
মাদক ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবাদ করায় রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের এক নারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে বংশাল থানায় একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী। শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় নাজিমদ্দিন রোডের কাঠ অফিসের গলিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, অভিযুক্তের নাম আসিফ, তিনি চানখাঁরপুল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫ আগস্টের আগে হাজী সেলিমের সাথে রাজনীতি করতেন। আর ভুক্তভোগী নামিরা হোসেন নেহা বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ২০১৯-২০২০ সেশনের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনিও পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকার (৪২/২) নাজিমউদ্দীন রোডের স্থানীয় বাসিন্দা এবং জুলাই ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া একজন সক্রিয় কর্মী।
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) থেকে। আসিফ নিজ বাড়িতে অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ করেন তারই বাড়ির অংশীদার ইয়াসমিন হেনা। তবে আসিফ এ অভিযোগ না শুনে উল্টো তাকে মারধর করেন। পরে তাদের ঝগড়া থামাতে যান কলেজ ছাত্রী নামিরার মামা মো. কামাল।
এরই জেরে পরবর্তীতে শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী নামিরার বাসার সামনে ১৫ জনের একটি দল আসে। এ সময় আসিফের নেতৃত্বে নামিরাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নামিরা আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং এ ঘটনায় বংশাল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
এ ছাড়াও ৫ আগস্টের আগে পুরান ঢাকায় হাজী সেলিমের সাথে রাজনীতি করতেন আসিফ। তাই এর আগে তার এমন অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করার সাহস পেত না এলাকাবাসী। তবে ৫ আগস্টের পরে নামিরা এ প্রতিবাদ শুরু করে ও ২৪-এর আন্দোলনে যাওয়ার কারণে তার ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই নারী শিক্ষার্থী।
নামিরা হোসেন নেহা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আসিফ মূলত একজন মাদককারবারী। চানখাঁরপুল এলাকায় নিজ বাড়িতে তৃতীয় তলায় থাকা এক ভাড়াটিয়া বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের অভিযোগ আনেন তারই বাড়ির অংশীদার আরেক বাড়িওয়ালা। অর্থাৎ আসিফ ও ইয়াসমিন হেনা দুজনে মিলে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন, তারা দুজনই আত্মীয় ও সম্পর্কে ভাই-বোন।
‘‘ইয়াসমিন হেনা তৃতীয় তলায় থাকা ভাড়াটিয়ার অনৈতিক কাজের অভিযোগ দেন আসিফের কাছে। এ নিয়ে তারা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হলে, আমার মামারা তা দেখে ঝগড়া থামাতে যান এবং ভাড়াটিয়াকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে তা আসিফ না শুনে উল্টো ইয়াসমিন হেনাকে (বাড়ির অংশীদার) বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) মারধর করেন।’’
তিনি আরও বলেন, আসিফের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারত না, কিন্তু আমরা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলি। এ কারণেই সে আমার ও স্থানীয়দের ওপর হামলা করে। আজ আবারও আমাদের দেখে নেবে বলে আসিফের মামা এলাকার এক ভাইয়ের কাছে এ খবর জানিয়ে যায়।
‘‘আজ নাকি আরও বেশি রক্ত ঝরবে বলে জানায়। আমাদের জীবন নিয়ে শংকায় আছি। ২৪-এর আন্দোলনে যাওয়ার কারণেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, পরবর্তীতে আমাদের দেখে নেবে। আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।’’
নামিরার স্বামী মো. আকিবুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চানখাঁরপুলের স্থানীয় বাসিন্দা আসিফ, যিনি আওয়ামী সরকারের আমলে হাজী সেলিমের সাথে রাজনীতি করতেন এবং চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে (দেহ ব্যবসা) জড়িত ছিলেন ও এখনো এসবের সাথে জড়িত রয়েছে। স্থানীয় লোকজন, আমি ও আমার স্ত্রী তার এসব অপকর্মের কাজে বাধা দেয়।
এতে সে আমাদের ও স্থানীয়দের হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। এর আগে আসিফের অংশীদার আরেক বাড়িওয়ালা এসব অপকর্মে বাধা দেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাত ১টার দিকে তাকে মারধর করে। আর গতকাল শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাত ১১ টার দিকে পুরান ঢাকার চানখারপুল এলাকায় নাজিমদ্দিন রোডের কাঠ অফিসের গলিতে আমাদের হামলা করতে আসে। এ সময় স্থানীয়রা জড়ো হতে থাকেন।
পরে আসিফ ও তার বউ নিলার নেতৃত্বে ২০/২৫ জন আমাদের ওপর হামলা করে। হামলায় ১৫/১৬ জন আহত হন। সবচেয়ে বেশি আহত হন আমার স্ত্রী নামিরা হোসেন নেহা। পরে আমরা স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বংশাল থানায় রাত ১টার দিকে অভিযোগ দায়ের করি। পুলিশ এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) সোহেল রানা নামে একজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন।
আমরা ২৪-এর আন্দোলনে গিয়েছিলাম বিধায় সেসময়ও আমাদের হুমকি-ধামকি দিত। আন্দোলনের সময় যেভাবে হুমকি দিয়েছিল, আজকে আবারও হুমকি দিচ্ছে। আজ রাতে নাকি আসবে আমাদের দেখে নিতে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) সোহেল রানা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার চানখাঁরপুলে দু’গ্রুপের মারামারি হয়েছে এবং দু’ পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তাদের এ বিষয়টি এস আই শফিউল দেখছেন।’
মামলার তদন্তকারী বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) শফিউলকে একাধিকবার কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ‘ছাত্র আন্দোলনে যাওয়ার কারণে কি, আজ আমরা জীবন মৃত্যুর হুমকিতে আছি?’ শিরোনামে একটি লেখা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, আজ আমি বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছি। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে এলাকার কিছু আওয়ামী লীগপন্থী সন্ত্রাসী আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। আমার ওপর ব্লেড ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করা হয়, এবং আমার মুখে ব্লেডের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছি আমি ।
‘‘এই হামলার ঘটনায় আমি বংশাল থানায় নিজ হাতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হামলাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’
তিনি লেখেন, যদি আগামী দিনগুলোতে আমার ওপর আবার হামলা হয়, বা আমাদের কিছু হয়ে যায়—এর দায়ভার কে নেবে?
‘‘আমি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সকল ভাই-বোনদের, মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এবং বিবেকবান জনগণকে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমার পাশে দাঁড়ান। আমাদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হোন।’’
‘‘আমরা বিচারের আশায় আছি, কিন্তু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।’’
তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসিফের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস অভিযুক্তের বক্তব্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।