
ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটি মিলেছে চাকরিজীবীদের। এটি শেষ হতে না হতেই আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। তাই এবার ঈদ-পরবর্তী পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের মেলা বসবে। এজন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো সেজেছে নতুন রূপে। হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট সবখানেই চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা ও প্রস্তুতি। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে তথ্যকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরা। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনের সুযোগে ব্যবসায়ীরা যাতে ‘গলাকাটা’ ব্যবসা না করে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।
পর্যটক বরণে প্রস্তুত কেন্দ্রগুলো

ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটি মিলেছে চাকরিজীবীদের। এটি শেষ হতে না হতেই আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। তাই এবার ঈদ-পরবর্তী পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের মেলা বসবে। এজন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো সেজেছে নতুন রূপে। হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট সবখানেই চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা ও প্রস্তুতি। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে তথ্যকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরা। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনের সুযোগে ব্যবসায়ীরা যাতে ‘গলাকাটা’ ব্যবসা না করে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।
কক্সবাজার : হোটেল-মোটেল মালিকরা ধারণা করছেন, এবার ঈদের ছুটিতে অন্তত ১২-১৪ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে কক্সবাজারে। কক্সবাজার চেম্বারের দেওয়া তথ্যমতে, ঈদের ছুটিতে হোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটনসংশ্লিষ্ট ১৩টি খাতে অন্তত ৯০০-১০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।
সৈকতের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটক বরণে প্রস্তুতি নিচ্ছেন হোটেলমালিকরা। রমজানে অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁর সংস্কার করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন দেড় লাখের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সমুদ্রসৈকতে প্যাট্রোল টিমের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পর্যটক বরণে প্রস্তুত করা হয়েছে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি ‘সাগরকন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটাকে। বাহারি সাজে সাজানো হচ্ছে আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোকে। সৈকতের ছাতা-বেঞ্চে লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যকদের। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং শুরু হয়ে গেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটকদের আগমন ঘটবে। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফের আগের মতো প্রাণ খুঁজে পাবে কুয়াকাটার সৈকত, হাসি ফুটবে সব ব্যবসায়ীদের মুখে, এমটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
একাধিক হোটেল-মোটেল মালিরা জানান, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে ফোনে কিংবা অনলাইনে আগাম রুম বুকিং হচ্ছে। তারা আশা করেন, বাকি দিনগুলোতে পুরোপুরি বুকিং পাবে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু জানান, ঈদের ছুটিতে এবার পর্যটকদের ব্যাপক চাপ থাকবে। তাই আগেভাগেই হোটেল-মোটেলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ সার্বিক কাজগুলো সেরে নিয়েছেন মালিকরা। এ ছাড়া সৈকতে দীর্ঘদিন পর্যটক কম থাকায় পুরো সৈকতে তৈরি হয়েছে ভিন্নতা। প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের ডানা মেলে দিয়েছে।
রাঙামাটি : কেউ রং করছে। কেউ করছেন নতুন স্থাপনা তৈরি। আবার কেউ হরেক রকম রঙে ঢেলে সাজাচ্ছেন হোটেল-মোটেল। সবকিছু আয়োজন শুধু পর্যটকদের জন্য। ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে আগত পর্যটকদের বরণে এমন প্রস্তুতি। পর্যটনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতিপ্রেমিদের আনন্দ দিতে কোনো কমতি রাখা হয়নি।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিম্বল অব রাঙামাটি অর্থাৎ ঝুলন্ত সেতুকে রংতুলির আঁচড়ে দেওয়া হয়েছে এক আকর্ষণীয় রূপ। একই সঙ্গে আরও একটি পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে সান লাইস ইকো পার্ক নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র। এ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হবে ঈদের দিন। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে পার্ক। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বসানো হয়েছে বসার সিট। যাতে প্রকৃতিপ্রেমিরা এখানে বসে হ্রদ পাহাড় উপভোগ করতে পারে। একই সঙ্গে এ পাহাড় থেকে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ছোট বড় সবার জন্য আকর্ষণীয় সব বিনোদন সরঞ্জাম।
বাগেরহাট : সুন্দরবন বিভাগ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বলছে ঈদের দিন থেকেই এই দুটি ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইটে পর্যটকদের ঢল নামা শুরু হবে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র ছাড়াও হিরণ পয়েন্ট, আলীবান্ধা, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, জামতলা সিবিচ, টাইগার পয়েন্ট, দুবলা, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড, ত্রিকোণ আইল্যান্ড, কলাগাছি ও দোবেকি পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। তবে শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের পাড়ে রিভারভিউ ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিকালে বঙ্গোপসাগর মোহনায় সূর্যাস্ত দেখতে এই কেন্দ্রটিতে ভিড় করছে হাজার হাজার পর্যটক। এদিকে পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ ট্যুরিস্ট পুলিশ।
রংপুর : ঈদ সামনে রেখে রংপুর বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর তাজহাট জমিদারবাড়ি এবং দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দিরে ২০ লাখের বেশি দর্শক ভিড় জমাচ্ছে। এতে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদকে ঘিরে সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম রংপুর নগরীর তাজহাট জমিদারবাড়ি। এবারের ঈদে সরকারি ছুটি ৯ দিন থাকলেও তাজহাট জমিদারবাড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি নেই। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ঈদের দিন এবং এর পরের দিনও দায়িত্ব পালন করবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এবার আশা করা হচ্ছে ঈদের ছুটিতে ৫০ হাজারের বেশি দর্শনাথীর সমাগম হবে। এ লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ দর্শনার্থীদের বিভিন্ন সুযোগসুবিধা।
রাজশাহী : আলো ঝলমলে রাজশাহীতে দেখার মতো অনেক স্থান আছে। ঈদের ছুটিতে এসব জায়গায় ঘুরতে পারেন ভ্রমণপিয়াসীরা। এ ছাড়া রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি, বাঘা শাহি মসজিদ পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বাঘা শাহি মসজিদ চত্বরের ঈদের দিন থেকে বসছে মেলা।
রাজশাহীর সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হলো টি-বাঁধ। বলা চলে রাজশাহীর সিগনেচার দর্শনীয় স্থান। শহর থেকে একদম হাঁটার দূরত্বে এ বাঁধ অবস্থিত। মূলত ইংরেজি অক্ষর টির মতো দেখতে বলে বাঁধের নাম টি বাঁধ। বাঁধ থেকে নদীর শান্ত, শীতল ও স্নিগ্ধ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বাঁধের সামনে অপরূপ দৃশ্য ধরা দেবে চোখে। নদীর ওপারে ছোট্ট একটি গ্রাম আছে। নৌকা নিয়ে সে স্থানগুলোতে যাওয়া যায়। বাঁধে সব সময় নৌকা থাকে।
টি-বাঁধ থেকে একদম হাঁটাপথে পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান। সেখানে বিভিন্ন বৃক্ষে শোভিত। ভাস্কর্য, পানির ফোয়ারা, নভোথিয়েটারসহ ছোট একটি লেক আছে পার্কে। পার্কের কৃত্রিম পাহাড় থেকে পদ্মা নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। এ ছাড়াও চিত্তবিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, প্যাডেল বোটসহ বেশ কয়েকটি রাইড।
দিনাজপুর : সামন্ত রাজার অমর কীর্তি দিনাজপুরের রামসাগর যা সারা বাংলার এক সৌন্দর্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক দিঘি। প্রাকৃতিক অপরূপ নয়নাভিরাম দিঘিটি পর্যটকদের মনকে ছুঁয়ে যায় ভালো লাগার পরশে। আর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানে সবার দৃষ্টি কাড়ে রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানার মায়াবী চিত্রা হরিণগুলো। ঈদে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়বে দৃষ্টিনন্দন স্বপ্নপুরী, সুরা মসজিদ, নয়াবাদ মসজিদ, রাজবাড়ী, সিটি পার্ক, দাদুবাড়ী দেখতে। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশে ঈদ আনন্দে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় বাড়ে খানসামার জিয়া সেতুর কাছে আত্রাই নদীর তীরে মনোরম পরিবেশসহ ভাসমান রেস্তোরাঁয়, চিরিরবন্দরে নদীর ওপর ভাঙা রেলসেতু এলাকা, বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্ট ও স্লুইসগেট এলাকা, দিনাজপুর শহরের শিশুপার্কসহ বড়মাঠ, নবাবগঞ্জের আশুড়ার বিল ও বন এলাকা, মোহনপুরের রাবার ড্যাম, সুখসাগর।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে বিনোদন কেন্দ্রগুলো সেজেছে নতুন সাজে। ঈদের ছুটিতে আনন্দে মেতে উঠতে দর্শনার্থীদের বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রামের ফয়’স লেক, চিড়িয়াখানাসহ বেশির ভাগ বিনোদন কেন্দ্র। ঈদের লম্বা ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় জমে পর্যটন কেন্দ্রে। পাশাপাশি নানা বিনোদন কেন্দ্রে চলছে অফারের মাধ্যমে দর্শনার্থী টানার প্রতিযোগিতা। বিগত সময়ের তুলনায় এবার দর্শনার্থী ভিড় বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ঈদে ছুটি পর্যাপ্ত থাকায় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীর ঢল নামবে। বিশেষ করে নগরীর পতেঙ্গা সমুদসৈকত, নেভাল, হালিশহর, সাগরিকা সাগরপাড়, আনোয়ারা পারকি সমুদ্রসৈকত, সীতাকুণ্ড গুলিয়াখালী বিচ, আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, মেরিটাইম মিউজিয়াম এবং ফয়’স লেক এমিউজমেন্ট পার্ক। দর্শনার্থী উপযোগী করা হয়েছে এসব স্পট। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নজরদারি রাখবে ট্যুরিস্ট পুলিশও।
সিলেট : পাহাড়, নদী, ঝরনা, বিস্তীর্ণ চা-বাগানসহ অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসেন সিলেটে। তবে গেল দুবার বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ঈদের ছুটিতে ব্যবসা হয়নি। ফলে দুই বছরই লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এবার দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজনৈতিক হানাহানি নেই। পূর্বাভাসও বলছে ঈদ-পরবর্তী দিনগুলোর আবহাওয়া থাকবে ঘুরে বেড়ানোর অনুকূলে। তাই বেজায় খুশি ব্যবসায়ীরাও।
সিলেটের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামার সম্ভাবনা দেখছেন তারা। ইতোমধ্যে ঈদের পরের কয়েক দিনের জন্য বেশির ভাগ হোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে। সেবা দিয়ে পর্যটকদের সন্তুষ্ট রাখতে বেশির ভাগ হোটেল কর্তৃপক্ষ রমজান মাসে সংস্কারকাজ করিয়েছে। কেউ কেউ ফার্নিচার পাল্টেছে, আবার কেউ সাজসজ্জায় এনেছে পরিবর্তন। হোটেলমালিকদের পাশাপাশি রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের গাড়িগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামতকাজ সেরে নিয়েছে। শেষবারের মতো ওয়ার্কশপে নিয়ে গাড়ির ফিটনেস চেক করিয়ে নিয়েছে তারা।