Image description
কাশ্মীরে দুই জঙ্গির বাড়ি ধ্বংস, যুদ্ধের হুঁশিয়ারি পাক মন্ত্রীর

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গি হামলার ঘটনা কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে দুই দেশের সীমান্তরেখায় উভয় পক্ষের মধ্যে এক দফা গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশ দুটির মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। সূত্র : আল জাজিরা, দ্য হিন্দু, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, স্কাই নিউজ, জিও নিউজ, এনডিটিভি, এবিপি আনন্দ।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রথমে ভারতের কয়েকটি পোস্ট লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এর জবাবে ভারতের সেনাবাহিনীও গুলি চালায়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ গতকাল সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ মাত্রার সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে বিশ্বকে ভাবতে হবে। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন। খাজা আসিফ আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। খাজা আসিফ জোর দিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। ভারত যা কিছু শুরু করবে, তার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখাব। যদি কোনো সর্বাত্মক আক্রমণ বা এই জাতীয় কিছু হয়, তাহলে অবশ্যই সেটি হবে সর্বাত্মক যুদ্ধ। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, পরিস্থিতি এখনো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। আরেক খবরে বলা হয়, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতও যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। তারা তাদের সামরিক তৎপরতা জোরদার করে চলেছে।

দুই জঙ্গির বাড়ি ধ্বংস : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার দুই সন্দেহভাজন সদস্য আদিল হোসেন ঠোকের ও আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন এই বাড়ি দুটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে একটি স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরকের সাহায্যে ওড়ানো হয়েছে, অন্যটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বুলডোজারে। খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আদিলের বাড়িটি বিস্ফোরণের সাহায্যে উড়িয়ে দেওয়া হয়। আর গতকাল শুক্রবার আসিফের বাড়িটি?বুলডোজারে ভেঙে ফেলা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলেছে, আদিল মঙ্গলবারের পেহেলগাম হামলার অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়ি অনন্তনাগ জেলায়। আর পুলওয়ামার বাসিন্দা আসিফ হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আরেক খবরে বলা হয়, ধ্বংস করার আগে আসিফ শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় একটি সন্দেহজনক বাক্স পাওয়া যায়। ওই বাক্স থেকে অনেকটা তার বেরিয়েও এসেছিল, ওই তার ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের অংশ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। পরে ঘটনাস্থলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং টিম পৌঁছানোর পর বাক্সটি ঘটনাস্থলেই বিস্ফোরিত হয়। এতে কেউ হতাহত না হলেও আসিফের বাড়ির একাংশ উড়ে যায়।

পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে : বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান। জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। উভয় দেশই পাল্টাপাল্টি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত অন্যতম। পাকিস্তানও পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি এসব পদক্ষেপে সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান তার পানির ন্যায্য হিস্সা নিশ্চিত করতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত যদি পাকিস্তানের পানির প্রবাহ থামাতে কোনো জলাধার বা বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে পাকিস্তান সেই স্থাপনাগুলো পুরো যুদ্ধ শক্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেবে। কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে সম্পূর্ণ জাতীয় শক্তির ব্যবহার কথাটির অর্থ- পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলছেন, যদি ভারত কোনো জলাধার বা বাঁধ তৈরি করে যা পাকিস্তানের পানির অধিকার হরণ করে, তাহলে পাকিস্তান সামরিক শক্তি দিয়ে তা ধ্বংস করবে- এমনকি তা পরমাণু হামলা করে হলেও। আরেকজন বিশ্লেষক আরও স্পষ্ট করে বলেন, যেহেতু পানি আমাদের জাতীয় স্বার্থের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এক মুহূর্ত দেরি না করেই পদক্ষেপ নেবে এবং সেই স্থানে হামলা করবে- যা পাকিস্তানের পানি সরবরাহকে বিপন্ন করে।