
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মালিকানায় থাকা এক প্লটের ২৮ একর জমি মিলেমিশে দখলে রেখেছে ৩৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান । এদিকে বিমানবন্দরের মালিকানাধীন তিনটি ক্যানটিনের ভাড়া পরিশোধ না করে ১৭-১৮ বছর দখলে রেখেছে একটি মহল । তা ছাড়া বিজয়নগর আবাসিক এলাকায় বিমানবন্দরেরই সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ টি দোকান । এসব দোকান থেকে আসা আয় মসজিদের নামে খরচ করা হচ্ছে বলে দাবি করছে একটি পক্ষ । শুধু এসব জমিতে নয় , বিমানবন্দরের সরকারি আরও জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত স্কুল । বিজয়নগর এলাকায় বিমানবন্দরের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি সরকারি প্লট দখলে নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন কয়েক ব্যক্তি । এসব দখলের সঙ্গে বিমানবন্দরের এস্টেট ( ভূসম্পত্তি ) শাখার কর্মচারীদের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে । এ অবস্থায় স্থানীয় এক ব্যক্তির মন্তব্য , চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সম্পত্তিযেন গনিমতের মাল ! যে যার মতো এর সরকারি জায়গা দখল করে নিচ্ছে । কিন্তু দেখার কেউ নেই । বিমানবন্দরের জায়গায় মসজিদের নামে মার্কেট নির্মাণ করার প্রসঙ্গে ‘ মসজিদে আলে ইবনে আবি তালেব’- এর পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো . আব্দুস সাত্তার বলেন , ‘ আমরা বিমানবন্দরের জায়গায় মসজিদে আলে ইবনে আবি তালেবের জন্য ১৭ টি , মাদ্রাসার জন্য ১০ টি , মুন্সী সর্দার জামে মসজিদের জন্য ১৪ টি দোকান নির্মাণ করেছি । এগুলোর আয় মসজিদ , মাদ্রাসার নামে জমা হয় ।'
তবে সরকারি জায়গায় দোকান নির্মাণের অনুমতি না থাকার কথা স্বীকার করেন আব্দুস সাত্তার । বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট লোকজনের বিবরণ অনুযায়ী , বিমানবন্দরে মালিকানাধীন বিমানবন্দরের সামনের তিনটি ক্যানটিন পরিচালনা করছে বিমান কর্মচারীদের একটি পক্ষ । কিন্তু বিমানবন্দরকে কোনো ধরনের ভাড়া দিচ্ছে না । বিমানবন্দরের নিরবচ্ছিন্ন ( অ্যাসেনশিয়াল , নন - অ্যাসেনশিয়াল ) বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও ন্যূনতম বিল পরিশোধ করছে না । ১৬ বছর ধরে তারাই এভাবেই চালাচ্ছে তিনটি ক্যানটিন । এসব ক্যানটিনের সম্প্রসারিত অংশে চলছে বিভিন্ন ব্যবসা । সরেজমিনে দেখা যায় , বিমান বন্দরের ক্যানটিনগুলো টিন দিয়ে এবং সিমেন্টের স্ল্যাব বসিয়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে । বরাদ্দের বাইরে আরও দোকান বসানো হয়েছে । চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় ( জেএল নং ২৫ , বিএস ) চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামে এক প্লটে ২৮ একর সম্পত্তি রয়েছে । এসব সম্পত্তি দুটি প্রভাবশালী শিল্প গ্রুপসহ মিলেমিশে দখল করে নিয়েছে ৩৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান । এর মধ্যে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড ( এসএপিএল ) ১২ একর এবং কনফিডেন্স সিমেন্ট ২ দশমিক ৭৩ একর জমি দখলে নেয় । এ ছাড়া স্থানীয় আরও ৩২ ব্যক্তি অবশিষ্ট জমি দখলে নেন । এক - দুই বছর নয় , সরকারি এই জায়গা ১৬ বছর ধরে দখলে রেখেছে এসএপিএলের কনটেইনার টার্মিনাল । নগরের পতেঙ্গা নাজিরপাড়া ( চড়ি হলদা ) এলাকায় কনটেইনার টার্মিনালটির অবস্থান । অবৈধভাবে দখলে রাখা জায়গাটি ছেড়ে দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কয়েক দফা নোটিশ দিয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ( বেবিচক ) । কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি । ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জায়গাটি পুনরুদ্ধারে আবার তোড়জোড় শুরু করে ।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই বেবিচকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডকে একটি উচ্ছেদ নোটিশ দেওয়া হয় । নোটিশে সাত দিনের মধ্যে সেখানে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয় । নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহাম্মেদ জামিল নোটিশটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন । ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পক্ষে নোটিশ গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ( অপারেশন ) ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার । একইভাবে বিমানবন্দরের দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই বেবিচকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে কনফিডেন্স সিমেন্ট কর্তৃপক্ষকেও নোটিশ দেওয়া হয় । নোটিশে সাত দিনের মধ্যে সেখানে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয় । কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি এখনো বিমানবন্দরের দখল করা জমি ছেড়ে দেয়নি । এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি । খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি । এসএপিএলের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান । ফোর্বস সাময়িকীর ২০২৪ সালের সিঙ্গাপুরের ৫০ ধনীর তালিকার তিনি ৪৩ তম । আজিজ খান সে দেশেই থাকেন বলে জানা যায় । তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল ( অব . ) মুহাম্মদ ফারুক খানের ভাই । জানতে চাইলে এসএপিএলের পরিচালক ( অপারেশন ) ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন , প্রতিষ্ঠানের কেনা সম্পত্তির ওপর কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে । তিনি দাবি করেন , সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড বিমানবন্দরের কোনো জায়গা দখল করেনি । অবৈধ দখলদার হিসেবে বেবিচক থেকে দেওয়া নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন , এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান । এভাবেই বিমানবন্দরের বিজয়নগর আবাসিক এলাকায় সরকারি জায়গায় দুটি মসজিদের নাম দিয়ে প্রায় ৮০ টি দোকানের মার্কেট নির্মাণ করেছে সংশ্লিষ্ট দখলদারেরা । কেজি স্কুলের নামেও বিজয়নগরে বিমানবন্দরের মালিকানাধীন সরকারি জায়গা দখল হয়েছে । বিমানবন্দরের ভূসম্পত্তি শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক মো . হাবিব উল্যা খান দখলদারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । অবশ্য মো . হাবিব উল্যা খান তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন । এ প্রসঙ্গে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন , ' বিজয়নগরে কিছু অবৈধ দখলদার রয়েছে ; তাদের ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি । সামিটসহ ৩৪ ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠানের দখল থেকে ২৮ একর জমি উদ্ধারের ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি । সব জায়গা উদ্ধারে কাজ চলছে । ”