
চাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের পর মধ্যস্বত্বভোগীদের চোখ পড়েছে মাছ-মাংসের বাজারে। খেয়ালখুশি মতো দাম বাড়িয়ে অস্থির করছে বাজার। এই চক্রের সঙ্গে জোট বেঁধেছে খুচরা বিক্রেতারাও। দুইয়ে মিলে নানা অজুহাত আর সংকট দাঁড় করিয়ে পকেট কাটছে ভোক্তার। তাদের কারসাজিতে খুচরা বাজারে তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের কেজি ৩৫০-১০০০ টাকায় ঠেকেছে। এছাড়া কিছুটা দাম কমলেও প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি এখনো ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংস কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৭৮০ ও ১১০০ টাকা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, গরিবের পাতে মাছ-মাংস তোলা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে অতিরিক্ত দামের কারণে সাধারণ মানুষের আমিষেও ধরেছে টান। সামর্থ্য না থাকায় খাবার তালিকা থেকে অনেক আগেই বাদ পড়েছে মাংস। আমিষের স্বাদ নিতে যারা মাছ কিনতেন তাদেরও মাথায় হাত পড়ছে।
এছাড়া বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চলত, তারাও অনেকটা নিরূপায়। মাছ-মাংস, শাক-সবজি কিংবা নিত্যপণ্যই নয়, সব ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনযাত্রায় খরচ শুধু বাড়ছেই। কিন্তু আয় আর বাড়ছে না। অনেকের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, রামপুরা বাজারসহ একাধিক খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি চাষের রুই ৩২০-৩৫০ টাকা, কাতল ৩৫০ টাকা, পাবদার কেজি ৪০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২১০-২৪০ টাকা, টেংরা ৬০০-৬৫০ টাকা, চাষের কই ২৮০ টাকা, চাষের শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা বাজারে মলা মাছও বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা, শোল ৬০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০-৮০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রির তথ্য মিলেছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, কক মুরগির কেজি ৩২০ টাকা। সঙ্গে দেশি মুরগি কিনতে কেজিপ্রতি ক্রেতাকে ৬৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
সামনে কোরবানির ঈদ। তাই সরবরাহ কম-এমন অজুহাতে গরুর মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকা। যা রোজার ঈদের পরও ৭৫০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছেন মো. আসলাম। বাজারে মাংসের এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছেন। দাম জানতে চাইছেন, কিন্তু কিনছেন না। জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি এই এলাকায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করি। নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে আমার সংসার চালানো দায়। দুই থেকে তিন বছর আগে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা হওয়ার পর থেকে শখের মাংস কেনা বাদ দিয়েছি। কম দামে পাঙাশ মাছ কিনতাম, সেগুলোও প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কীভাবে কিনব? বিক্রেতারা অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
যশোরের মাছচাষি মো. নোমান বলেন, চাষি পর্যায়ে যে দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে, খুচরা পর্যায়ে তার তিনগুণ বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, চাষি পর্যায়ে প্রতি কেজি পাঙাশ ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকা। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ২২০-২২৭ টাকা। প্রতি কেজি কই ১৭০-২০০ টাকা। তবে দেখা যাচ্ছে, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে এসব মাছ খুচরা বাজারে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না। যে কারণে চাষি এবং ভোক্তা উভয়ই ঠকছেন।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, সার্বিকভাবে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টে আছে। এতে উচ্চবিত্তের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোরও কষ্ট বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। সরকারের উচিৎ, যে পণ্যের দাম যা হওয়া উচিত সেগুলো বাজারে মনিটর করা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সব ধরনের পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদপ্তর কাজ করছে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। তার পরও বাজারে অভিযান পরিচালনা করে যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মাছ-মাংসের বাজারেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।