Image description
♦ কোটি কোটি টাকা হাতানোসহ তথ্য পাচার করতেন মোয়াজ্জেম ♦ চিকিৎসক রদবদলের ফাইল আটকে টাকা নিতেন তুহিন ফারাবী

অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা দুই ব্যক্তিগত সহকারীর নিয়োগ বাতিলের পর সামনে আসছে তাদের নানা অপকর্ম। নামে-বেনামে সম্পদ গড়ে তোলা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাইরের অনেক কাজে নিজেদের ভাগ বসিয়েছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার এমন কাজে অনেকটা বিব্রত হয়েই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ে চাউর হয়েছে ক্ষমতা দেখিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তারা।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই দুই মন্ত্রণালয়ে তাদের অপকর্ম নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। দুই উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারীকে অব্যাহতি নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নানা আলোচনা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য উপদেষ্টারাও তাদের ব্যক্তিগত সহকারীর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছেন বলেও জানা গেছে। ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস নিয়োগ পান মোয়াজ্জেম। এপিএস হয়েই নামেন অর্থ কামানোর মিশনে। অব্যাহতির পর নিয়োগ বদলি কমিশন বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকার অবৈধ অর্থ উপাজর্নের তথ্য সামনে আসছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে নানা আলোচনা। বিদেশে একাধিক বাড়ি কিনেছেন- বিভিন্ন মাধ্যমে এসব নিয়ে আলোচনা চলছে।
 
মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। উপদেষ্টা হওয়ার পর আসিফ মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মোয়াজ্জেমকে সহকারী হিসেবে নিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নানা কথাই শুনছি। কোনো কাজই তার ইশারা ছাড়া হতো না। মোদ্দাকথা টাকা ছাড়া কাজ হতো না সেখানে। গত ২১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে একটি গণমাধ্যমে মোয়াজ্জেম দাবি করেছেন, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে রোজার ঈদের আগে নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই এপিএসের সরকারি চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছিলেন। তবে এপিএস হওয়ার পর কয়েক মাসে শত কোটি টাকার বেশি কীভাবে আয় হলো সেটি নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও তার দুর্নীতি নিয়ে কানাঘুষা করছেন।
 
এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত আদেশের আগ থেকেই উপদেষ্টা দপ্তরের মৌখিক নির্দেশনা পেয়ে গত কয়েক দিন তিনি অফিস করেননি। স্বাস্থ্য খাতের নাটের গুরু বলা হয় এই তুহিন ফারাবীকে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ‘তিনি ছিলেন উপদেষ্টার কূটপরামর্শক। নিজের সুবিধা আদায়ে উপদেষ্টাকে দিয়ে ভুল বুঝিয়ে নানা সুবিধা হাতিয়েছেন। তবে এটি ধরা পড়ার পর তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে গত কয়েক মাসে চিকিৎসক রদবদলে বিপুল অঙ্কের অর্থ কামিয়েছেন। গত বছরের ২ অক্টোবর তুহিন ফারাবীকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায়। তুহিন ফারাবী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মেডিকেল দলের সদস্য। সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মেডিকেল দলের সদস্য হিসেবে তিনজন মন্ত্রণালয়ে ছাত্রদের লিয়াজোঁ করতেন। তাদের মধ্যে থেকে দুজনকে পরবর্তীতে নিয়োগ দেয়। তাদের একজন ডাক্তার ছিলেন। তিনি রাশিয়া চলে গেছেন আরও আগে। শেষ পর্যন্ত এই ফারাবী উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন। তবে তিনি নিজেকে ‘বিশেষ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।
 
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ‘বিশেষ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ নামে ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়েছেন এবং তার হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সেটি উপস্থাপনও করেছিলেন। কিন্তু অর্গানোগ্রামে এমন পদের সুযোগই নেই। বিশেষ শব্দ যোগ করে ভিজিটিং কার্ড তৈরি করাও বেআইনি ছিল। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিগত কয়েক মাসে এমন কোনো ফাইল নেই যেটি থেকে টাকা নেননি। চিকিৎসক বদলিতে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করতেন। সচিবের স্বাক্ষর হয়ে ফাইল উপদেষ্টার কাছে গেলেই যার ফাইল তার কাছে ফোন চলে যেত নেগোশিয়েশন করার জন্য। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা দেখিয়ে উপদেষ্টাকে দিয়ে রেড ক্রিসেন্ট বোর্ডের সদস্যও হয়েছেন তিনি। ফলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থেকে অব্যাহতি পেলেও এখনো রেড ক্রিসেন্ট বোর্ডের সদস্য রয়ে গেছেন। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সেটি নিয়েও তুলেছেন আপত্তি। সংশ্লিষ্টরা এই দুজনের আয়ের তথ্য খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথাও বলেছেন।