
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ও গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ৭ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকার অনিয়ম পেয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্য এসব যন্ত্রপাতি সরবরাহের কার্যাদেশ পায় ইনভেন্ট টেকনোলজিস লিমিটেড। কার্যাদেশ মোতাবেক মালামালগুলো ইউএসএ, ইউকে, জার্মানি ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ইতালি, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ করার কথা ছিল। তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ১৭ জুন। শর্তে বলা হয়েছিল, কার্যাদেশ প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে এসব বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, অপারেশন ম্যানুয়াল ও মেনটেনেন্স ম্যানুয়ালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভান্ডারে তা সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে, কার্যাদেশ পাওয়ার মাত্র সাত দিনের মধ্যে মালামাল বুঝে পাওয়া গেছে মর্মে বিল পরিশোধ করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। বিদেশ থেকে এত অল্প সময়ে মালামাল এনে সরবরাহ করা ‘কোনোভাবে সম্ভব নয়’ বলে উল্লেখ করেছে সরকারের শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের অডিট আপত্তিতে। এ ছাড়া পূর্ব থেকে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে এসব মালামাল কেনার স্পেসিফিকেশন তৈরির বিল পরিশোধ করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আর এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা। জানা গেছে, বিধি মোতাবেক বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য স্পেসিফিকেশন বিভাগীয় সভাপতির মাধ্যমে যাওয়ার কথা থাকলেও তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন মিয়া তার পছন্দের শিক্ষক অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলামকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনিই এসব যন্ত্রপাতি কেনার স্পেসিফিকেশন তৈরি করে দিয়েছিলেন। সাবেক উপাচার্য ও তোফাজ্জল ইসলাম যোগসাজশ করে এই কেনাকাটা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কার্যাদেশের তথ্যমতে, ল্যাবরেটরির জন্য ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সার (ইউএসএ অরিজিন), ২২ লাখ ৫০ হাজার মূল্যের ফ্লোরেসেন্স মাইক্রোস্কোপ (জার্মানি অরিজিন), ৩ লাখ ৮০ হাজার মূল্যের ভিডিও ও ফটোগ্রাফিক সিস্টেমের মাইক্রোস্কোপ (জার্মানি অরিজিন), ১৭ লাখ টাকা মূল্যের বায়োসেফটি ক্যাবিনেট (ইন্দোনেশিয়া অরিজিন), ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ফার্মেন্টার (তাইওয়ান অরিজিন), লামিনার এয়ার ফ্লো ক্যাবিনেটসহ (ইউকে অরিজিন) বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রকল্পের আওতায় কেনা হয়। আর অডিট প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ল্যাবরেটরির জন্য বিদেশি মালামাল আমদানি, মালামালের কেমিক্যাল টেস্ট ও ল্যাবে প্রতিস্থাপন কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে সম্পন্ন দেখানো হয়েছে।
শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর বলছে, যন্ত্রপাতিগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এমন কোনো ইনভয়েস লেটার পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি এসব যন্ত্রপাতির কোনো কেমিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট। পাওয়া যায়নি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বাজারদর যাচাইয়ের কোনো কাগজপত্র। অর্থাৎ এসব যন্ত্রপাতির বাজারদর যাচাই করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের চাহিদাপত্রও পাওয়া যায়নি। বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব মালামাল বুঝে নেওয়া কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি এসব যন্ত্রপাতির কেনার স্পেসিফিকেশনও তৈরি করে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি মালামাল বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলাম, কেনাকাটায় না। টেন্ডারের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল বুঝে নিয়েছি। ইনভয়েস লেটার ও কেমিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রপাতি বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব যাচাই করা আমার দায়িত্ব নয়।’ কোনো অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলেও দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, কার্যাদেশ সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া ইনভেন্ট টেকনোলজি বিভিন্ন মালামালের সোল এজেন্ট। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তাদের কাছে আগে থেকেই থাকে, তাই হয়তো অল্প দিনের মধ্যে সরবরাহ করতে পেরেছে।
সাবেক এ উপাচার্য দাবি করেন, বিভাগ থেকে কেনাকাটার চাহিদা এসেছিল। উপাচার্য হিসেবে অনুমোদন দিয়েছি মাত্র। আমি কোনো কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত নই, তাই অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকারও প্রশ্নই আসে না। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।