Image description

হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার হজ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। সামর্থ্য থাকলে অযথা অবহেলা বা দেরি না করে দ্রুত হজ করে ফেলা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হেদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সুরা আলে ইমরান: ৯৬, ৯৭)

ফরজ হজ পালন করার পর যাদের সামর্থ্য আছে তারা নফল হজ ও ওমরাহ পালন করতে পারেন। নফল হজ ও ওমরাহ ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরা করতে থাক। কারণ এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। মাবরুর হজের (সব রকম গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র) প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (সুনানে নাসাঈ: ২৬৩১, সুনানে তিরমিজি: ৮১০)

এ বছর যে সৌভাগ্যবান বাংলাদেশিরা হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের অনেকে ইতোমধ্যে মক্কা ও মদিনায় পৌঁছে গেছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশি হজযাত্রী বহনকারী প্রথম বিমানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গিয়েছে। প্রথম ফ্লাইটে হজ পালনের জন্য ঢাকা ত্যাগ করেছেন ৩৯৮ জন। এ ছাড়া প্রথম দিনে মোট ১০টি ফ্লাইটে ৪ হাজার ১৮০ জন হজযাত্রী সৌদি যাবেন। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ধাপে ধাপে দেশ ছাড়বেন আরও প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক হজযাত্রী। 

হজযাত্রার প্রস্তুতিতে যে কাজগুলো করবেন: 

১. ওমরাহ ও হজের নিয়ম ও মাসায়েল জানুন

ওমরাহ ও হজের নিয়ম-কানুন ও করণীয় কাজগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন বই পড়ে বা আলেমদের আলোচনা শুনে। বিশেষ করে ৮-১৩ জিলহজ কী কী কাজ করতে হবে, ইহরাম বাঁধার পর কী কী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে তা ভালোভাবে জেনে নিন।

 

২. দোয়া মুখস্থ করুন বা দোয়ার বই সংগ্রহ করুন

ওমরাহ ও হজের সময় বিভিন্ন পর্যায়ে পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় দোয়াগুলো মুখস্থ করুন অথবা একটি ছোট দোয়ার বই সঙ্গে রাখুন।

৩. হজের সফরের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত করুন

পুরুষদের জন্য:

• দুটি এহরামের কাপড় (সেলাইবিহীন সাদা কাপড়)।

• দুই ফিতার স্যান্ডেল বা জুতা (যাতে পায়ের পাতা ও গোড়ালি খোলা থাকে)।

• সুগন্ধিমুক্ত সাবান, সুগন্ধিমুক্ত টুথপেস্ট, সুগন্ধিমুক্ত শ্যাম্পু ইত্যাদি।

• ছোট তোয়ালে ও প্রয়োজনীয় কাপড়।

• প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র (ডায়াবেটিস, প্রেসার, ঠান্ডা, ব্যথার ওষুধ ইত্যাদি)।

• হালকা ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক।

• ছাতা ও সানগ্লাস (রোদ থেকে বাঁচার জন্য)।

• পানি পানের জন্য ছোট ফ্লাস্ক বা পানির বোতল।

নারীদের জন্য:

• পুরো শরীর ঢেকে থাকে এমন ঢিলেঢালা পোশাক। নারীদের জন্য ইহরামের আলাদা পোশাক নেই। তারা ইহরাম অবস্থায় পর্দা রক্ষা হয় এমন ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করবেন।

•সুগন্ধিমুক্ত টয়লেট্রিজ (সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, লোশন ইত্যাদি)।

• প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, মাসিকের সময় ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্যাড বা মেডিকেল সামগ্রী।

• যে কোনো রকম জুতা বা স্যান্ডেল। নারীদের জন্য পায়ের পাতা ও গোড়ালি খোলা রাখা জরুরি নয়।

• হালকা ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক।

• ছাতা ও সানগ্লাস। (রোদ থেকে বাঁচার জন্য) 

• পানি পানের জন্য ছোট ফ্লাস্ক বা পানির বোতল।

৪. গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও অর্থ নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করুন

পাসপোর্ট, হজের নুসুক কার্ড, মুয়াল্লিম নাম্বার, এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা ও সৌদি রিয়াল সঙ্গে নিতে হবে। এগুলোর জন্য বেল্ট ব্যাগ বা গলায় ঝোলানো ব্যাগ কিনে নিন।

৫. ব্যাগ ট্যাগিং করুন

সফরের প্রতিটি ব্যাগে নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, হজ এজেন্সির নাম ও মোবাইল নাম্বার লিখে ট্যাগ লাগিয়ে নিন।

৬. হজ গাইড বই সঙ্গে রাখুন

হজের মাসলা-মাসায়েল ও নিয়মাবলী ঠিকমতো আদায়ের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য হজ গাইড বই সঙ্গে নিন।

৭. অভিজ্ঞ কোনো আলেমের সহচর্যে থাকার চেষ্টা করুন

সম্ভব হলে কোনো অভিজ্ঞ আলেম বা আগে হজ করেছেন এমন ব্যক্তির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করুন, যেন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক পরামর্শ নিতে পারেন।

৮. আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন

ওমরাহ ও হজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহর তওফিক ও সাহায্য চেয়ে বেশি বেশি দোয়া করুন।