে অন্তত ৬ জন প্রধান প্রকৌশলী, ২৫ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ১২ জন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ প্রায় দেড় শতাধিক নতুন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

তাদের বক্তব্য, একজন সহকারী প্রকৌশলী সাত বছরের মধ্যে উপবিভাগীয় এবং আরও চার বছরে নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও অনেকে ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই পদে চাকরি করছেন।

তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, অতীতে যেভাবে নির্ধারিত যোগ্যতা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, এবারও তেমনটি ঘটলে ডেসকোর আর্থিক অবস্থা আরও সংকটে পড়বে।

সিন্ডিকেট ও পক্ষপাতের অভিযোগ

ডেসকোর অর্গানোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ ও পদের বণ্টনে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর একচেটিয়া দখলদারিত্ব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের একজন উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠতা ও মদদে পরিচালিত এই গোষ্ঠী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে পছন্দের লোকদের পদোন্নতি ও নিয়োগ দিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে পেশাদারিত্ব ও ন্যায্যতার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।

অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্ভাবনা

বর্তমানে ডেসকোতে প্রায় ২২০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। নতুন ৪৩৫ জন জনবল যুক্ত হলে, শুধু বেতন-ভাতা নয়, বরাদ্দ দিতে হবে ব্যক্তিগত গাড়ি, জ্বালানি, চালক, অফিস সুবিধা ও অন্যান্য ভাতা। বর্তমানে একজন কর্মচারীর সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ৩৫ হাজার টাকা এবং একজন প্রধান প্রকৌশলীর মাসিক বেতন প্রায় ২ লাখ টাকা।

পদোন্নতি ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কর্তা ব্যক্তিদের অবস্থান

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রশাসনিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েক বছরে ডেসকোর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগী ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়াতেও ঘুষ লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগ আছে।