
জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়া গেলেও নিবাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, অন্যতম দল জামায়াতে ইসলামী, আলোচিত ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপিসহ প্রায় সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজের নির্বাচনি আসনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোটারদের হৃদয় জয় করে দলের কাছে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তৎপর সবাই। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রমজানজুড়ে ইফতার-রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। ঈদ সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের জন্য উপহার, গরিব অসহায়দের জন্য জাকাত-ফিতরা নিয়ে হাজির হয়েছেন। আর ঈদের পর নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছেন। এভাবেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
সব আসনেই প্রচার চালাচ্ছে জামায়াত : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করাসহ নানামুখী কর্মকা পরিচালনা করছে দলটি। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে চায় জামায়াত। এরই মধ্যে কমপক্ষে আড়াই শ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণাও করেছে। কেন্দ্রের গাইডলাইন অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে নানা কৌশলে গণসংযোগ ও প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নিয়মিত কর্মিসভায় যোগ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক জেলা সফর করেছেন। এসব সফর থেকে দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে এসব আসনে সভাসমাবেশের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকা পরিচালনা করছেন। অবশ্য নির্বাচনের আগে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য কিংবা জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাবে। এদিকে সারা দেশে প্রাথমিক প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা প্রার্থীদের ছবি দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন।
দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনি প্রস্তুতিতে এনসিপি নেতারা : শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে সরকারের উপদেষ্টা পদ ছেড়ে আসা নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ (রামপুরা-বনশ্রী) আসনে, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হতে চান। গত সোমবার তিনি গাড়িবহর নিয়ে এলাকায় শোডাউন করেন। আরেক মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে আগে শোনা গেলেও এনসিপি সূত্র জানিয়েছেন, তাঁকে ঢাকা-৯ আসনে প্রার্থী করা হতে পারে। ঢাকা-১৭ আসনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনীম জারা, ঢাকা-১৩ আসনে যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসাইন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পদত্যাগ করে রাজনীতিতে যোগ দিলে তিনি ঢাকা-১০ অথবা কুমিল্লা-৩ আসনে লড়বেন। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির লক্ষ্মীপুরে নির্বাচন করতে পারেন। সরকার ছেড়ে মাহফুজ রাজনীতিতে যোগ দিলে ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার ঢাকা-৫, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ঢাকা-৯ এবং সংগঠক মো. রাসেল আহমেদ ঢাকা-১ থেকে লড়তে পারেন। সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসনে প্রার্থী হবেন। এলাকায় নিয়মিত যাচ্ছেন সাবেক এ ডাকসু নেতা। মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) কিংবা ঢাকায় দেখা যেতে পারে। সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য, সম্মানিত। ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকায় ছিলেন যেসব মানুষ, তারা যুক্ত হবেন এনসিপিতে। সিনিয়র সিটিজেনরাও যুক্ত হবেন। অনেকেরই নিজ নিজ এলাকায় জনসমর্থন রয়েছে। এখনো সারা দেশে এনসিপি বিস্তৃত নয়। বিস্তৃতি ঘটলে আরও অনেকে যুক্ত হবেন। বিচার ও সংস্কার শেষে তাদের সবাইকে নিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়বে এনসিপি। এ ছাড়া সব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। একই চিন্তা এবি পার্টির। এককভাবে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একমত হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)। নির্বাচনি লড়াইয়ে মাঠে নামতে বসে নেই ডান, বাম ও অন্য ইসলামি দলগুলোও।