Image description

রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিজি হাসপাতাল) নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসক হাসানুল হক নিপুন। শাহবাগ থানায় দায়ের করা প্রশ্নবিদ্ধ একটি মামলার তিনি আসামি। মুন্সীগঞ্জের ইসমাইল হোসেন মামলাটির বাদী। এজাহারে বাদী কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করেছেন। তবে ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৫৫ দিন কারাবাস করেন নিরপরাধ এই চিকিৎসক। 

চিকিৎসক নিপুনের দাবি, মিথ্যা অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে হামলা ও ভাঙচুরের মামলা করা হয়। পরে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সময় এবং মামলার এজাহারের বর্ণনা সম্পূর্ণ ভুয়া।

কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনায় করা এ ধরনের অন্তত ৩৫টি মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হয়রানিমূলক এসব মামলায় কাকে আসামি করা হবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে ভূমিকা রেখেছেন একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে এই মামলাগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, কোনো কোনো দলের নেতাকর্মী এবং একটি দালাল সিন্ডিকেট দেশজুড়ে বিপুল মামলা বাণিজ্য শুরু করেছে। মামলাপ্রতি এরা লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে। আবার কোথাও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে, ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব মামলা করা হচ্ছে।

এসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী দেশে বেশির ভাগ হত্যা মামলা তদন্তে তাঁদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে যেটি অপরিহার্যনিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটি এখনো করা হয়নি। এ ছাড়া হত্যা মামলা করার ক্ষেত্রে এজাহারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। আসামিদের নামের পাশে হুকুমদাতা বা নির্দেশদাতা উল্লেখ করা হচ্ছে।

আবার যাদের গুলি করে হত্যার কথা বলা হচ্ছে, নির্দিষ্ট করে এজাহারে বলা নেই কে তাদের গুলি করে হত্যা করেছে। আইনগত অনেক ফাঁকফোকর থাকায় তদন্তে অনেক সময় লাগছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হত্যা মামলা করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হয়। এ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, তাতে বেশির ভাগ আসামির ক্ষেত্রে হুকুমদাতা ও নির্দেশদাতা উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এ ধরনের মামলা টেকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মামলায় বাদী আসামিকে চেনেন না। অথচ এ ধরনের মামলায় জেল খাটছেন অনেক নিরীহ মানুষ। কেউ সাময়িক জামিন নিয়ে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন, হয়রানিমূলক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। আবার মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের চিনলেও অজ্ঞাতপরিচয় আসামির তালিকায় থাকা ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে তাঁকে চিনছেন না বাদী। এসব মামলায় পুলিশ যাকেই ধরছে, তাকেই থানায় নিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেককে মিথ্যা মামলায় কোর্টে চালান দেওয়া হচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়া লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হত্যাসহ অন্যান্য মামলার খোঁজ নিতে গিয়ে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দায়ের করা এসব মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে নাম থাকা আসামিরা বিপুলভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিরপরাধ মানুষ এসব মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার প্রতিপক্ষকে মামলার ভয় দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা আদায় করেও ফের ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে মামলাকেন্দ্রিক অস্বাভাবিক এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশে। আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এসব মামলার বিরুদ্ধে কথা বলার পরও থামছে না হয়রানিমূলক মামলা দায়ের।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৫০০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৬০০টি। এসব মামলায় ১০  হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একেক মামলায় একেক শ্রেণির ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। কোথাও অভিনেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী, কোথাও ব্যবসায়ী, কোথাও সাংবাদিক, কোথাও আবার পুলিশ, কোথাও বা আমলা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে মারা যান ঢাকার ধামরাইয়ের বনেরচর গ্রামের মনোয়ার হোসেন। কিন্তু তাঁর বোন জেসমিন সুলতানা ওরফে আসমা আক্তার তাঁর ভাইকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যা করা হয়েছে দাবি করে চারজন পুলিশ সদস্য ও কয়েকজন ইটভাটার মালিকসহ ধনাঢ্য ৫২ জনের নামে ধামরাই আমলি আদালতে মামলা করেন। মামলা নম্বর ৬১৫/২৪। আদালতের নির্দেশে গত বছর ২১ অক্টোবর ধামরাই থানা পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে। মামলায় বাদীর সাবেক স্বামীসহ সাত স্বজনকেও আসামি করা হয়। এর আগে ২৯ আগস্ট ৫০ জনের নামে তিনি আরো একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ৫১৯/২৪। মামলার বাদীকে ২০০ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা করেন আদালত। বাদীর আনা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা না থাকা প্রতীয়মান হওয়ায় আদালত ২০৩ ধারায় মামলাটি খারিজ করে দেন।

মনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে করা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মামলাটি ভুয়া মনে হওয়ায় কোনো আসামিকেই এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি।

মামলায় অজ্ঞাত আসামির ফাঁদ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানায় দায়ের করা আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ মামলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট মামলাটি করেন দর্শনা থানা এলাকার পরানপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম। মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে দর্শনা পৌরসভার পরানপুর গ্রামে রবিউল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে আসামিরা বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ, বোমা-ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।

এই মামলায় ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ৮০ থেকে ৯০ জনকে। অভিযোগ রয়েছে, এজাহারনামীয় ৬৯ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন অরাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মামলার এক আসামি  কালের কণ্ঠকে জানান, মামলা থেকে নাম বাদ দিতে তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। বিষয়টি গুরুত্ব দেননি তিনি। পরে দেখেন এজাহারে তাঁর নাম। মামলাটি নিয়ে এখন তিনি বিপাকে আছেন। আবার মামলায় ভুলবশত আসামি হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম চলে আসায় তাঁদের নাম প্রত্যাহারে আদালতে লিখিত আবেদন করেছেন বাদী। এভাবে পাঁচ আসামিকে জামিন করা হয়েছে।

বাদী রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, এই মামলায় কখন কাকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে তা তিনি নিজেও জানেন না। এজাহারনামীয় তেমন কাউকে গ্রেপ্তার করা না হলেও অজ্ঞাতপরিচয় আসামি দেখিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে মামলায় চালান দেওয়া হচ্ছে।

দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর বলেন, এই মামলায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিও আছে। আমরা যাচাই-বাছাই করেই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছি।

রানার আর সৌদি আরব যাওয়া হয়নি

আর্থিক সচ্ছলতার আশায় এনজিও থেকে প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধের চুক্তিতে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার দলিল লেখকের সহকারী ইমরান তৌহিদ রানা। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে সৌদি আরব যেতে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টেশনে ঈদগাঁও থানা পুলিশের হাতে আটক হন তিনি।  কালের কণ্ঠকে রানা বলেন, পুলিশ থানার নথিতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য না পেয়ে ছেড়ে দিতে নগদ এক লাখ টাকা দাবি করে। মামলা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকা দুটি গরু ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। ঈদগাঁও থানার ওসি মশিয়ুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়দানকারী থানার কনস্টেবল রব্বানীর সঙ্গে দরদাম করে ৭০ হাজার টাকা তুলে দেন। কথা ছিল পরদিন সকালে তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তা না করে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের কাছে। সদর মডেল থানা পুলিশ ৪ ও ৫ আগস্টের সহিংস ঘটনাসহ জেলা বিএনপি অফিসে আগুন লাগানোর মামলার আসামি করে রানাকে আদালতে চালান দেয়। ফলে রানার আর সৌদি আরব যাওয়া হয়নি।

গত ১৯ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান রানা। কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, কোনো মামলার আসামি না হয়েও আমি আসামি। ঘরের দুটি গরু হারালাম। এখন এনজিওর মাসিক কিস্তির সময় এলে চোখে সরষে ফুল দেখি। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকেও মামলার আসামি

ঝিনাইদহ জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য প্রশিক্ষক শোভন সাহা সবুজ। গত ১৬ জুলাই সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একাডেমিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন। তবে ওই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে। শোভন সাহা কালের কণ্ঠকে জানান, জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ ছিল। তারা কৌশলে সমন্বয়কদের মাধ্যমে তাঁকে এ মামলায় জড়িয়েছে।

এ ছাড়া সদর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ষাটোর্ধ্ব লিয়াকত হোসেন। গত ১৪ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। তাঁকেও করা হয়েছে ওই মামলার আসামি।

নরসিংদীতে মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল করিমপুরে ফরেজ আলী ওরফে ফয়েজ (৪৩) নামে এক শ্রমিক কর্মস্থলে (ডকইয়ার্ডে) বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য দাবি করেন। তিনি মারা যাওয়ার দুই মাস পর সেলিম মিয়া নামের একজন বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১৭৬ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে ফরেজ আলীর নাম গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকায় ওঠানো হয়। এই মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলে তা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শহীদদের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী। 

পত্রিকার সম্পাদক-ব্যবসায়ীকে আসামি!

রাউজানে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডের শিকার যুবদলকর্মী মো. ইব্রাহিম হত্যা মামলায় রহস্যজনকভাবে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও একজন ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়েছে।  মামলার এজাহারে ৮ নম্বর আসামি করা হয় চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রিয় সময় পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল্লাহ রনিকে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে হত্যা মামলায় নিরপরাধ লোকজনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহার থেকে নাম বাদ দিতে ৫ কোটি টাকা দাবি

আমির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, আমি একজন প্রবাসী। গত বছর ২৭ আগস্ট দেশে ফিরে জানতে পারি আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এর সঙ্গে সংঘবদ্ধ একটি চক্র জড়িত। এক পর্যায়ে তারা এজাহার থেকে আমার নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করে। এ কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বুঝতে পারি আমি মামলা বাণিজ্য চক্রের ফাঁদে পড়েছি। 

বাদী চেনেন না আসামিকে, আসামি চেনেন না বাদীকে

পুলিশের তদন্তেও উঠে এসেছে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ঘটনায় দেশজুড়ে এ পর্যন্ত হওয়া ঢালাও মামলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনা সম্পর্কে আসামিদের বেশির ভাগই কিছু জানে না। বাদী চেনেন না আসামিকে, আসামিরাও চেনেন না বাদীকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাদী নিজেও ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না।

পুলিশ বলছে, বেশির ভাগ মামলার এজাহারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০০ থেকে ৪০০ জনের বেশি আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে কয়েক শ জনকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলায় বাদী ইচ্ছা করে অনেক আসামি করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। যেসব বাদী মামলা বাণিজ্য করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হবে। মামলা অপকর্মে জড়িত থাকলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মামলা বাণিজ্য

সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি থানায় পুলিশের পাশাপাশি অন্যদেরও মামলা বাণিজ্যে জড়িত হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর থানায় খোঁজ নিয়ে এমন চারটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মামলাগুলো হলো৫২১/২৪, ১৮(৯/২০২৪), ১৪(৮/২-২৪) ও ২৪(৮/২০২৪)। এ ছাড়া মিরপুর মডেল থানায় ২৫/৩৬১ এবং শাহআলী থানায় ৫৩৫/২০২৪ নম্বর মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় হত্যার অভিযোগে মূল আসামিদের পাশাপাশি নিরীহ লোকদেরও জড়িয়ে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অব্যাহতি

মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন মিরপুরের ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমি ব্যবসার কাজে বেশির ভাগ সময় নারায়ণগঞ্জ থাকি। হঠাৎ একদিন জানতে পারি, আমার নামে মামলা হয়েছে। এরপর মামলার বাদী বিপ্লব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মামলায় আমার নাম থাকা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। ইউসুফ ভুঁইয়া নামের একজন টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এজাহারে কিছু নাম যোগ করেছে। এরপর ইউসুফকে ফোন করলে তিনি মামলা থেকে নাম কেটে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে শর্ত জুড়ে দেন। ইউসুফ ভুঁইয়া মামলা থেকে নাম বাদ দিতে প্রথমে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, নাম কেটে দেওয়ার নামে অর্থ আদায়ের সঙ্গুে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কিছু সদস্যও জড়িত। মামলা থেকে নাম কেটে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। যিনি অর্থ দিতে পারছেন, আদালতে হলফনামার মাধ্যমে তাঁর নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে।

অপু বিশ্বাস-নুসরাত ফারিয়া-ভাবনাসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা

সম্প্রতি ঢাকাই চলচ্চিত্রের চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আসনা হাবিব ভাবনা, চিত্রনায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানী ঢাকার ভাটারা থানাধীন এলাকায় হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে এসব অভিনয়শিল্পীকে।