
সরকারি টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটিতে এবার ঈদে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেট ও পার্বত্য এলাকায় পর্যটকের ঢল নামতে পারে। সেই সঙ্গে বেশি জনসমাগমের কারণে নিরাপত্তাঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে চুরি, ছিনতাই ও ইভ টিজিংয়ের মতো ঘটনা প্রতিরোধে থাকছে টহল। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও রয়েছে। সারা দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা-পুলিশের সমন্বয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্র বলছে, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি প্রতিরোধে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেসব স্পটে জনসমাগম বেশি হয় সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিগুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশের তেমন কোনো সদস্যকে ঈদেও ছুটিও দেওয়া হয়নি। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, পার্বত্য অঞ্চল ও সুন্দরবনে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ৩০টির মতো ট্যুরিস্ট স্পটে জনসমাগম বেশি হয়। এগুলোতে কার্যকর নজরদারি থাকলে এবং পর্যটকরা আরও সচেতন হলে নিরাপত্তাঝুঁকি কমে যাবে। আর এই যৌথ তৎপরতায় মানুষ নিশ্চিন্তে ট্যুরিস্ট স্পটগুলো ভ্রমণ করতে পারবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘ঈদের লম্বা ছুটিতে বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটে জনসমাগম বাড়তে পারে। আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। ঈদের আগে, ঈদের দিন ও ঈদ-পরবর্তী সময় ঘিরে আমাদের আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে।’ পর্যটনকেন্দ্রে টহল টিম বাড়ানোর পাশাপাশি মোবাইল টিমের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য সাদাপোশাকে মোতায়েন থাকবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ঈদের জামায়াত ও সড়কে যানজট নিরসনে ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর থাকবে। জানা গেছে, দেশে ১ হাজার ৬৭৫টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জেলার ১০৪টি স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশের ১ হাজার ৩৯১ জন সদস্য। বাকি ১ হাজার ৫৭১টি স্পটে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এসব পর্যটন স্পট অনিরাপদ থেকে যাচ্ছে। এ চিত্র পর্যটকদের জন্য উদ্বেগের। কেননা দেশে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। ভ্রমণপিয়াসীরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে। নিজেরাই এসব পর্যটন কেন্দ্র আবিষ্কার করছে। সেখানে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ধীরে ধীরে সেসব স্থান পর্যটন স্পটে পরিণত হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, তারা যেসব স্পটে যাচ্ছে, সেখানে যাতায়াত, থাকাখাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা নেই। রয়েছে নিরাপত্তাসংকটও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সবচেয়ে পছন্দের অন্যতম স্থান কক্সবাজার। তাই এবার এই সৈকত শহরে আগের বছরের চেয়েও বেশি ভিড় হবে। হোটেল-মোটেল মালিকরা বলছেন, গত বছর ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে ৯ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছিলেন কক্সবাজারে। এবারের ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিন থেকে হোটেল-মোটেলগুলো বুকিং হয়েছে। ঈদের ছুটি ৫ এপ্রিল পর্যন্ত হলেও ১২ এপ্রিল পর্যন্ত টানা রুম বুকিং রয়েছে বেশির ভাগ হোটেলে। ইতোমধ্যে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও কটেজে ৫৫ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রুমগুলোও ৩১ মার্চের আগে বুকিং হয়ে যাবে। পাঁচ শতাধিক হোটেলের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার।