Image description
২১ কর্মকর্তা বরখাস্ত

শৃঙ্খলাভঙ্গসহ চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।

কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল সংকটের কারণে এমনিতেই বিএসইসির কার্যক্রম অনেকটা ধীরগতিতে চলছে। এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে বলে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু পুঁজিবাজার বিষয়ে অনভিজ্ঞ সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে গতি ফিরে আসেনি বরং প্রতিনিয়তই পতন ঘটছে। আট মাস পার হয়ে গেলেও কোনো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, এমনকি তালিকাভুক্তির আবেদনও করেনি। সামগ্রিকভাবে বিএসইসির কার্যক্রমে গতি ফিরে আসেনি। এখন একযোগে ২১ জনকে বরখাস্ত করায় বিএসইসিতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে, এমন পরিস্থিতিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের দুটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশত্যাগ করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ৫ থেকে ৯ মে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য ৩১তম ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে এবং ১২ থেকে ১৫ মে কাতারের দোহায় আইএসকোর ৫০তম বার্ষিক সভায় অংশ নিতে মোট ১১ দিনের ছুটিতে রয়েছেন তিনি। শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতন ও কর্মকর্তাদের গণহারে বরখাস্তের পর তার ছুটির বিষয়টি নিয়েও বিভিন্ন সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

চার দফা দাবিতে গত ৫ মার্চ চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ কমিশনারদের অবরুদ্ধ করেন বিএসইসির কর্মকর্তারা। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন তারা। ওই ঘটনার জেরে কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন চেয়ারম্যানের গানম্যান আশিকুর রহমান। ওই মামলার ১৪ আসামিসহ ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কমিশন। গত বুধবার অফিসে আসার পর ২১ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্তের অফিস আদেশ হাতে পান। বৃহস্পতিবার মে দিবসসহ সাপ্তাহিক ছুটির কারণে গতকাল রোববারই ছিল বরখাস্ত-পরবর্তী প্রথম কার্যদিবস।

গতকাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, আমার ডিপার্টমেন্টের দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন কীভাবে কাজ চালিয়ে নেব? এখন একটি কাজ সম্পন্ন করতে আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি সময় লেগে যাবে। কর্মকর্তাদের বরখাস্তের বিষয়ে তিনি বলেন, বরখাস্ত হওয়াদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাদের সততা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তারা পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা গতকাল বিএসইসি কার্যালয়ে আসেন এবং নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) শফিউল আজমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অফিসে উপস্থিতির বিষয়ে করণীয় বিষয়টি লিখিতভাবে জানতে চেয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত সাময়িক বরখাস্ত করা হলে প্রধান কার্যালয়ে অ্যাটাচ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় এবং অফিসে আমাদের নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়টি জানতে চেয়ে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অভিযুক্তরা বলছেন, তারা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু কমিশন তাদের জবাবে কতটা সন্তুষ্ট হবে, তা নিয়ে তাদের সংশয়ের কথা জানিয়েছেন।