Image description
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় । বিদ্যালয়ের জমি রেকর্ডভুক্ত রয়েছে ব্যক্তি , অন্য মন্ত্রণালয়ের নামে বা খাস । জমির রেকর্ডভুক্ত না থাকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি ঢাকা বিভাগে । রেকর্ড না করা জমি একসময় বেহাত হওয়ার আশঙ্কা কর্মকর্তাদের । সারা দেশের এমন জমি দ্রুত রেকর্ডভুক্তির নির্দেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ।

রাজধানীর গেন্ডারিয়ার শিশুরক্ষা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে । বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড না থাকায় ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর মামলা চলেছে । কিছুদিন আগে মামলার রায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুকূলে এলেও জমিটি এখনো বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে বাংলাদেশ সার্ভের ( বিএস ) রেকর্ডভুক্ত হয়নি । মিরপুরের বনফুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ । ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই জমিটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের নামে রেকর্ডভুক্ত । এই জমির মালিকানাও বিদ্যালয়ের নয় । শুধু এই দুটি বিদ্যালয় নয় , সারা দেশে প্রায় ১২ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি । এসব বিদ্যালয়ের জমির কোনোটি বিএস রেকর্ডে ব্যক্তির নামে , কোনোটি খাস , আবার কোনোটি অন্য মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ( ডিপিই ) থেকে জানা যায় , সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অথবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নামে বিএস রেকর্ডভুক্ত করার বিধান রয়েছে । জানতে চাইলে গত ২৮ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা . বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন , সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে বেশকিছু দিন আগেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । বেশির ভাগ জমি রেকর্ডভুক্তও হয়েছে । কিছু জমি এখনো রেকর্ডভুক্ত করা সম্ভব হয়নি । সব বিদ্যালয়ের জমি রেকর্ডভুক্ত করার উদ্যোগ অব্যাহত আছে ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন , যেসব বিদ্যালয়ের জমি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি , সেসব জমিতে আইনত সরকার বা ওই কর্তৃপক্ষের মালিকানা নেই । এসব জমি অতিদ্রুত রেকর্ডভুক্ত করা প্রয়োজন । তা না হলে এসব জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ( ২০২২-২৩ ) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী , সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে । এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন । শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন । এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন এবং নারী শিক্ষক ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন । প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত

২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য বলছে , সারা দেশের ১১ হাজার ৮৮১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি এখনো বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি । এমন বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে , মোট ৪ হাজার ৭৭০ টি । এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে , ২৬৮ টি । এ ছাড়া বরিশাল বিভাগের ১ হাজার ২৫৯ টি , রাজশাহী বিভাগের ৫৮২ টি , রংপুর বিভাগের ৮৪৯ টি , ময়মনসিংহ বিভাগের ১ হাজার ৪৪৫ টি , চট্টগ্রাম বিভাগের ২ হাজার ৩৬৯ টি , সিলেট বিভাগের ৩৩৯ টি বিদ্যালয়ের জমি এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি । বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ডভুক্ত করা না হলে এসব জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ( এএলআরডি ) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ।

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন , একটি জমির রেকর্ড দেখে মালিকানা নিশ্চিত হওয়া যায় । কোনো জমি যদি নিয়ম অনুযায়ী রেকর্ডভুক্ত না হয় , তাহলে ওই জমির ওপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মালিকানা থাকে না । নিয়ম অনুযায়ী কোনো জমি রেকর্ডভুক্ত না হলে তা ‘পরের’ জমিতে ১২ হাজার স্কুল বেহাত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে । তাই বিদ্যালয়ের জমিগুলো দ্রুত বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানায় , সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোর রেকর্ডের বাইরে থাকা জমি রেকর্ডভুক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । চলতি বছরের ১৮ মার্চ এ বিষয়ে অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে । অফিস আদেশে বিদ্যালয়ের রেকর্ড না করা জমির রেকর্ড সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ওই অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ( পলিসি অ্যান্ড অপারেশন বিভাগ ) মো . রাইহুল করিম । প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন , রেকর্ড না হওয়া জমির বিদ্যালয়ের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে । প্রতি মাসিক সভায় এ বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে । গেন্ডারিয়ার শিশুরক্ষা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি সম্প্রতি রেকর্ডভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসরীন আক্তার । তিনি বলেন , মামলার জটিলতার কারণে এত দিন জমি রেকর্ডভুক্ত করা সম্ভব হয়নি । মিরপুরের বনফুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোহিনূর আক্তার বলেন , প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর জমিটি বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।