
২০১৫ সালে বরিশালের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় যাত্রা শুরু করেছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-জিইউবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের জন্য পরের বছর বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের রামপট্টি ও মৈশাদী মৌজায় রামপট্টিতে নানকের ভাই নাসির উদ্দিন লিটুর নামে এক একর ৬০ শতাংশ জমি কেনা হয়। তবে তাঁর চেয়েও বেশি, প্রায় তিন একর জমিতে বালু ভরাট করে ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন নানক নিজেই।
দখল করা প্রায় দেড় একর জমির মালিকদের পুলিশ দিয়ে ভীতি ছড়িয়ে এলাকাছাড়া করে নানক অনুসারীরা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে জমির মূল মালিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে নিজেদের জমি উদ্ধার করেন। তারপর সেখানে তৈরি করেছেন কলাবাগান। সেই বাগানে কলাগাছ দেখে এলাকাবাসী চলতে চলতে কৌতুক করেই বলেন, নানক নাই, তাই কলাগাছও স্বাধীনভাবে বড় হইছে।
ওই জমি দেখভালকারী বাবুগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক সাইফুল মৃধার কাছ থেকে জানা গেছে, রামপট্টি ও মৈশাদী মৌজায় গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ভবন, ছাত্রাবাস ও নানকের মেয়ের একটি বাংলোর জন্য প্রায় তিন একর জমিতে সীমানা দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল। দলিল হয়েছে এক একর ৬০ শতাংশের। নাসির উদ্দিন লিটুর নামে কেনা জমি পরে ভাই নানকের নামে দানপত্র করেছেন। নানক আবার ওই জমি গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির নামে দলিল করিয়েছেন। গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির প্রবেশদ্বারে ১৭১, ৭২, ৭৩ ও ৭৪ দাগে ২৪ শতাংশ জমির মালিক দুই ভাই সোহেল রানা ও শাকিল হোসেন এবং তাঁদের চাচা। শাকিল ও সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁদের জমি দিয়েই ইউনিভার্সিটির জমিতে ঢুকতে হবে। আমাদের এই জমি দখল করে বালু ভরাট করে নানকের লোকজন। দখলের বিরোধিতা করতে পারিনি। আমরা তাঁর ক্ষমতার কাছে অসহায় ছিলাম।
তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আমাদের জমি আমরা দখলে নিয়ে নিয়েছি। সেখানে কলাবাগান করেছি। সোহেল ও শাকিলদের জমির সঙ্গেই রামপট্টি মৌজার ১৭২, ৭৩ ও ৭৪ নম্বর দাগে স্থানীয় দুলাল হোসেন সরদার ও তাঁর ভাই আদেল উদ্দিন সরদারের ১৩ শতাংশ জমি। ওই জমিও নানকের লোকজন দখল করেছিল জানিয়ে দুলাল সরদার বলেন, আমাদের জমি আমরা ৫ আগস্টের পর দখলে নিয়েছি। এখন সেখানে কলাগাছ লাগানো হয়েছে। দখল করা জমির মধ্যে উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের প্রবাসী ফরিদ হোসেনের ৬৫ শতাংশ জমি। ওই জমি তিনি কিনেছিলেন রহমতপুর ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আলী হোসেনের কাছ থেকে। কেনার পর জমি চাষাবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী হোসেনকে। আলী হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই নানকের লোকজন এসে ফরিদের জমির পুরো অংশ বালুভরাট করে দখলে নেয়।
গত ৫ আগস্টের পর ফরিদের শ্যালক মিরাজ ওই ৬৫ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে কলাগাছ রোপণ করেন। সোহেল, শাকিল, ফরিদ ছাড়াও আরো কিছু জমি নানকের পক্ষ থেকে দখল করা হয়েছিল। নানকের ভাই লিটু যাদের কাছ থেকে জমি কিনেন তাদেরও ঠকানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী খাদেম হোসেন জানান, মৈশাদী মৌজায় জমির বাজার মূল্য শতাংশ প্রতি ২৭ হাজার টাকা। রামপট্টি মৌজায় মূল্য শতাংশ প্রতি চার লাখ টাকা। আমার ১১ শতাংশ জমি রামপট্টি মৌজার হলেও দলিলে মৈশাদী মৌজায় উল্লেখ করে ২৭ হাজার টাকা করে প্রতি শতাংশ জমির দাম ধরা হয়েছে। তখন আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। এ কারণে আমার বাসায় পুলিশ পাঠান নানকের লোকজন। এখন আমি ওই জালিয়াতির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করব