Image description

সংস্কার ও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়কে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে মেরুকরণ দ্রুত স্পষ্ট হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে সর্বদলীয় ঐকমত্য গঠন করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি অন্যান্য ডান, বাম ও ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করতে চায় দলটি। এর অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার সিপিবি, বাসদসহ বাম ধারার দলগুলোর এবং গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে চাচক্রে মিলিত হন বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা। বাম ধারার দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির এই চাচক্র বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

এদিকে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠক হয়।

এ পরিস্থিতিতে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে দেশে একটি অস্থিরতা চলছে। কিছু নির্ধারিত বিষয় অনির্ধারিত ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তা সমাধানে দরকার রাজনৈতিক ঐক্য। এর মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব পাব। গতকাল বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্মরণে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গত ১৩ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের দেখা করার ঘটনাটিও ব্যাপক আলোচিত। সে সময় খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন তাঁর বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর জামায়াত আমিরের সঙ্গে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এরপর দেশে ফিরে গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির বলেন, নির্বাচন রমজানের আগেই শেষ করতে হবে। জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, বিভিন্ন ধরনের ঝড়ঝাপটা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। তখন নির্বাচন অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। পরদিন ১৭ এপ্রিল মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেন, তিনটি ম্যান্ডেটরি দাবি পূরণ হলেই আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে।

গতকাল জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়। আমাদের দলপ্রধানও জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার সম্পন্ন হলে আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে। জামায়াতের এই অবস্থানকেও অনেকে নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ হিসেবে মূল্যায়ন করেন।

বিএনপির নতুন উদ্যোগ : গত শনিবার বিএনপির বৈঠক হয় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক ১২ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে। ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টি বাংলাদেশের লায়ন মো. ফারুক রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সবে মাত্র আমাদের একটি জোটের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যাঁরাই রাজপথে ছিলেন, সবার সঙ্গে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের করণীয় কী, তা ঠিক করতে এই বৈঠক। আমরা মূলত সরকারের কাছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। নির্বাচনের জন্য যা যা প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা বলেছি, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার করতে হবে। এ ছাড়া যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিচার সম্পন্ন করার কথাও বলেছি।

১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। তার আগে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বিগত সরকারের অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। প্রশাসনে যাঁরা ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোকে মর্যাদার মাধ্যমে এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।

গতকাল বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বনানীর সেরিনা হোটেলে বিএনপি নেতারা বাম নেতাদের সঙ্গে চাচক্রে মিলিত হন। এ সময় বাম নেতাদের মধ্যে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশিদ ফিরোজ, মিহির ঘোষ, রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে। এ ছাড়া তিনি বলেন, এই সরকারে দুই ছাত্র উপদেষ্টা আছেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হবে। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এনসিপি ও খেলাফত মজলিসের বৈঠক : এদিকে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে আট দফা দাবিতে উভয় দল একমত হয়েছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—’২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের মর্যাদার সাংবিধানিক স্বীকৃতি; আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন স্থগিত ও রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা; জুলাই গণ- অভ্যুত্থানকালে গণহত্যা, শাপলা চত্বরে হত্যা, পিলখানায় বিডিআর হত্যাসহ বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার; মৌলিক সংস্কারের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ মাহদি।

তবে এই তৎপরতাকে এখনো রাজনৈতিক মেরুকরণ বলতে চাচ্ছেন না বিএনপি নেতারা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা রাজনৈতিক মেরুকরণ নয়। তবে দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে যাঁরা আন্দোলনমুখী ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে নিজেদের আপডেট করা হচ্ছে। কথাবার্তা বলা, যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কমবেশি সব রাজনৈতিক দলই একটি ঐকমত্যে রয়েছে ভালো একটি নির্বাচন করা। সংস্কার যত দূর সম্ভব তা করে নির্বাচনে যাওয়া। কিন্তু সরকারের সমর্থক একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী সময় নিয়ে নিজেদের সংগঠনটাকে সংগঠিত করে নির্বাচন করতে চায়। তারা সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন প্রশ্নে কালক্ষেপণ করতে চায়।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়তো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। হয়তো তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বৈঠক করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ ফোরামে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, রাজনীতিতে মতবিনিময় ও আলোচনার সংস্কৃতি একটি সৌন্দর্যপূর্ণ দিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ-আলোচনা হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক এবং কাঙ্ক্ষিত। আমরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই মূল্যায়ন করি। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে অন্যান্য ইসলামী দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছে। আমাদের আমির ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। আমাদের লক্ষ্য ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলোর ভোট যেন একটি বাক্সে একত্র হয়। আমরা সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছি, পরিকল্পনাও সেই অনুযায়ী সাজানো হচ্ছে। নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করা হলে পুরো বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বিএনপির নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের আলোচনার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছুদিন আগে যেসব দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে এটা বিএনপির সাধারণ ও স্বাভাবিক কার্যক্রমের মতো। এ ছাড়া বিএনপির তো নির্বাচনকেন্দ্রিক একটা রাজনীতি রয়েছে। ওইটার সঙ্গে মিলিয়ে তারা এখন নতুন করে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করবে বা মিত্র বানানোর চেষ্টা করবে। এটা তাদের দিক থেকে খুব স্বাভাবিক। আমরা আমাদের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাব।

বাম দলগুলোর অবস্থান : এদিকে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আগে থেকেই দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার। তাঁরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগে অন্ধকারের শক্তি যেকোনো সময় মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই আর দেরি না করে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করাই সরকারের এখনকার জরুরি কর্তব্য। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার কথাও ভাবছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে সঙ্গে পেতে চান। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বাম নেতারা। এ বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার কালক্ষেপণ করছে বলে মনে করছেন তারা।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকজন নেতা জানান, দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখতে বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সোচ্চার হতে চান তাঁরা। যুগপৎ ধারার আন্দোলন শুরুর বিষয়ে তাঁরা অনেক দিন ধরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে তাঁরা জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।

এই জোটে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) ছয়টি দল রয়েছে। সূত্র জানায়, ঈদের কয়েক দিন আগে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের রাজধানীর বেইলি রোডের বাসায় বামপন্থী নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে সব গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর জোট গঠনের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া বাম জোট নেতারা ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, ঐক্য ন্যাপসহ কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সঙ্গেও কথা বলেছেন বাম জোটের নেতারা।

গতকালের চাচক্র সম্পর্কে বক্তব্য : গতকালের চাচক্রে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না। আমাদের চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। সেখানে চলমান রাজনীতি, নির্বাচন ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনীতিতে নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য তো আছেই। আমরা সবাই চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। সরকার চাইলে এর আগেও নির্বাচন সম্ভব। এ বিষয়ে সবাই একমত। সেখানে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামা দরকার এমন মতামতও এসেছে। তারা জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্বাচন ইস্যুতে আন্দোলনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক বলেন, চলমান নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানোর একটা প্রক্রিয়া চলছে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের দাবি, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন জুলাই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করবে। আর জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের কাজও চলছে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে কোনো বাধা নেই।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য আবারও আন্দোলনে নামতে হবে, এটা আমরা ভাবতে চাই না। কারণ গত ১৬ বছর এই দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমরা আশা করি, সরকারের বোধোদয় হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।