
বিসিএসের জট খুলছে না। সর্বশেষ পরিস্থিতি হলো—চার বিসিএসের জটে আটকা পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। একটি বিসিএস শেষ হতেই তিন থেকে চার বছর সময় লাগছে। চাকরিপ্রার্থীরা তাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এমনকি একই প্রার্থীকে একাধিক বিসিএসে অংশ নিতে হচ্ছে। বহু প্রার্থী অন্য চাকরির পরীক্ষায় মনোযোগী হতে পারছেন না।
পিএসসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ৪৪, ৪৫, ৪৬ ও ৪৭তম বিসিএস প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই ডাক্তার নিয়োগের জন্য ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা রয়েছে। চলছে ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা তৃতীয় পরীক্ষক দেখছেন। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ মে থেকে শুরুর কথা। ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৭ জুন।
কাজের চাপ বেশি উল্লেখ করে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এত এত জট, সেটা খোলা কঠিন। তবে আমরা প্রত্যেক বিসিএসের জন্য পৃথক রোডম্যাপ করেছি। কম সময়ে প্রত্যেকটি বিসিএস শেষ করতে কিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। চেষ্টা করছি দ্রুত সম্ভব ভাইভা শেষ করার। আমাদের প্রত্যেক সদস্য তাঁর নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত কাজ করছেন। আশা করছি, আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে বিসিএসের জট অনেকটাই কমে আসবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান পদ্ধতিতে একটি বিসিএসের খাতা দেখতে ছয় মাস এমনকি এর চেয়েও বেশি সময় লাগছে। এর বাইরে পরীক্ষার নানা প্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষা ও খাতা দেখা শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগে। একটি খাতা তিনজন পরীক্ষকের কাছে যায়। দিনে মাত্র ১৮০ জন পরীক্ষার্থীর ভাইভা নেওয়া সম্ভব হয়। শুক্র-শনিবার বন্ধ থাকে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইভা শেষ করতেও দীর্ঘ সময় লাগে। এতে বিসিএসে জট লেগে যাচ্ছে। পাওয়া তথ্য অনুসারে, এরই মধ্যে ৪৭তম বিসিএস থেকে ভাইভার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০-তে আনা হয়েছে। আগামীতে শনিবারও ভাইভা নেওয়া হবে। ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনো ইন্টেলেকচুয়াল পার্ট রাখা যায় কি না তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
জানা গেছে, ৪৫তম বিসিএসের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের খাতা পরীক্ষামূলকভাবে পিএসসিতে বসেই দেখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষক নির্দিষ্ট একটি প্রশ্নের উত্তর দেখেছেন। এতে খুব কম সময়ে এই দুই বিষয়ের খাতা দেখা শেষ হয়। আগামীতে পিএসসি কার্যালয়ে বসেই সব বিষয়ের খাতা দেখারও পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা যায়, ৪৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১১ হাজার ৭৩২ জন। তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ২৭ মে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। এতে মোট দুই লাখ ৭৬ হাজার ৭৬০ জন প্রার্থী অংশ নেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৭০৮ জন পাস করেন।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। গত বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। লিখিত পরীক্ষা এ বছরের ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই বিসিএসের খাতা বর্তমানে তৃতীয় পরীক্ষক দেখছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএসসির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, তৃতীয় পরীক্ষকের তালিকা করাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষক খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এসব খাতা দেখার কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। তবে কবেনাগাদ শেষ হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। গত বছরের ৯ মে এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলে ১০ হাজার ৬৩৮ প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। কিন্তু গত সরকারের পতনের পর সম্ভাব্য বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এরই মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে আরো ১০ হাজার ৭৫৯ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আগের ও বর্তমানের মিলে মোট ২১ হাজার ৩৯৭ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছেন। আগামী ৮ মে থেকে তাঁদের লিখিত পরীক্ষা শুরুর কথা।
৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। তবে সময় বাড়িয়ে এই বিসিএসে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার এবং ২০১টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তাকিন আহমেদ আশিক বলেন, ‘৪৪তম বিসিএসের ভাইভা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর। ৬ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও অর্ধেক প্রার্থীর ভাইভা শেষ হয়নি। যে গতিতে পিএসসি এগোচ্ছে, তাতে আরো অনেক সময় লাগবে ভাইভা শেষ করতে। এর মধ্যে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা রয়েছে। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রার্থী ৪৬-এর লিখিত দেবেন। তাঁরা মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন, না কি লিখিত পরীক্ষার? ফলে সব মিলিয়ে বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’