
বিভাগের দশটি কলেজ ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক গত সাড়ে আট মাস ধরে বিনানোটিশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। এদেরমধ্যে দশটি কলেজের ৩৭ জন এবং ১৩টি স্কুলের ১৮ জন শিক্ষক রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাপটের সাথে রাজনীতির প্রভাব বিস্তার করায় জনরোষের ভয়ে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে আসছেন না।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্নস্থানে মব জাস্টিসের নামে শিক্ষকরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এই অনুপস্থিতি তারই প্রতিফলন। তারা এ অবস্থার অবসান চেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা পাড়ের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত শেখ হাসিনা সরকারি কলেজের ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই ৫ আগস্টের পর থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। তারা সবাই ওই এলাকার সাবেক এমপি পঙ্কজ নাথের ঘনিষ্ঠ অনুসারী।
এ ব্যাপারে ওই কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যে প্রতিষ্ঠানে আপনি চাকরি করবেন সেখানে লাগাতার অনুপস্থিতি কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনুপস্থিত কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে বরিশালের তিনটি কলেজের ২২ জন ও পাঁচটি স্কুলের পাঁচজন। ভোলার চারটি কলেজের ছয়জন ও একটি স্কুলের তিনজন। পটুয়াখালীর দুইটি কলেজের আটজন ও আটটি স্কুলের আটজন। পিরোজপুরের একটি কলেজের একজন। বরগুনার একটি স্কুলের দুইজন শিক্ষক রয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে এরা গা ঢাকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেও এদের অধিকাংশরাই নিয়মিত বেতনভাতা তুলে নিচ্ছেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক মোহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, বেসরকারি শিক্ষকরা যে কতো নির্যাতিত তা কেবল তারাই জানেন। গভর্নিং ও ম্যানেজিং কমিটি গঠণ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চক্ষুশূল হতে হয় শিক্ষকদের। বিগত ৫ আগস্টের পর বরিশাল অঞ্চলে এ যন্ত্রণা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে অনেক কথা বলেছি। মব জাস্টিসের নামে অবৈধভাবে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে আসতে দেওয়া হচ্ছেনা। রীতিমতো চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এ জন্যই শিক্ষকরা গা ঢাকা দিয়েছেন। শিক্ষকদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম বিঘ্নিত করছে। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষকরা অনুপস্থিত থেকে বেতন তুলছেন এটা চরম অনিয়ম। যদি এমন হয় তবে তদন্ত করে অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, কিছু শিক্ষক যারা অতীতে এমন কিছু কর্মকান্ড করেছেন যার ফলে তারা নিজেরাই নৈতিক মনোবল হারিয়েছেন। তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষোভের শিকার হতে পারেন। সেজন্যই গত ৫ আগস্ট থেকে তারা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বরিশাল অঞ্চলের দশটি কলেজের ৩৭ জন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। তাদের একাধিকবার বলার পরেও প্রতিষ্ঠানে আসছেন না। কিন্তু নীতিমালার সুযোগে তারা বেতনভাতা গ্রহণ করছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী নির্দিষ্ট করে না দেওয়ায় কোনো তদন্ত হয়নি। তদন্ত হলেই অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।