Image description

আজ ২৯ এপ্রিল, উপকূলবাসীর কাছে এক ভয়াল দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকায় চালায় ধ্বংসযজ্ঞ। রাতের অন্ধকারে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা। জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গিয়েছিল অনেক এলাকা। কেবল সরকারি হিসাবে এই ঝড়ে এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জনের মৃত্যুর কথা জানা যায়। চিরতরে ঘরবাড়ি হারা হয় হাজারও মানুষ।

ভয়াল সেই রাতে পরিবারের প্রায় সবাইকে হারান কক্সবাজারের মোহাম্মদ হোসেন (৫৫)। দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং চরপাড়া এলাকার হোসেন দুই ভাই-বোন ছাড়া পরিবারের অন্য সবাইকে হারান সে রাতে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাদের বাড়ি-ঘর।

jagonews24.com

কক্সবাজারের উত্তর গোমাতলীর রাজঘাট এলাকার জেটি ও বাঁধের বেহাল অবস্থা ৩৫ বছর আগের জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেয়/ ছবি- সায়ীদ আলমগীর

 

সেদিনের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মোহাম্মদ হোসেন। কক্সবাজার শহরে করা বাড়িতে বসে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ২৬ এপ্রিল থেকেই চলছিল ঝড়-বৃষ্টি। এরই মাঝে সংকেত কেবল বাড়ছিল। অভিজ্ঞতা না থাকায় বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু ২৯ এপ্রিলের জলোচ্ছ্বাস আমার রক্তের বন্ধনগুলো ভাসিয়ে নিয়েছে। প্রায় ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস বাবা-মা, ভাই-বোনদের হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেয়। তাদের মরদেহ পর্যন্ত দেখার সুযোগ হয়নি। ৩৫টি বছর কেটেছে প্রতিদিন তাদের মনে পড়ে, তবে ২৯ এপ্রিল এলেই হারানো স্বজনদের স্মৃতি বেশি নাড়া দেয়। কষ্ট ভুলতে এলাকা ছাড়লেও চারপাশে তাদের স্মৃতি লেপটে আছে।

শুধু মোহাম্মদ হোসেন নন, উপকূলের শত শত মানুষ তার মতো আপনজনদের হারিয়ে এখনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। ৩৫ বছর পেছনে ফেলে এসেছেন, কিন্তু হারানোর বেদনা তাদের কখনো নিস্তার দেয় না। উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ। এদিনে ভারাক্রান্ত মনে উপকূলবাসী তাদের হারানো স্বজনদের স্মরণ করছে।

জানা যায়, ১৯৯১ সালের এই দিনে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকা ধ্বংসযজ্ঞে তছনছ করেছিল। রাতের অন্ধকারে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই রুদ্ররোষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি উপকূলের মানুষ এর আগে কখনো হয়নি। ফলে ২৯ এপ্রিল এলে স্বজনহারা মানুষের কান্নায় এখনো ভারী হয় উপকূলের আকাশ-বাতাস।

  • jagonews24.com

    ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল আবহাওয়া বিভাগ উপকূলীয় এলাকায় ৯নং মহাবিপদ সংকেত জারি করেছিল। তবে লোকজন অন্যত্র সরে না যাওয়ায় মহা দুর্যোগের কবলে পড়েন তারা। রাত ১০টার পর ১০ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় সাগরের পানি ধেয়ে এসে লোকালয়ে প্রবেশ করে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ওই রাতে অনেক মা হারান সন্তানকে, স্বামী হারান স্ত্রীকে, ভাই হারান বোনকে। অনেক পরিবার আছে যাদের গোটা পরিবারই পানির স্রোতে হারিয়ে গেছে।

প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল উপকূলের ঘরে ঘরে মিলাদ মাহফিল, দোয়া মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ, আলোচনা সভা, র‌্যালিসহ বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালন করা হয়। কিন্তু এখনো অরক্ষিত দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। উপকূলীয় অঞ্চল কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর এবং টেকনাফের অনেক বেড়িবাঁধ এখনো ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এতে উপকূলের লাখো মানুষ এখনো ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।

 

jagonews24.com

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, উপকূল অঞ্চল মিলিয়ে জেলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। আগের সাইক্লোন শেল্টারে পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া শেল্টারের স্থলে নতুন করে স্থাপন হয়েছে। মানুষও এখন অনেক সচেতন। দুর্যোগের আভাস পেলে প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সময়মতো আশ্রয় কেন্দ্রে যান। ফলে আগের মতো ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।