
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিতর্কিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল চাকরিজীবনে ২০২১ সালেই যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, ইতালি, মোনাকো, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস—এই ৯টি দেশ সফর করেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়া বাকি দেশগুলোর বিভিন্ন শহরে নিজ খরচে সফর করেন পর্যটক হিসেবে। তাঁর চাকরিজীবনের সংশ্লিষ্ট সরকারি নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, এ ছাড়া রাসেল ২০২৩ সালের জুনে এক প্রশিক্ষণের জন্য ভারত সফরে যান।
২০১৭ সালের ২ মে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে সহকারী কমিশনার হিসেবে সরকারি চাকরিজীবন শুরু করেন তিনি। সেখানে কাজ করেন এক সপ্তাহ। এরপর একই পদে যোগ দেন বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। এ ছাড়া তিনি কাজ করেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে।
এসব কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার তালায় ইউএনও পদে যোগ দেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী কালের কণ্ঠকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ছাত্রলীগের কর্মী থাকায় সেই পরিচয় ব্যবহার করে কোটায় চাকরি নেন রাসেল। তার পর থেকে সরকারের কাছে যা চেয়েছেন সব পেয়েছেন।
তিনি ঘুরতে বেশি পছন্দ করেন। বারবার ছুটি নিয়ে সেই খায়েশ তিনি মিটিয়েছেন। সফরের খরচ নিজেই বহন করতেন। এই অর্থ তিনি জোগাড় করতেন তাঁর অবৈধ উপায়ে আয়ের অংশ থেকে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা ভূমি অফিসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন শেখ মো. রাসেল।
এখানে ঘুষের রেট নির্ধারণ করে রেখেছেন তিনি। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সক্রিয় এই কর্মী আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পান। জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ছাড়াও ভূমি অফিসে ইউএনওর আছে একচ্ছত্র আধিপত্য। এখানে ঘুষের রেট নির্ধারণ করে রেখেছেন তিনি। নামজারি, নাম সংশোধনসহ ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানে গরিবের পকেট কাটা হয় এখানে। এই পকেট কেটে নেওয়া অর্থের বড় অংশ রেট অনুযায়ী ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিরাজ হোসেন, বড়বাবু আব্দুল হাই ও নাজির তপন কুমারের হাত ঘুরে চলে যায় ইউএনওর পকেটে। জমির নামজারি করতে হলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপর শুরু হয় ঘুষ বাণিজ্য।
আবেদনের পর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিস থেকে প্রত্যয়ন নিতে হলে দিতে হয় ঘুষ, এরপর সার্ভেয়ারের প্রত্যয়নেও ঘুষ, এমনকি বড়বাবু ও নাজিরের টেবিলে ঘুষের টাকা জমা না হলে এসি ল্যান্ডের টেবিলে ফাইল যায় না। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকেও আলাদাভাবে আসে ঘুষ। তা যায় শেখ মো. রাসেলের কাছে। নগরঘাটা গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নামজারি করতে আট হাজার টাকা দিয়েছি। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আগে এসি ল্যান্ড অফিসে দিতে হতো তিন-চার হাজার টাকা। জানা গেছে, চাকরিজীবনে বিভিন্ন কর্মস্থলে এভাবে বিভিন্ন খাত থেকে অবৈধ আয়ের উৎস তৈরি করে আয় করতেন রাসেল। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর কাছ থেকে জবাব পাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছাড়া এখন কারোর মোবাইল ফোনই ধরেন না।