Image description

দেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মেজবাউল হক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত না করে গোপনে বিদেশি দুটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুরক্ষিত আইটি রুমে নিয়ে আলামত নষ্ট করান তিনি। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি। ইতোমধ্যে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তবুও তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি বিভাগ, ব্যাংক সুপারভিশন ও মানবসম্পদসহ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পেয়েই তার পছন্দের কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্টে বসাতে শুরু করেছেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক ইডিদের নতুন দায়িত্ব বণ্টন করেছে। এতে দেখা যায়, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ ও ২, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি), ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন (ডস), সচিব বিভাগ এবং ইইএফ ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেজবাউল হককে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে কখনোই হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ ও ২, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ও ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন তিনটি বিভাগ একজন ইডিকে দেওয়া হয়নি। কারণ, বিআরপিডি পলিসি তৈরি করে। এই পলিসির ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কি-না, তা দেখে ডস। এখন কোনো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে দুই বিভাগের সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হবে- এটা সাংঘর্ষিক।

তারা আরো বলেন, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব এতদিন তার কাছে (মেজবাউল হক) ছিল। তিনি নিজে কীভাবে এই পোর্টফোলিওতে তার কাছে ডসের মতো ডিপার্টমেন্ট থাকার পর বিআরপিডিরও দায়িত্ব নিলেন- এটা কোনোভাবে যুক্তিসংগত নয়। আর সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি গভর্নর কীভাবে তা অনুমোদন দিলেন। এছাড়া এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব তার কাছে থাকা ক্ষমতার অপব্যহারের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরীকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, ডস ও বিআরপিডি কখনোই একজনের কাছে থাকবে না। বাইরে থেকে দুজন ইডি এলে তখন পরিবর্তন করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দুষ্কৃতকারীদের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া দুঃখজনক। উল্লেখ্য, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেজবাউল হক পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার সময়ই নগদকে বেআইনি কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রোভাইডার হিসেবে ২০১৯ সালে ওই প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। এ সেবা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তখন একটি রেগুলেশন (প্রবিধান) ছিল। এতে বলা ছিল, এ সেবা দিতে হলে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত (অ্যাফিলিয়েটেড এনটিটি) থাকতে হবে। তবে নগদ তখন কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ২০১৮ সালের রেগুলেশন বাতিল করে ২০২২ সালে আরেকটি রেগুলেশন করা হয়। এতে বলা হয়, শুধু ব্যাংক নয়- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চলবে।

কিন্তু ২০২২ সালের আইন অনুযায়ী নগদ কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বলা হয়েছিল। কিন্তু রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নগদের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেখা যায়, এখানে ডাক বিভাগের এক শতাংশ শেয়ারও নেই। অথচ আইন বলছে, ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে, বোর্ডে নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নগদে প্রশাসক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাতিল হয়ে যায়। প্রশাসক দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করে থাকে। প্রাথমিকভাবে নগদের এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাচার ও ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি সংক্রান্ত অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।