
তৃতীয় দেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি এভিয়েশন খাতের পরিভাষায়‘ ফিফথ ফ্রিডম ট্রাফিক রাইট' নামে পরিচিত । বাংলাদেশে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে বর্তমানে এ সুবিধা দেওয়া হয় না । ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে যাত্রী পরিবহনে প্রথমে নিজ দেশে যেতে হয়, তারপর তৃতীয় দেশে যেতে হয় । তবে ফিফথ ফ্রিডম রাইট পেতে আগ্রহী কিছু দেশের প্রস্তাব যাচাই শুরু করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সুবিধা নির্বিচারে দিলে তা দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর জন্য মারাত্মক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে । ফিফথ ফ্রিডম সুবিধায় আকাশ হবে উন্মুক্ত, তবে প্রতিযোগিতা হবে অসম । রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এবং ইউএস-বাংলা, নভোএয়ারের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো লোকসানে পড়তে পারে ।
কারণ, বিদেশি সংস্থাগুলো তাদের বড় নেটওয়ার্ক, ফ্রিকোয়েন্সি ও তুলনামূলক সস্তা ভাড়ার সুবিধা দিয়ে যাত্রীদের বেশি আকৃষ্ট করতে পারে । অবশ্য বেবিচক বলছে , যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের জন্য এই অধিকার অনুমোদনের পরিকল্পনা নেই । শুধু কার্গো ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই আলোচনা চলছে । এ ব্যাপারে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো . মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন , বর্তমানে কিছু নন - শিডিউল কার্গো ফ্লাইট ফিফথ ফ্রিডম সুবিধা পাচ্ছে । ভবিষ্যতে শিডিউল কার্গো ফ্লাইটেও এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে । তবে এতে যেন দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে , তা নিশ্চিত করা হবে ।
বেবিচক সূত্র বলেছে , বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তিতে ফিফথ ফ্রিডম ট্রাফিক রাইটের উল্লেখ রয়েছে । এ অবস্থায় বাংলাদেশি এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ব্যবসায়িক বিষয় বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ( বিভিন্ন রুটে ) ফিফথ ফ্রিডম ট্রাফিক রাইট ব্যবহারের বিষয়ে চিন্তা করছে বেবিচক । এর আগেও বেবিচকের কাছে ফিফথ ফ্রিডম সুবিধা পাওয়ার আগ্রহ নিয়ে এসেছে বিদেশি এয়ারলাইনস । ২০২৩ সালের মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চারটি এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল ।
বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, আমিরাতের এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে আমিরাত হয়ে বিভিন্ন দেশে যাত্রী পরিবহন করে । তারা ফিফথ ফ্রিডম রাইটের আওতায় বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৃতীয় কোনো দেশে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ চেয়েছিল । তবে তখন বিষয়টি আর এগোয়নি । সে সময় সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন , আমিরাতের এয়ারলাইনসগুলো কম খরচে যাত্রী পরিবহন করে বাংলাদেশের বাজার দখলে নিতে পারে । এতে দেশীয় ক্যারিয়ারগুলো হুমকিতে পড়তে পারে ।
এভিয়েশন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক এভিয়েশনে ফিফথ ফ্রিডম একটি স্বীকৃত ও প্রচলিত নীতি । তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বাজারে এর প্রভাব হতে পারে নেতিবাচক । যদি বিদেশি ক্যারিয়ারগুলো বাংলাদেশকে শুধু ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে দেশের বিমানবন্দরগুলো হাব হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কমে যাবে । এতে রাজস্ব কমবে , পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং , ফুয়েল, কেটারিংসহ সহায়ক খাতগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে । সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো , বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বিদেশি ক্যারিয়ারদের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাবে । এতে অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে । একই সঙ্গে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারে , তাহলে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে এবং বিদ্যমান সংস্থাগুলো হুমকিতে পড়বে ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন , যদি বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অন্য দেশে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি পায় , তবে তারা অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর বাজার দখল করবে । বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য , দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপগামী যাত্রীদের একটি বড় অংশ তুলনামূলক কম দামের টিকিট ও উন্নত সংযোগের কারণে বিদেশি এয়ারলাইনসের দিবে ঝুঁকতে পারেন । এতে বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলোর লাভজনক রুটেও যাত্রী হারানোর ঝুঁকি বাড়বে পাশাপাশি বিদেশি ক্যারিয়ারদের একচেটিয়া আধিপত্য গড়ে উঠতে পারে ।
সার্বিক বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাবেক ব্যবস্থাপন পরিচালক এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন , বিদেশি এয়ারলাইনসগুলে ফিফথ ফ্রিডম পেলে বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিত করতে পারবে না । তাদের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক ও ফ্রিকোয়েন্সি বিমান বাংলাদেশ কার্গো ফ্লাইট কেনার কথা ভাবছে , ঠিক এ সময় বিদেশি সংস্থাগুলোকে কার্গো পরিবহনের এই অধিকার দিলে তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে ।