
আচরণবিধি সংশোধনে ইসি
- পথ ও জনসভায় যান্ত্রিক যান বা মশাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
- পোস্টার ব্যবহার তুলে ব্যানারকে যুক্ত করা হচ্ছে
- ব্যানারে শুধু প্রার্থী ও দলীয় প্রধানের ছবি থাকবে
- প্রচারণায় উপদেষ্টারা অংশ নিতে পারবেন না
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় পরিবর্তন আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিধিমালা সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী মিছিলের ওপর থেকে বাধা তুলে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই সাথে প্রার্থীকে জনসভা করতে হলে ৭২ ঘণ্টা আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে বলে বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রচারের জন্য জনসভা, পথসভার কথা বলা হলেও এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন ব্যবহার বা মশাল ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন করতে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি কমিশনের অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত হবে বলে ইসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সব ধরনের মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রস্তাবিত বিধিমালায় তা উল্লেখ করা হয়নি। প্রচারের জন্য জনসভা, পথসভার কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কোনো যন্ত্রচালিত যানবাহন ব্যবহার বা মশাল ব্যবহার করা যাবে না। জনসভার জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে নিতে হবে পুলিশের অনুমিত লাগবে। আর ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। পোস্টারের ব্যবহার তুলে দিয়ে ব্যানারে প্রচার চালানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে খসড়ায়। এ ক্ষেত্রে কাপড়ের তৈরি সাদা কালো ব্যানার টানানো যাবে, যেখানে প্রার্থী ও দলীয় প্রধান ব্যতীত কারো ছবি ব্যবহার করা যাবে না।
অনলাইনে প্রচার ও জনসংযোগ : জানা গেছে, প্রথবারের মতো অনলাইনে প্রচারের জন্য আইনি কাঠামো আনছে কমিশন। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে সব ধরনের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনসংযোগ করার পাশাপাশি অনলাইনে প্রতীক বরাদ্দের আগেও প্রার্থী ও তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভিডিও কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা বিভিন্ন প্রকার প্রচার চালাতে পারবেন। এ ব্যাপারে সর্বশেষ সময়সীমা হবে ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত। এ জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোন মাধ্যমে প্রচার চালাবেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য ও কবে থেকে প্রচার চালাবেন সে তথ্যও দিতে হবে। পাশাপাশি অনলাইনে প্রচারের ব্যয়ের হিসাবও প্রতি সাত দিন পরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।
মাইকে প্রচারের সময় : নির্বাচনী প্রচারে মাইকের ব্যবহার তথা শব্দদূষণ কমাতে পরিবেশ আইন প্রতিপালনের উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়ার কথা ভাবছে। আগে যা রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল। মাইকের শব্দ অবশ্যই ৬০ ডেসিবলের মধ্যে রাখতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বিধিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ব্যানারে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। আগে এ নিয়ে ইসির নির্দেশনা থাকলেও বিধিমালায় কোনো বিধান ছিল না।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। যারা কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে কেবল ভোট দিতে যেতে পারবেন। সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় ব্যানার লিফলেট সাঁটিয়ে দেয়া যাবে না। টানিয়ে প্রচার করতে হবে। আগের মতোই নিষিদ্ধ থাকবে দেয়াল লিখন।
নির্বাচন পূর্ব সময় : প্রস্তাবিত বিধিমালায় ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’-এর সংজ্ঞাতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন পূর্ব সময় বলছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করার সময় পর্যন্ত বোঝায়। কিন্তু এখন পুরো সময়টিতে তিনটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। নির্বাচন পূর্ব সময় বলতে জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হতে সংসদের সাধারণ নির্বাচন কিংবা কোনো শূন্য আসনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশন কর্তৃক তফসিল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত বোঝানো হচ্ছে। আর নির্বাচনকালীন সময় বলতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হচ্ছে। আর নির্বাচন পরবর্তী সময় বলতে গেজেট আকারে ফল প্রকাশের পরবর্তী ৪৫ দিন পর্যন্ত বোঝানো হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন ইত্যাদি নিষিদ্ধ না হলেও নির্বাচনকালীন নিষিদ্ধ থাকবে। ভোটারকে ভোটার স্লিপ সরবরাহ করতে কোনো বাধা না থাকলেও প্রার্থীর নাম, ছবি ও প্রতীক ব্যতীত অন্য কিছু উল্লেখ করা যাবে না। উল্লেখ থাকতে হবে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, সংখ্যা ও তারিখ। গেট, তোরণ নির্মাণের ক্ষেত্রে আগের মতো নিষেধাজ্ঞা থাকছে। জীবন্ত প্রাণী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিধানও বহাল থাকছে।
প্রার্থী ও ব্যক্তির শাস্তি এবং দণ্ড : নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য ব্যক্তি বিধি লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান থাকছে। কোনো দল কোনো বিধান ভাঙলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আবার অনলাইন প্রচারের বিধান ভাঙলে ডিজিটাল অথবা সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি হবে। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী ও দলকে বিধিমালা মেনে চলার প্রত্যয়ন ইসির কাছে জমা দিতে হবে। একই সাথে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে শাস্তি মেনে নেয়ার অঙ্গীকারও করতে হবে।
নির্বাচনী আচরণ বিধি সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো: আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণ বিধির খসড়া করার জন্য বসেছিলাম। প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত করে কমিশনে প্লেস করব। এরপর কমিশন চূড়ান্ত করবে। সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করব। আশা করি চমৎকার আচরণবিধি হবে।