Image description

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা হচ্ছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।

ভিডিওতে একটি স্থাপনার মেঝে ও সিঁড়িতে ভাঙা ইট ছাড়ানো এবং আধভাঙা ইটের দেয়াল দেখা যচ্ছে। টুকরো ইটের ওপরে মই ও ড্রিল মেশিন দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর শেষের দিকে কিছু স্থাপনার স্থিরচিত্রে একটি নাম ফলক দেখা যাচ্ছে, যেটিতে লেখা ‘মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন’।

২৮ সেকেন্ডের ভিডিওটি A K Ratan নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত সোমবার (২১ এপ্রিল) রাত ১১টা ৬ মিনিটে পোস্টে করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ ইউনুস সরকারের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কারণ জুলাই এর সাথে এটা নাকি সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়।’ (বানান অপরিবর্তিত)

 

একই দিনে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে Msj David নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে এর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে...বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩২ নাম্বার বাড়ির পর ২য় কলংকিত অধ্যায়। লজ্জিত জাতি হিসেবে এই বাঙালী।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Sheikh Emranul Islam নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও Awami Lover নামে পেজ থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

এসব পোস্টের কমেন্টে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী সত্য মনে করে কমেন্ট করেছেন। Abu Taher Bablu নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

Mosarof Hossain Babu লিখেছে, ‘একটা কি করে সম্ভব হল? ওরা মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু ধ্বংস করে দিবে আর এই দেশের সব দল কি চেয়ে চেয়ে দেখবে? আওয়ামী লীগ ছাড়া যে এই দেশে কেউ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের না তা এবার প্রমাণ হল।’ (বানান অপরিবর্তিত)

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চ করে Focus with Saif নামে একটি ফেসবুক পেজে গত সোমবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে প্রকাশিত ভিডিও পাওয়া যায়। ৩৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওর ২৬ সেকেন্ড থেকে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের সাদৃশ্য রয়েছে।

 

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা হচ্ছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Focus with Saif নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
 
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা হচ্ছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Focus with Saif নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর শুরুতে একজন যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘দর্শক আমি এই মুহূর্তে আছি মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। আমাদের চিরচেনা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মূল অংশের ডিজাইন ভেঙে নতুন করে গড়া হবে। আমি আপনাদের দেখাচ্ছি বর্তমান অবস্থাটা, কেমনে এটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নতুন করে গড়ে তোলার একটা পরিকল্পনার কথা শুনেছি আমি। সরেজমিনে আপনাদের দেখাচ্ছি।’ (বক্তব্য অপরিবর্তিত)

অর্থাৎ, এই ভিডিওতে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। সম্পূর্ণ অংশ থেকে যুবককের বক্তব্য বাদ দিয়ে শুধু মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙার দৃশ্য ছড়ানো হয়েছে।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের ওয়েবসাইটে সেক্টর ভিত্তিক ২০২৪–২৫ সালের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) তালিকার ৯ নম্বরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের আধুনিকীকরণের বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের তথ্য পাওয়া যায়। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের আধুনিকীকরণের সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর। অর্থাৎ এই প্রকল্প অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের ওয়েবসাইট। ছবি: স্কিনশট
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের ওয়েবসাইট। ছবি: স্কিনশট

 

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ আসলেই ভেঙে ফেলা হয়েছে কিনা তা জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস. এম. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলার তথ্যটি মিথ্যা। এটির পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে।’

সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, স্মৃতিসৌধের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে কিছু অংশ ভেঙে ফেলার দৃশ্য দেখিয়ে তথ্যবিকৃতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, এই উদ্যোগ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নেওয়া হয়েছে।