
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশাল যুব জনগোষ্ঠীকে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে দেশে যুব জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা কত তা নিয়েই রয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে বিভ্রান্তি। সংজ্ঞার মারপ্যাঁচে একই প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন পরিসংখ্যানেই দেশে যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যায় রয়েছে পার্থক্য। জোড়াতালির পরিসংখ্যানের কারণে যুব জনগোষ্ঠীকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে গ্রহণ করা যাচ্ছে না সঠিক কর্মপরিকল্পনা। ফল হিসেবে দেশের এক কোটির বেশি তরুণ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় দিন পার করছে, যারা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সুযোগ গ্রহণ করলেও অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখতে পারছে না।
জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২২-এ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের যুব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এ ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের যুব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অথচ, দুটি জরিপই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা। অপরদিকে জাতীয় যুবনীতি ২০১৭-এ যুব বলা হয়েছে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের। ফলে দেশে যুবক কারা, তাদের প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি।
জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২২ অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। শুমারির সংজ্ঞা বিবেচনায় নিলে দেশে যুব (১৫-২৪ বছর বয়সি) জনশক্তি ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ, বা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার প্রায়। আবার শ্রমশক্তি জরিপের সংজ্ঞা বিবেচনা করলে, দেশে যুব (১৫-২৯ বছর বয়সি) জনগোষ্ঠী রয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ২৬ ভাগই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কোনো কাজে, বা কোনো প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত নেই। আবার শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, দেশের শ্রম শক্তিতে যুব জনগোষ্ঠী রয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখের মতো, যা মোট শ্রম জনগোষ্ঠীর ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আর মোট যুব শ্রম জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত আছেন ২ কোটি ৪৭ লাখ। পরিসংখ্যানের এই বেহাল দশায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের যুব জনগোষ্ঠীকে নিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। ফলে কোটি বেকার যুবক সময় পার করছে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে, মোবাইলে গেম বা জুয়া খেলে, কেউবা আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকে। সম্প্রতি শ্রম খাত সংস্কারে গঠিত কমিশন প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে পরিসংখ্যানের মারপ্যাঁচে পড়ে অনেকটা নাকানি-চুবানি খায়। নির্ধারিত সময় ১৭ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে তারা প্রতিবেদন জমা দেয় গত ২১ এপ্রিল। প্রতিবেদনে কমিশন জানায়, যুব জনগোষ্ঠী যে কোনো দেশের সম্পদ, দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। তবে, এই যুবদের সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন তথ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কমিশন মনে করে যে মানসম্মত শিক্ষার অভাব, শ্রম বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয়হীনতা, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ঘাটতি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের অভাবে দেশের সম্ভাবনাময় যুবজনগোষ্ঠী দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত হতে পারছে না। এর ফলে দেশ ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কমিশন সরকারি বিভিন্ন দলিলে (যেমন শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২, জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ এবং জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২) যুবকদের সংজ্ঞায় বয়সের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভিন্নতা দূর করে যুবকদের একটি একক সংজ্ঞা (নির্ধারিত বয়স) প্রদান করার সুপারিশ করে।