Image description

সমাজে প্রচলিত কথা যে, শিক্ষকতা মহান পেশা। তবে এই মহান পেশায় জড়িত কেউ কেউ ভুলেই যান তিনি শিক্ষক এবং শিক্ষকতা পেশায় আছেন। তখন তার আচরণ হয়ে ওঠে নিপীড়কের ভূমিকায়। তেমনই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের আওয়ামী লীগপন্থী সমর্থিত নীল দলের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। অভিযোগ রয়েছে, যেখানেই যেতেন নানা প্রলোভনে তিনি তার নারী সহকর্মী ও ছাত্রীদের সঙ্গে জড়াতেন যৌন হয়রানিতে। একটি নয়, এরকম একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

যৌন হয়রানি ও অন্যান্য ঘটনায় গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে ক্লাসে ফিরতে পরেননি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। একাধিক যৌন হয়রানিতে জড়িয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এমন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৯ মাস পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসির অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে সর্বশেষ গত ২৪ এপ্রিল সিন্ডিকেটের সভায় এজেন্ডা থাকলেও তা উত্থাপিত হয়নি। ফলে তার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপদে বহাল আছেন এবং অ্যাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নিয়েও পাচ্ছেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এ ঘটনায় বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, তার এই অপরাধে চাকরিচ্যুত করা উচিত। কিন্তু গড়িমসি করছে প্রশাসন। তবে শিগগির তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ফের আন্দোলনে নামবেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।

ঢাবিতে বিক্ষোভ (ফাইল ফটো)

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিগত সময়ের সব ভিসির আমলে তিনি পেয়েছেন সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম থেকে শুরু করে ভাগিয়ে নিয়েছেন বিভিন্ন প্রশাসনিক বড় বড় পদ। সর্বশেষ গত বছরের ৪ এপ্রিল তাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। তবে যৌন হয়রানিতে জড়ানোয় তাকে সেখানে যোগ দিতে দেয়নি তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। পরে এই নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

এদিকে, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত একজন ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালকের পদে ছিলেন। সেখানে সাড়ে তিন বছর এই দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তিনি নারী সহকর্মী ও ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানিতে জড়াতেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পুরুষ সহকর্মীরা তার এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করলে আটকে দিতেন পদোন্নতি। এ নিয়ে সম্প্রতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি তার কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে।

এদিকে, ৫ আগস্টের পর ইনস্টিটিউটের ছাত্রীদের সাথে ম্যাসেঞ্জারে অশালীন কিছু কথপোকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিল। পরে ইনস্টিটিউটের দেওয়ালে দেওয়ালে এসব স্ক্রিনশটের পোস্টারিংও করা হয়েছিল। যৌন হয়রানি, নৈতিক স্খলন, রাজনৈতিক দলাদলি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করার দায়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। পরে ১৮ আগস্ট বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, নৈতিকঙ্খলন, রাজনৈতিক দলাদলি, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং ছাত্র আন্দোলনে গুজব ছড়ানোর আনীত অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সকল অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয় বিবেচনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। এরপর সেটি প্রতিবেদন আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সেলে পাঠালে সেখান থেকে সুপারিশ আকারে সম্প্রতি সিন্ডিকেটের সভায় উঠে। যদিও সিন্ডিকেটের সভায় সেটি উঠেনি।

ইনস্টিটিউটে পোস্টারিং

জানা গেছে, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালকের পদে যোগদানের আগে ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) অধ্যক্ষ ও পরে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর  প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পদত্যাগের পর ২২ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে ৩৭ জন শিক্ষক লিখিত ভাবে ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন। এদের মধ্যে যৌন হয়রানির শিকার দুজন নারী সহকর্মী ও তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

এরপর তিনি যোগ দেন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালকের পদে। সেখানে গিয়েও তিনি যৌন হয়রানিতে জড়ান অন্তত তিনজন সহকর্মী ও ডজন খানের বেশি ছাত্রীদের সঙ্গে। তিনি সেখানে সাড়ে ৩ বছরের মতো দায়িত্বে ছিলেন।

জানা গেছে, এ কাজে তিনি তাদের ইনস্টিটিউটের নিয়োগ ও একাডেমিক বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এমনকি ইনস্টিটিউটের বর্তমান দুইজন নারী শিক্ষকও তার ফাঁদে পড়েছিলেন। তাদের একজনকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতেও গিয়েছিলেন। তাছাড়া কার্জন হলে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগেও একান্তে নারী ছাত্রীদের নিয়ে আসতেন।

তার হয়রানি থেকে বাদ যেতেন না নারী সহকর্মীরাও। ইনস্টিটিউটের এক নারী কর্মচারী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ড. মিজানের হয়রানিতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। একসময় তার গর্ভপাতও হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গত ৫ আগস্টের পর অধ্যাপক মিজান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নিটারের অভিযোগগুলো অলরেডি রিজলভড, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আছে। আর লেদারের ঘটনাগুলো আমার নামে ভুয়া আইডি খুলে আমার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি গতবছর এই নিয়ে জিডি করেছি।

ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় নতুন ফোন কিনলে মেয়েদের সাথে ছবি তোলা হয়। আমি তো একজন সাইন্টিস্ট, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফাইল ফোন থেকে আমার অফিসের কম্পিউটারে নিই। যখন মোবাইলের স্টোরেজ ফুল হয়ে যায় তখন সব ফাইল কম্পিউটারে নিয়ে আমার ওইখানের ড্রাইভে রেখে দেই। যেহেতু আমার বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই এরা ষড়যন্ত্র করে, এরা যে কখন আমার কম্পিউটার থেকে এগুলা নিয়ে গেছে আমি টেরও পাই নাই।

‘‘আমার তো অফিসের সবকিছুই ওপেন থাকে, লেদার ইনস্টিটিউটে আমার কম্পিউটারে কোন পাসওয়ার্ডও নাই। লেদার ইনস্টিটিউটে পরিচালকের রুমটা তো ওপেন, সে রুমে যে কম্পিউটারটা সেই কম্পিউটারে কোন পাসওয়ার্ড নাই। আর যে ছবি আছে আমার গলা পর্যন্ত ছবি। বাকি যে ছবিগুলা আছে ওগুলা ওরা বানিয়েছে, ওগুলা মিথ্যা। নিজেরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে বানিয়েছে।’’

অধ্যাপক মিজান তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগের তির ছোঁড়েন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মো. শাখাওয়াত হোসেন এবং একই ইনস্টিটিউটের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সভাপতি মুঈন মুহতাদীউল হক রাহাতের দিকে।

যোগাযোগ করা হলে শাখাওয়াত হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সব ডিরেক্টরের সাথেই আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। যখন যৌন হয়রানির ব্যাপারগুলো সামনে আসছিল আমি তাকে বলেছিলাম আপনার বদনাম হয়ে যাচ্ছে। তখন আমার নিয়োগের ইস্যুগুলো সামনে আনে যেটার বিরুদ্ধে আমি পোস্ট করি। তারপর এই যৌন হয়রানি ইস্যুতে পোস্ট করেছি এবং আমি তা নির্দ্বিধায়ই করেছি। আর যা লিখেছি সবকিছুই পত্র-পত্রিকার লেখা।  তিনি এটা নিয়ে জিডি করেছেন, আমিও জিডি করেছি। ওনাকে ভয় পেয়ে চলার তো কিছু নাই। এনএসআই আমাকে ডেকেছিল। আমি সেখানেও বলেছি যে, আমি যা লিখেছি সত্য লিখেছি।’

বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যাপক মিজান বিগত কয়েক বছর ধরেই যৌন হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক দলাদলি, শিক্ষক নিয়োগে চরম দুর্নীতিসহ, ছাত্র  আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। এর আগে তিনি ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজ বিভাগসহ এই ইনস্টিটিউটে নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম করেছেন।

তারা আরও জানান, সম্প্রতি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, হয়রানি, শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে চরম অনিয়ম ছাপিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ বড় উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষক নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা, ভিডিও কলে যৌনাঙ্গের ভিডিও প্রদর্শন, নিজ কক্ষে একান্তে ডাকার অভ্যাস রয়েছে তার। পূর্বে ক্ষমতার দাপট থাকার কারণে কেউ মুখ খুলতেন না। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই শিক্ষকের যথোপযুক্ত শাস্তি চান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের সময় এ বিষয়ে বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মাহফুজ বলেন, শিক্ষক জাতি গঠনের কারিগর। একটি সুশিক্ষিত জাতি গঠনে তাদের ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু অধ্যাপক মিজানের মত শিক্ষকেরা শিক্ষক নামটাকে কলঙ্কিত করছে। যৌন হয়রানি, রাজনৈতিক প্রভাব প্রদর্শন, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের শিক্ষকের কাছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষককে আমরা দেখতে চাই না।

জানা গেছে, নিজ বিভাগে তিনি সহকর্মী ও ছাত্রীদের যৌন হয়রানির সুযোগ পাননি। তবে বিভাগের নিয়োগ প্রভাব রাখতেন তিনি। তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে তিনি বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেন তিনি।

বিভাগের এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা চেয়েছি ড. মিজান বিভাগে আসুক। কিন্তু তিনি আসেননি। আসলেই আমরা নিজেরাই আইনের হাতে সোপর্দ করতাম। এখন আমাদের দাবি, তাকে চিরতরে বহিষ্কার করা। কিন্তু এখনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’  

বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ এন এম হামদিুল কবির দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা থেকে তাকে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সুপারিশগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সেলে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি বিভাগের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।’

অ্যাকাডেমিক কমিটিতে ড. মিজানের বিরুদ্ধে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে: ছাত্র-ছাত্রীদের উত্থাপিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং দাখিলকৃত প্রমাণাদির উপর ভিত্তি করে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ; অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করার ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিভাগের সকল অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া; তাকে বিভাগের সকল অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান ও তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য আইন উপদেষ্টা মতামত দেওয়া। 

এছাড়া ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের অনৈতিক ও অন্যায় আচরণের প্রতিকার চেয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ (নিটার) ১ জন সাবেক সহকারী অধ্যাপক, ২ জন সাবেক প্রভাষক এবং ১ জন সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রারের আবেদন বিবেচনার সুপারিশ।

তাছাড়া অ্যকাডেমিক কমিটির সুপারিশ বলছে, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান নিটারে যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফিস বা পরীক্ষার নাম ব্যবহার করে অসংখ্য আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিজেকে যুক্ত করেন। তার এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে নিটার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে মর্মে তারা আবেদনে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে ঢাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিষয় নিয়ে সিন্ডিকেটে এজেন্ডা ছিল। তবে আলোচনায় হয়নি।

নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগপন্থী এরকম একাধিক শিক্ষকের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের সময়ের শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আছে। সরাসরি প্রমাণ দিয়ে তারা অভিযোগগুলো করেছেন। এজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে পাঁচ স্তর বিশিষ্ট পদ্ধতি ফলো করছি। প্রথমত এই ধরনের অভিযোগগুলো নিয়েছি। আমলে নেওয়া যায় কী না আইন বিভাগের সহকর্মীদের প্রাথমিক মূল্যায়ন করবে। তারপর বিভাগের সাহায্যের মাধ্যমে প্রথমে চেষ্টা করি। তারপর আমরা সত্যানুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে আমলে নেওয়ার সুযোগ আছে, তার ভিত্তিতে আমরা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করে দেয়। সেখানে কয়েকজন প্রতিনিধি থাকেন। তখন আত্মপক্ষের সুযোগ দিয়ে যিনি অভিযোগ করেছেন এবং যিনি অভিযুক্ত তাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলে প্রক্রিয়াটা এগিয়ে যায়। এটিকে ইতিবাচক কিছু করা যায় কিনা সেটাও আলোচনা করা হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে যদি কাজ না হয় তাহলে আইনগতভাবে আরো গভীরে যাওয়ার সুযোগ আছে। এটা সিন্ডিকেট যাবে, সিন্ডিকেটের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ট্রাইবুনাল গঠন, তদন্ত কমিটি হবে এবং সবশেষ অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি নিয়ে ট্রাইবুনাল গঠন হবে। এই সিন্ডিকেট পর্যন্ত আটটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমাদের যেতে হবে। যদি অনুসরণ না করি তাহলে যেকোনো সময় আমরা মামলাতে হেরে যাবো।’

‘‘এজন্যই আইন মেনে চলা জরুরি এবং আমরা একটি আইনজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিয়েছি আইনগত পরামর্শ দেওয়ার জন্য৷ এতে দুইজন ব্যারিস্টার ও আইন বিভাগের শিক্ষকরা রয়েছেন। ইতোমধ্যে তিন চারটি কমিটির রিপোর্ট চলে এসেছে এবং ধীরে ধীরে আমরা তা সিন্ডিকেটে নিয়ে যাচ্ছি। এসব সিদ্ধান্তে আবেগ তাড়িত হওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমাদের সময় লাগেছে।‘’

ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আইনি নোটিশ
লেদার ইইনস্টিটিউটের পরিচালক থাকাকালীন সময়ে সেখানকার শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেনকে প্রাপ্য পদোন্নতি দেননি ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ নিয়ে ৫ আগস্টের পর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ওই শিক্ষক। এতে বলা হয়, নিয়ম অনুসারে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শাখাওয়াত হোসেনের প্রাপ্য পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে ড. মিজানুর রহমান নিজের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতি নীতিমালা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে পদোন্নতিতে বাধা দেন।

নোটিশে আরো উল্লেখ করা হয়, শাখাওয়াত হোসেনের বিভাগীয় কার্যক্রম ও নিয়োগ-সংক্রান্ত ফাইলপত্র যথাযথ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও তাকে অগ্রাহ্য করে অবৈধভাবে অন্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে শাখাওয়াত হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন বলে দাবি করা হয়।