Image description
এক প্রকল্প দেখিয়েই পাঁচ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ । বিপ্লব দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুই মামলা ।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ ২০১৪ সালে ভোলা-১ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পর থেকেই তাঁর পালকপুত্র মইনুল হোসেন বিপ্লবই ছিলেন ভোলার নীতিনির্ধারক। ভোলার রাজনীতিতে হঠাৎই আবির্ভাব ঘটে এই বিপ্লবের। ২০১৫ সাল থেকে ভোলার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন তিনি।

২০১৬ সালে তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তারপর থেকেই শান্ত বিপ্লব বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ভোলার সরকারি দপ্তরগুলো তাঁর কথায় চলত। এসব দপ্তরের নিয়োগ ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীরা তাতে বেজার থাকলেও  দলের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। ২০২২ সালে বিপ্লবকে দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তাতে বিপ্লবের দাপট আরো বাড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তোফায়েল আহমেদের বড় ভাই আলী আশরাফের ছোট ছেলে এই বিপ্লবপুরো নাম মইনুল হোসেন বিপ্লব।

ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর চাচা তোফায়েল আহমেদের পিতৃস্নেহে বড় হন তিনি। তোফায়েল ভাতিজাকে নিজের ছেলের স্বীকৃতি দেন। পড়াশোনা করান অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিপ্লবের বড় ভাই আলী আজম মুকুল ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনে তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক এমপি ও বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাজাহান কামালের মেয়ে ইসরাত জাহান বিন্তিকে বিয়ে করেছিলেন বিপ্লব।

বাবা ও  শ্বশুর মন্ত্রী, বড় ভাই এমপি, তাই সবই ছিল বিপ্লবের হাতের মুঠোয়। তবে সব কিছু থেকে বিপ্লব নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। ভোলায় বহু অপকর্মের হোতা বিপ্লব। তাঁর সঙ্গী তাঁর স্ত্রী বিন্তিও। ভোলার এক প্রবীণ রাজনীতিক কালের কণ্ঠকে গতকাল বলেন, আওয়ামী লীগের গত আমলে তোফায়েলপুত্র বিপ্লবে ডুবল ভোলা। আওয়ামী লীগের বহু নেতা তাঁর হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। তাঁর জন্য ভোলায় অপকর্ম বেশি হয়েছে। 

জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক বিপ্লব ও বিন্তির বিরুদ্ধে গত ১৭ এপ্রিল দুটি মামলা করেছে ভোলা বিশেষ জজ আদালতে। মামলা দুটি করেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশালের সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান। গত রবিবার ভোলা বিশেষ জজ আদালতে দুদক মামলার নথিপত্র দাখিল করেছে। তা থেকে জানা গেছে, ৪১টি দলিলে বিপ্লবের নামে রাজধানীর বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট পাওয়া গেছেএগুলোর মূল্য ১৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা, শেয়ার ও ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ২০ কোটি টাকার বেশি। তার প্রকৃত বৈধ আয় থেকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাদ দিলে ২১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার হিসাব মিললেও, বিপ্লবের মোট সম্পদ ৩৩ কোটি টাকার বেশি। ১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার উৎসবিহীন সম্পদ পাওয়া গেছে তাঁর নামে। একইভাবে তাঁর স্ত্রী বিন্তির নামেও পাওয়া গেছে ৩৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ। দুদক আইন অনুযায়ী, বিপ্লবের বিরুদ্ধে ২৭(১) ধারায় ও তাঁর স্ত্রী বিন্তির বিরুদ্ধে ২৭(২) ধারায় মামলা করা হয়।

এদিকে ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশালের তখনকার সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা স্বাক্ষরিত চিঠিতে ভোলার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের  নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বিপ্লবের মালিকানাধীন সাতটি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়িত ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত সব প্রকল্পের তথ্য চাওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিপ্লবসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ তেল গ্যাস কূপ খনন না করে শুধু প্রকল্প তৈরি করে সরকারি পাঁচ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভোলার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশালের সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান বিপ্লব ও তাঁর স্ত্রী বিন্তির বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি আবেদন করেন। আদালত পরে আবেদন আমলে নিয়ে গত ২১ অক্টোবর এই দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।