
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর হেভিওয়েট প্রার্থীরা রয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারাসহ অন্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়েছেন। নেতারা স্থানীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। দলগুলোর সাংগঠনিক তৎপরতাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছে নির্বাচনি এলাকা। তাদের সমর্থনে ব্যানার-পোস্টার এমনকি তোরণও শোভা পাচ্ছে কোথাও কোথাও।
নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে এক ধরনের পলাতক জীবন কাটিয়ে নিজ নির্বাচনি এলাকায় ফিরেছেন দলের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হকের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন তিনি। দেশে ফিরেই ফের রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়েছেন-গণসংবর্ধনা, মতবিনিময় ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কিশোরগঞ্জ জজকোর্টের জিপি অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস, আরেক সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, যুববিষয়ক সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন ওরফে ভিপি সুমন।
অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস যুগান্তরকে বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে অবিচল থেকেছি। কখনও মাঠ ছেড়ে যাইনি। আশা করি, সেই বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে ড. এম ওসমান ফারুক যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসেন তাহলে আমি প্রার্থী হব না।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা বলেন, ড. এম ওসমান ফারুকের অনুপস্থিতিতে আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। আন্দোলন-সংগ্রামেও সক্রিয় ছিলাম। আশাকরি দল যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে।
জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. জিহাদ খানকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। জিহাদ খান এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে গণসংযোগ করছেন। তার পক্ষে সরব দলীয় নেতাকর্মীরাও।
এ নিয়ে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রমজান আলী যুগান্তরকে বলেন, এটি কিশোরগঞ্জের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন। এখানকার লোকজন গুণী যোগ্য লোকের কদর বুঝে। সেদিক বিবেচনায় এবার এখানে অত্যন্ত যোগ্য ও জনবান্ধব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ভালো ফলাফলের প্রত্যাশায় আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো গঠন করে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।
এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে এলাকায় গণসংযোগ করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা আলমগীর হোসাইন তালুকদার এবং জেলা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক সভাপতি ডা. এনামুল হক ইদ্রিস।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এমএ কুদ্দুস বিজয়ী হন। ১৯৭৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী এশিয়ার বিখ্যাত সয়েল সাইন্টিস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম ও গণি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জয়লাভ করেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু। এছাড়া ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ড. মিজানুল হক, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির কবির উদ্দিন আহমেদ ও ২০০১ সালে ড. এম ওসমান ফারুক নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টানা চারবার জয়ী হন মুজিবুল হক চুন্নু।