Image description
তিস্তার তীর রক্ষা প্ৰকল্প » বাঁধের ৩০ মিটার দূর থেকে বালু তুলে ভরা হচ্ছে জিও ব্যাগে । নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বোমা মেশিন ব্যবহার করে তোলা হচ্ছে বালু । এলাকাবাসী বলছেন , বাঁধের কাছ থেকে বালু তুলে জলে ফেলা হচ্ছে টাকা ।

নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো ) । জিও ব্যাগে বালু ভরাট করতে নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নিষিদ্ধ বোমা মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে পাউবোর ঠিকাদার । বালু তোলার কারণে পাড়ের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে । তিস্তা ব্যারাজসহ আশপাশের গ্রামের ঘরবাড়ি , ফসলি জমি , বাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ।

স্থানীয়দের অভিযোগ , ভাঙন এলাকায় বালু উত্তোলন করা হলেও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেই পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসনের । অবৈধভাবে বালু তোলায় জলে যাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার এ প্রকল্প পাউবো সূত্রে জানা গেছে , ২০২৪ - ২৫ অর্থবছরে তিস্তা নদীর তীর রক্ষায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান । এর মধ্যে ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর এলাকায় ১০৭০ মিটার তীরে জিও ব্যাগ ফেলার প্রকল্প চলমান । এতে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় । চারটি প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করে পাউবো । তবে কাজ সম্পন্ন করছে সাব ঠিকাদার । এ ছাড়া জরুরি কাজের নামে দরপত্র ছাড়াই ঝুনাগাছ চাপানির ভেণ্ডাবাড়ী ও সোনাখুলি স্পার বাঁধ রক্ষায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলছে ডালিয়া পাউবো ।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব স্পার বাঁধ রক্ষায় দুটি প্রকল্পে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হয় । জিও ব্যাগ ভরাট করা হয়েছিল বাঁধের নিচের বালু তুলে । তবে বছর না ঘুরতেই জিও ব্যাগ ধসে পড়ে নদীতে বিলীন হয়েছে । সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বাইশপুকুর , ভেণ্ডাবাড়ী ও সোনাখুলি স্পার বাঁধের নিচে ভাঙন এলাকা থেকে বালু তুলে ভরা হচ্ছে ব্যাগে । বাঁধ থেকে ৩০ মিটার দূরত্বে নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বোমা মেশিনে ১০ ইঞ্চি পাইপ যুক্ত করে বালু তোলা হচ্ছে । যদিও এমন মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । এমনকি নদীর তীর ভাঙনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বালু তোলা নিষেধ । তবে এরপরও উত্তোলন করা পলিমিশ্রিত চিকন বালু দিয়ে পাশেই ভরা হচ্ছে জিও ব্যাগে । অথচ শুষ্ক ও মোটা বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভরাটের নিয়ম রয়েছে ।

কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা কাজের ঠিকাদারদের অধীনে প্রায় আট দিন ধরে বালু তোলার কাজ করছেন । আর স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার অধিক মুনাফার লোভে কোনো আইন না মেনে নদীর ভাঙন যেখানে বেশি , সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করছে । এর ফলে বস্তাগুলো ( জিও ব্যাগ ) কাজে আসবে না । প্রশাসন তা বন্ধও করে না । এ ক্ষেত্রে পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকার সন্দেহ করেন তাঁরা ।

সোনাখুলি ভাঙনকবলিত এলাকার সামছুল হক বলেন , ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিবছর বড় বড় বালুর বস্তা ( জিও ব্যাগ ) ফেলা হয় নদীতে । নদীর তলদেশে যেখানে ভাঙনটা হয় , সেখানে মেশিন দিয়ে বালু তুলে আবার সেখানেই বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধ তৈরি করা হয় । এই প্রতিরোধব্যবস্থা শুধু পানিতে টাকা ফেলা । একই এলাকার জমির উদ্দিন অভিযোগ করেন , বানের জলে এসব বালুর বস্তা নদীর গভীরে চলে যায় । আর একই প্রক্রিয়ায় বছরের পর বছর কাজ হচ্ছে । সরকারি টাকা পানিতে যায় , অথচ ভাঙন রোধে তেমন কাজে আসে না । বাইশপুকুর এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন , বস্তার মধ্যে মোটা বালু দেওয়ার কথা , কিন্তু ঠিকাদারেরা দিচ্ছেন নদীর চিকন বালু - মাটি । মোটা বালু দিয়ে নদীর মধ্যে বস্তা ফেললে , তা শক্ত ও মজবুত হতো ।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন , নদী এলাকায় বালু উত্তোলন করলে তা হবে আত্মঘাতী । এতে নদীর তলদেশে বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে । সে গর্তে নদীর তীর ধসে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে । এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন , ভাঙন এলাকায় মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই । তিনি বোমা মেশিন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান । জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন , ‘ ইতিমধ্যে ইউএনওকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি । এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম আমরা বরদাশত করব না । কেউ নির্দেশনা না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেব । '