Image description
♦ ১০ স্কুলের একটিতেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ ♦ ২৭২ কোটি টাকা খরচ শেষ

ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। মহামারি করোনাভাইরাস বিবেচনায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় আরও এক বছর বৃদ্ধি করে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর প্রথম সংশোধিত এ প্রকল্পে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় আরও আড়াই বছর। সেই হিসেবে তিন বছরের প্রকল্প গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাড়ে সাত বছর পার করেছে। কিন্তু এরপরও তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সম্প্রতি এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরও আড়াই বছর। আগামী ২০২৭ সালে জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। সব মিলিয়ে তিন বছরের জন্য শুরু হওয়া প্রকল্প ঠেকল ১০ বছরে।

বছরের পর বছর মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ তিন গুণের বেশি করা হলেও এখন পর্যন্ত একটি স্কুলেরও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। কোনো কোনো স্কুলে হয়নি ভূমি অধিগ্রহণও। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমপঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ২৭২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যা প্রথম সংশোধিত ডিপিপির বিপরীতে আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্পের ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজাদ খান এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিনটি স্কুলে নির্মাণকাজ শেষ দিকে রয়েছে। জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতার কারণে বড় সময় পার হওয়ায় আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। তবে শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও প্রকল্প পরিচালনায় অদক্ষতার কারণেও কালক্ষেপণ হচ্ছে এ প্রকল্পে। জানা গেছে, ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যয়ে ধরা হয়েছে ৮০৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সুবিধা সম্প্রসারণ, মোকাবিলায় ছাত্রছাত্রীদের পারদর্শিতা অর্জনের লক্ষ্যে অবকাঠামো শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, মানসম্মত শিক্ষার চাহিদা পূরণ, শিক্ষার গুণগত এবং পরিমাণগত মান উন্নয়নে ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ তলা করে একটি একাডেমিক ভবন, একটি শহীদ মিনার, একটি জিমনেসিয়ামসহ গার্ডিয়ান শেড নির্মাণ করার কথাও বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রাচীর ও গেট নির্মাণও করা হবে এর অধীনে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমপঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ২৭২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যা প্রথম সংশোধিত ডিপিপির বিপরীতে আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় আর্থিক অগ্রগতির হারও হতাশাজনক। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর সাড়ে সাত বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একটি স্কুলেরও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি প্রকল্প কর্মকর্তারা। তবে ছয়টি স্কুলের ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে সেগুলোতে নির্মাণকাজ চলছে বলে জানা গেছে। বাকিগুলোর এখনো ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়নি। তাই শুরু করা যায়নি নির্মাণকাজও। ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক মীর জাহিদা নাজনীন বলেন, একটি স্কুলে নবম তলার ছাদ ঢালাই কাজ চলছে। দুটি স্কুলে অষ্টম তলার ছাদ ঢালাই কাজ চলছে। আগামী বছর এই তিন স্কুলে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের আশপাশে প্রকল্প সাইট হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ-কেন্দ্রিক জটিলতা বেশি হচ্ছে। জমির সম্ভাব্যতা যাচাইয়েই বড় একটি সময় পার হয়ে যায়। এ ছাড়া মামলাসংক্রান্ত জটিলতাও রয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পে দফায় দফায় সাইট পরিবর্তন করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা লক্ষ করি অবকাঠামোগত বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয় কিন্তু তারপর সেগুলোতে বড় দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ করা যায়। এমনটি হওয়া অনাকাক্সিক্ষত। প্রকল্পের খরচ হলেও আশানুরূপ অগ্রগতি আমরা দেখতে পাই না। এর সঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তার অদক্ষতা রয়েছে বলে মনে করি। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে দক্ষতা থাকা দরকার সেটি অনেকের মধ্যে না থাকার কারণেও বিলম্বিত হয় এসব প্রকল্প কাজ।