
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। দুটি প্রকল্পে সর্বমোট ২ হাজার ৬০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। তবে জমি পেলে আরও দুটি প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। নথিপত্র বলছে, মিরপুরে নেওয়া প্রকল্পের প্রস্তাবনা জাতীয় গৃহায়নের বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়ে মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকালে আগামী জুন মাসের পরই দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করতে চায় সংস্থাটি। এ বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
প্রকল্প হাতে নেওয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হন। এর মধ্যে দেড় হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকেই এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেককে। অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য নিহত হয়েছেন। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব অসহায় মানুষের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সেই বাস্তবতায় এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প প্রথমে মিরপুরে নেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকার মিরপুরের বাইরে রংপুরেও এই ধরনের উদ্যোগ নিতে চায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। নথি বলছে, রংপুর জেলায় সরকারি খাসজমিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সেই জমি জেলা প্রশাসনের কাছে চেয়েছে। এই জমি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কর্মচারীদের পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হবে।
অধিদপ্তরের নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এর আগে ২১ আগস্ট (২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায়) গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহত পরিবারকে মিরপুরের ১৫নং সেকশনে ১০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প থেকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদ ব্যক্তিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা ডিভিশন-১-এর আওতাধীন মিরপুর সেকশন ৯-এ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য স্থায়ী বসবাসের জন্য ১ হাজার ৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের খসড়া প্রাক্কলন প্রস্তুত করেছে। এতে ১৫টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার বর্গফুট। ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। একইভাবে মিরপুর গৃহসংস্থান বিভাগ-২-এর আওতাধীন ১৬নং সেকশনে ১ হাজার ৪০টি ফ্ল্যাট প্রকল্পের খসড়া প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার বর্গফুট। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৮ কোটি ৮২ লাখ ২১ হাজার টাকা।
ঢাকার বাইরে রংপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের জন্যও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে চিঠি চালাচালিও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ পাঠানো একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দিনাজপুর হাউজিং এস্টেটের আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের জায়গায় চারটি ভবন নির্মাণের স্থান লে-আউট নকশায় অনুমোদিত রয়েছে। এর আগে ১০ তলাবিশিষ্ট দুটি ভবনে ৩৬টি করে মোট ৭২টি ফ্ল্যাট এবং ১০টি করে মোট ২০টি গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে বরাদ্দপ্রাপ্তরা বসবাস করছেন। বাকি দুটি ভবনের জায়গা খালি আছে। একইভাবে দুটি ভবনে মোট ৭২টি ফ্ল্যাট ও ১০টি গ্যারেজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য যে, ওই ডিভিশনের অধীন রংপুর জেলায় সরকারি খাসজমি রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য এখানে ফ্ল্যাট নির্মাণের কথা রয়েছে। এই খাসজমি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলে সেখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্যও ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া সম্ভব হবে।
তথ্য বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে যাচাই কমিটি নোটিশ জারি করে সভা ডেকেছে। মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় এই সভা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। সার্বিক বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির কালবেলাকে বলেন, কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুতই পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকার মিরপুরে দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা রয়েছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) এস এম সোহরাব হোসেন কালবেলাকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহত পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য বিনামূল্যে ফ্ল্যাট প্রদানের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথমে শুধু ঢাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও পর্যায়ক্রমে সরকারের খাসজমিতে সারা দেশে এই প্রকল্প নেওয়া হবে। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রস্তাবিত ডিপিপি তৈরি করে একনেক সভায় পাঠানো হবে।