
চালের বাজারে অস্থিরতা কাটছেই না। বাড়ছে দাম। মাসের ব্যবধানে মান ও জাতভেদে ৫০ কেজির চালের বস্তায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। তবে সরকারি ভোগ্যপণ্য বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, মাসের ব্যবধানে চালের দাম বাড়েনি। যদিও সরেজমিনে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে খুচরা বাজারে এবার চালের দাম কেজিকে ৪ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা ভারতীয় চালের দাম কিছুটা কমলেও মৌসুমের শেষ দিকে হওয়ায় দেশীয় চালের দাম বাড়ছে। করপোরেট সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে বলে দাবি তাদের। বোরো মৌসুমের নতুন চাল বাজারে এলে দাম কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
৫০ কেজির ইরি চালের বর্তমান দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে, এক মাস আগে ৫০ কেজির ২৮-বেতি চালের দাম ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা। এখন প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা বেড়েছে। ২৯-বেতি চালের দাম ৫০ কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে এ চাল ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে
বুধবার নগরীর চাক্তাই পাইকারি চালের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় চালের পাশাপাশি রয়েছে ভারতীয় চালের সরবরাহ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে মোটা চাল হিসেবে পরিচিত ইরি চাল। ৫০ কেজির ইরি চালের বর্তমান দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে, এক মাস আগে ৫০ কেজির ২৮-বেতি চালের দাম ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা। এখন প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা বেড়েছে। ২৯-বেতি চালের দাম ৫০ কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে এ চাল ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ২৫ কেজির কাটারিভোগ চালের দাম মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১০০ টাকা। এক মাস আগের ২ হাজার ১০০ টাকার এই চাল বর্তমানে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। একই চাল বর্তমানে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৭৫ টাকা। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। এক মাস আগেও খুচরায় এ চালের দাম ছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা।
বাজারে চালের দাম গত মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সামনে বোরো মৌসুমের নতুন চাল বাজারে এলে দাম কমতে পারে।- জাহেদুল ইসলাম শাওন
বাজারে বর্তমানে ৫০ কেজির পাইজাম সেদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৫০ টাকায়। এক মাস আগে এসব চালের বস্তার দাম ৫০ টাকা কম ছিল। একইভাবে পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি ২৮-বেতি সেদ্ধ (নবান্ন) চালের দাম ৪ হাজার ৪০০ টাকা। এক মাস আগেও যার দাম ছিল ৪ হাজার ২০০ টাকা, যা পাইকারিতেই বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা। একইভাবে ৫০ কেজিতে ২০০ টাকা বেড়েছে ২৯-বেতি সেদ্ধ চালের দামও। বর্তমানে এসব চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।
বাজারে ইরি পুরোনো চালের (৫০ কেজির) দাম এখন ২ হাজার ৫০০ টাকা হলেও এক মাস আগে এসব চালের দাম বস্তায় ১০০ টাকা কম ছিল। বাজারে নূরজাহান স্বর্ণা সেদ্ধ চালের দাম বাড়েনি। চালটির ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা দামে। তবে ভারতীয় নাজির কাটারি চালের দাম ২৫ কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে। বর্তমানে ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ টাকায়।
চাক্তাইয়ের চালের আড়তদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেকান্দার হোসেনের পরিচালক জাহেদুল ইসলাম শাওন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে চাতালনির্ভর চালের সিন্ডিকেট ছিল। এখন সেটি নেই। এখন করপোরেট হাউজগুলো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। খুচরা বাজারে কাটারিভোগ চালের দাম সর্বোচ্চ ৯৫ টাকা। কিন্তু করপোরেট হাউজগুলোর এসব চাল ১০ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা। অর্থাৎ, এক কেজিতে ১০ টাকা বেশি।
‘অনেকে এসব চাল খাচ্ছেন। যে কারণে বাজার থেকে বেশি দামে চাল কিনে মজুত করছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা তাদের মার্কেটিং প্রসেসে বাজারে এসব চাল বিক্রি করছে। ভোক্তাদের বেশি দামে এসব চাল কিনতে হচ্ছে। অথচ একই চাল খোলা বাজারে কেজিতে ১০ টাকা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে চালের দাম গত মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। সামনে বোরো মৌসুমের নতুন চাল এলে দাম কমতে পারে।’
ভারতীয় চালের দাম কমছে। ভোমরা, হিলি, বেনাপোল এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দরগুলোতে ১০-১৫ দিন আগেও চালের দাম ছিল ৬৭ টাকা কেজি। এখন একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকায়। এর প্রভাব চাক্তাইয়ের পাইকারি বাজারেও রয়েছে। আশা করছি, নতুন চাল আসা শুরু হলে দামও কমে আসবে।- ওমর আজম
টিসিবির তথ্যানুযায়ী, বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম বাড়েনি। সংস্থাটি বলছে, ২৪ মার্চ ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে মোটা চাল ইরি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকায়। এক মাস আগেও একই দাম ছিল। তবে এক বছর আগেও এসব চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৫ টাকা কেজি দরে। এক মাস আগে একই দাম থাকলেও এক বছর আগে এসব চাল বিক্রি হতো ৫৪-৫৬ টাকায়।
অন্যদিকে, সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইল জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৩-৮৫ টাকা কেজি দরে। এক মাস আগেও একই ছিল এসব চালের দাম। তবে এক বছর আগে কেজিতে ৭-৯ টাকা কম ছিল। তখন প্রতি কেজি সরু চাল ৬৫-৭৬ টাকায় বিক্রি হতো, বলছে টিসিবি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, আমন মৌসুমে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭৪ টন। গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত ১৩ লাখ ১৫ হাজার ২০১ টন। এর মধ্যে চালের মজুত ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪১৩ টন। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৩ হাজার ৪২০ টন।
চাক্তাই পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বোরো মৌসুমের নতুন চাল বাজারে আসতে ২০ দিন থেকে এক মাস সময় লাগবে। সবসময় বছরের এ সময় দেশীয় চালের দাম বাড়তির দিকে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমদানি করা ভারতীয় চালের দাম কমছে। বিশেষত স্থলপথে ভোমরা, হিলি, বেনাপোল এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে চাল আসে। এই বন্দরগুলোতে ১০-১৫ দিন আগেও চালের দাম ছিল ৬৭ টাকা কেজি। এখন একই চাল বর্ডারে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা। এর প্রভাব চাক্তাইয়ের পাইকারি বাজারেও রয়েছে। আশা করছি, নতুন চাল আসা শুরু হলে দামও কমে আসবে।’