
দুঃসময়ে দায়িত্ব নেয়া সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কঠিন চাপে পড়েছে। বিসিএসসহ নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাপক জট কমাতে কৌশল ঠিক করে কাজ শুরু করলেও পরিকল্পনামতো এগোতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। নানা অনধিকার চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। সরকার ও নতুন একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলদের অযাচিত হস্তক্ষেপ, প্রচ্ছন্ন হুমকি ও চাপ প্রয়োগের কারণে পিএসসি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে। সর্বশেষ ৪৬ তম বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করার প্রক্রিয়া নিয়ে এন্তার প্রশ্ন উঠেছে। গোটা কয়েক শিক্ষার্থীর দাবির মুখে রোববার রাতে সরকারের একজন উপদেষ্টা প্রথম পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। পরের দিন গতকাল পিএসসি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই পরীক্ষা স্থগিতের তথ্য জানায়।
একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্ত আসার আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা কীভাবে বিসিএস’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিতে পারেন এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পিএসসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাপে পড়ে পিএসসি সিদ্ধান্ত জানাতে বাধ্য হয়েছে। এই পরীক্ষা যদি স্থায়ীভাবে বাতিল বা দীর্ঘদিন স্থগিত থাকে তাহলে চলমান নিয়োগ জট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। আগামী কয়েক বছরেও এই জট দূর করা সম্ভব হবে না। ওদিকে লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণার পর চরম হতাশা দেখা দিয়েছে কয়েক হাজার পরীক্ষার্থীর মাঝে। ৪৬তম বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষা স্থগিত নিয়ে কী ঘটেছে এই কয়েকদিনে মানবজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় একটি ফোন কল আসে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমের কাছে। ফোনটি করেন সরকারের একজন উপদেষ্টা। তিনি ৪৬তম বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষা পিছিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। তখন পিএসসি চেয়ারম্যান ৪টি বিসিএস’র পরীক্ষাজটের যুক্তি দিয়ে পরীক্ষা বাতিল করা যাবে না বলে জানান। তখন ওই উপদেষ্টা বলেন, আপনি কল্পনা করতে পারছেন না কি হচ্ছে। অনশনে থাকা একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এখন তিনি মারা গেলে এর দায়ভার কে নিবে। আমরা এর দায়ভার নিতে পারবো না। আপনাকে এর দায় নিতে হবে। আরও অনেকে অসুস্থ। এ সময় তিনি ফোনে দ্রুত পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার আদেশ জারি করতে বলেন। এর পরপরই পিএসসি চেয়ারম্যান বোর্ড মেম্বারদের নিয়ে জরুরি সভায় বসেন। বোর্ড সদস্যদের কাছে উপদেষ্টার নির্দেশ তুলে ধরে তাদের সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। তবে সভায় সদস্যদের কেউই ওই সিদ্ধান্তে সায় দেননি।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আরও আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়। সন্ধ্যার দিকে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকে ফোন করেন সরকারের আরেকজন উপদেষ্টা। ফোনে তিনি পিএসসি চেয়ারম্যানকে হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে যেতে বলেন। এবং দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ৪৬তম বিসিএস স্থগিত করে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে বলেন। পিএসসি চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলার সময় চান। কিন্তু ওই উপদেষ্টা তা মানতে রাজি হননি। এমনকি বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানকে তিনি এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ফোন রেখে দেন। পরে সন্ধ্যায় পিএসসি’র তিনজন সদস্য জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নাজমুল আমীন মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আসিফ মাহমুদ ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এবং পরীক্ষা পেছালে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও তারা মানতে নারাজ ছিলেন। একপর্যায়ে ওই উপদেষ্টা তাদের পরীক্ষা স্থগিত করতে চাপ দেন। এমনকি সমিতিতে বসেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানিয়ে দেন। ফোনে পিএসসি চেয়ারম্যানকেও একই নির্দেশনা দেন। পরে পিএসসি’র তিন সদস্যকে সঙ্গে রেখেই ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন উপদেষ্টা।
এখনো হস্তক্ষেপ এড়াতে পারছে না পিএসসি: বাংলাদেশ জাতীয় কর্ম কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পিএসসিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ ছিল। নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম আর কোটার কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনই হাসিনা সরকারের পতনের সূচনা করে। গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরে পিএসসিকে সকল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাহিরে রাখতে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়। নিয়োগ দেয়া হয় অভিজ্ঞ ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের। গত ৬ মাস ধরে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও পরীক্ষাজট কমাতে স্বাধীনভাবে কাজ করছে বর্তমান বোর্ড। ছাত্র আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এনসিপি’র র্শীষ নেতা সারজিস আলম পিএসসিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাহিরে রাখার পরামর্শ দেন। ৪৬তম বিসিএস বাতিলের দাবিতে হওয়া আন্দোলনে যোগ দিয়ে সারজিস আলম বলেন, ১৬ বছরে পিএসসি’র উপর অনেক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দেখেছি। বিসিএস-এ এই রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু চলতি মাসে ৪৬তম বিসিএস বাতিলের দাবিতে চলা আন্দোলনে চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে ব্যধ্য হয় সরকারি কর্ম কমিশন। সূত্র বলছে, একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনবরত চাপে পরীক্ষা না পেছানোর অনড় অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় পিএসসি। এক প্রকার বহু বছরের রীতি ভেঙে একটি বৈঠকে বসে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয় স্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি। এতে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে কীভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করবে পিএসসি।
আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিয়েছেন: ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি আগে থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল। এমনকি তারা পরীক্ষা পেছানোর যুক্তি দিয়ে বিবৃতিও দেয়। এসব কারণে পিএসপি সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রশ্নপত্রের ছাপাখানা পরিবর্তন এবং প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা জোরদার করে। পিএসসি’র একটি সূত্র বলছে, তারা যেকোনো মূল্যে পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরিবর্তনে সম্মত ছিলেন না। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পরেও অনড় ছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকেও পিএসসি’র সিদ্ধান্তের উপর একমত পোষণ করা হয়। তবে বিপত্তি বাধে প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফরে যাওয়ায়। এরপর থেকেই ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল করতে পিএসসি’র উপর সীমাহীন চাপ আসতে শুরু করে। এমনকি সরকারের দুটি প্রভাবশালী মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিতে পিএসসিকে চাপ দেন। উপায় না পেয়ে পিএসসি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি’র শীর্ষ এক নেতার সঙ্গে কথা বলেন। আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে অনুরোধ করেন। এবং আলোচনা করে একটি ভালো সমাধানের পথ বের করতে সাহায্য চান। কিন্তু তাতে ওই নেতা সাড়া দেননি। অভিযোগ রয়েছে, পিএসসি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনের শুরু থেকে নেতৃত্ব দেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা সিরাজুস সালেহীন সিয়ন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ সিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮-১৯ সেশন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল করিম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী সাকির, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আওরঙ্গজেব, ঢাবি শিক্ষার্থী শাহ আলম স্নেহ ও মোস্তাকিন আহমেদ আশিক।
পরীক্ষা পেছানো নিয়ে যা ঘটেছে: ৮ই এপ্রিল। দুপুরে ১০ থেকে ১২ জন চাকরিপ্রার্থী বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন পিএসসি’র সামনে এসে জড়ো হোন। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই অল্প কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গেট ভেঙে পিএসসি ভবনে ঢুকে পড়েন। তারা দৌড়ে পিএসসি’র মূল ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষিত আছে। খবর পেয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম নিচে নেমে আসেন। এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তারা দাবি- দাওয়া নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে আলাপ করতে চান। পরে তাদের পিএসসি’র কনফারেন্স রুমে নেয়া হয়। চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যরা ওই চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের দাবিগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়। এবং সরকারের সঙ্গে আলাপ করে জানানোর আশ্বাস দেয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা তা মানতে রাজি হয়নি। তারা তখনই সিদ্ধান্ত জানাতে বলেন। পরে তারা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সকলে একযোগে স্লোগান দিয়ে পিএসসি ভবন থেকে বেরিয়ে যান। পরদিন ৯ই এপ্রিল।
ঢাবির রাজু ভাস্কর্য এলাকায় একই দাবিতে আন্দোলন করেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে ১০ই এপ্রিল তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিবৃতিতে পিএসসি’র কার্যক্রমে গতিশীলতা ও বিসিএস পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত, একই সঙ্গে বিসিএসের নিয়োগ পরীক্ষায় ভাইভার আগে লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ এবং ভাইভার আগে ক্যাডার চয়েস রদবদলের সুযোগ রাখার দাবি করা হয়। এ ছাড়া জুনের শেষ সপ্তাহ অথবা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সম্ভব না হলে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ অথবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে লিখিত পরীক্ষা শুরু করতে হবে এমন একগুচ্ছ দাবি জানায় দলটি। একই দিনে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পিএসসি জানায়, পিএসসি নির্ধারিত সময়সূচি আপাতত পরিবর্তন করবে না। তবে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এবং ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা একদিনে পড়লে বিকল্প তারিখ নির্ধারণ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কমিশনকে বর্তমানে ৪৪, ৪৫, ৪৬ ও ৪৭তম বিসিএসসহ নন-ক্যাডারের বিভিন্ন নিয়োগ সংক্রান্ত জট নিরসনকল্পে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হচ্ছে। পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমিশন প্রার্থীদের সার্বিক প্রস্তুতির পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার ইতি টানার বিষয়গুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এমনকি সার্বিক বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রার্থীসহ দেশের সব মহলের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। তবে ১১ই এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আবারো ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানো না হলে পিএসসি’র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন। দুইদিন পর পিএসসি ১৩ই এপ্রিল ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করে ৮ই আগস্ট নির্ধারণ করেন।
এতে ১৫ই এপ্রিল পুনরায় সরকারি কর্ম কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে বিক্ষোভ শেষে সেখান থেকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রা করেন পরীক্ষার্থীরা। ১৭ই এপ্রিল ১০ থেকে ১২ জন আন্দোলনকারী আবার পিএসসি’র সামনে গেলে সেনাবাহিনী তাদের ধাওয়া দেন। পরে ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যান। ২৩শে এপ্রিল পিএসসি সংস্কার চেয়ে আবার আন্দোলনে নামে কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদিন তারা আট দফা দাবি পেশ করেন। পরদিন ২৪শে এপ্রিল ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ এবং ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। ৭২ ঘণ্টা ধরে অনশন কর্মসূচি পালন করতে যেয়ে ৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২৫শে এপ্রিল অনশনরত চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন। ২৮শে এপ্রিল আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন একদল চাকরিপ্রত্যাশী। সন্ধ্যায় তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। পরে এদিন রাতে পিএসসি’র সঙ্গে আলাপ করে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। পরদিন সোমবার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকেও বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়।
পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনে কতজন: অতীতে দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি থাকলেও ৪৬তম বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনে খুব বেশি শিক্ষার্থীকে সামিল হতে দেখা যায়নি। প্রতিদিনের কর্মসূচিতে ঘুরেফিরে ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকেই দেখা গেছে। আন্দোলন দেখতে আশপাশে উৎসুক জনতা থাকলেও কেউ তাদের সঙ্গে যোগ দেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ, পিএসসি’র সামনে অবস্থান, প্রধান উদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও, আমরণ অনশন, প্রতিবাদ মিছিল ও শাহবাগে অবরোধে ঘুরেফিরে সেই ১০ থেকে ১২জন শিক্ষার্থীকে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর দাবিকে কীভাবে জনদাবি হিসাবে রূপান্তর করা হলো। এর পেছনে কারা আছেন? তাদের উদ্দেশ্য কি? কেন লাখ লাখ বিসিএস পরীক্ষার্থীর নিয়মিত পরীক্ষা চালু রাখার পিএসসি’র প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করা হলো? ৪৬তম বিসিএস পেছালে যে জট সৃষ্টি হবে এর দায়ভার কে নেবে। এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
পিএসসি সূত্র জানায়, সীমাহীন নিয়োগ জট কমাতে তারা দ্রুতই একটি কর্ম পরিকল্পনা নিয়েছিল। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে পিএসসি’র জট কমিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন। আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে জট খোলার অগ্রগতি দেখা যাবে। এজন্য তারা কিছুতেই কোনো পরীক্ষা পেছাতে চাইছেন না। পিএসসি আরও বলছে, ৪৬তম বিসিএস’র প্রিলির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এর কোনো প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি। সিআইডি ঘটনাটি তদন্ত করছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে পিএসসিই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার রাখে।
সাধারণ পরীক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া: লিখিত পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে একজন চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে টিকেছি, আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে। এটি ছোট খাটো অন্যায় নয়, এটা অনেক চাকরি প্রার্থীকে মেরে ফেলার সমান অন্যায় হবে। আমরা বছরের পর বছর পরিশ্রম করেছি ক্যাডার হওয়ার আশায়। আমাদের অনেকেরই শেষ বিসিএস। অনেকেই আমরা অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ৪৬তম বিসিএস দিয়েছি এবং উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। এখন এই পরিশ্রম, আর্থিক ক্ষতি পূরণ হবে কীভাবে? সাইফ মো. হাসান নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, বাতিল করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না।
আসিফ সরকার বলেন, যে ব্যক্তি অসদুপায়ে প্রিলি পাস করেছে, সে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে না। ভাইভার মার্ক অনেক সময় একটা বিরাট পার্থক্য গড়ে তোলে। আমাদের আন্দোলন করা উচিত ভাইভার নম্বর কমানো নিয়ে। তা না করে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করা হলো। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রার্থী ফেসবুকের একটি গ্রুপে লেখেন, এই যে আপনাদের অনশন নেতা সালেহীন সিয়ন ভাই। তার কিন্তু ৪৬-এ বয়স-ই ছিল না। বুঝেন এখন? কারা বসছিল এক্সাম পিছাতে নাকি বাতিল করতে।