
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে কয়েকটি আলোচিত ডাকাতি ও ছিনতাই ঘটনা ঘটেছে। পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাসে এসব ডাকাতির ঘটনার পেছনে বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নিষ্ক্রিয়তা’ ও ‘ঢিলেঢালা টহল’ ব্যবস্থার কথা উঠে এসেছে। যার কারণে মহাসড়কে রাতে যাত্রীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ডাকাতি-ছিনতাইসহ ঈদযাত্রায় সবধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীদের নির্বিঘ্ন চলাচলে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত ৭০০ জনের একটি ফোর্স এরইমধ্যে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ৩০০ জন শিগগিরই তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। এছাড়া, জেলা পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা তাদের সহযোগী হিসেবে মোতায়েন থাকবেন।
পাশাপাশি সারা দেশের ১ হাজার ৪৪৩ জন ডাকাতের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। একইসঙ্গে মহাসড়কে বর্তমানে ৩০০ টহল টিম কাজ করছে এবং ঈদযাত্রা শুরু হলে টহল টিমের সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথাও জানানো হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ আরও জানায়, সারা দেশের চেকপোস্টগুলো লাইভ ভিডিও’র মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পুলিশের আটটি রেঞ্জের আট জন ডিআইজি এসব চেকপোস্ট তদারকি করবেন। ইতোমধ্যে এলেঙ্গা, চট্টগ্রাম হাইওয়ে, মহিপাল ও নোয়াখালীসহ সড়কে ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
এছাড়া যানজট নিরসনে সারা দেশে ৬৪টি ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এসব এলাকায় পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য কাজ করবে। এছাড়া যেসব এলাকায় সংস্কার কাজ ও বাজারের জন্য যানজট লেগে যায়, সেসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে কাজ করা কথা জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এর পাশাপাশি সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যানচলাচল নির্বিঘ্ন করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সারা দেশের ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশ ৩৭৭টি চেকপোস্ট এবং জেলা পুলিশ ১১৪টি চেকপোস্ট ও ৫২৭টি টহল দল পরিচালনা করবে।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কিছু নিরাপত্তা পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এতে আঞ্চলিক সড়ক বা মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যাত্রী, বাস মালিক, বাস চালকসহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতি কিছু অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখুন। চালককে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ দেবেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ এবং অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা; যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ নেই, সেখানে যানবাহনের গতিবিধি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়াসহ সড়ক আরও বেশকিছু বিষয়ে সতর্কতার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধে ৬৪ জেলায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) টিম গঠন করা হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসন, লোকাল মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিআরটিএ কাজ করছে।
হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশনস উত্তর বিভাগ) ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারের ঈদের আগে পরে দীর্ঘ ছুটি আছে। যেহেতু হাতে সময় আছে নিশ্চয়ই একসঙ্গে সবাই যাত্রা করবে না। সেজন্য সড়কে চাপ কমই থাকবে। সড়কে যেন কোনও ঝামেলা না হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত ৭০০ জনের একটি ফোর্স ইতিমধ্যে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ৩০০ জনের আরেকটি ফোর্স দ্রুতই সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তায় যোগ দেবেন। এছাড়া, জেলা পুলিশ, র্যাব সদস্যরা ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা হাইওয়ে পুলিশের সহযোগী হিসেবে মোতায়েন থেকে দায়িত্ব পালন করবে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদযাত্রায় খুশির পথে ডাকাতির মতো ঘটনা সবার জন্য বড় বেদনার। এতে যাত্রীসহ আমাদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। কীভাবে ঈদযাত্রা নিরাপদ করা যায়, তা নিয়ে হাইওয়ে পুলিশসহ আমরা কাজ করছি। যাত্রীদেরও সচেতন থাকতে হবে। আশপাশের কোনও যাত্রীকে সন্দেহজনক মনে হলে আগে থেকেই হাইওয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়া অথবা কৌশলে চালক বা সহকারীকে তথ্য দিলে সুযোগ মতো টহল পুলিশের সামনে বাস দাঁড় করিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
এবারের ঈদের ছুটি হবে দীর্ঘ, এটাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো গেলে যাত্রীদের ভোগান্তিমুক্ত, স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একগুচ্ছ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঈদযাত্রার বহরে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। রুট ভিত্তিক গতি নির্ধারণসহ রুট পারমিট ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে মহাসড়কে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের ১০ দিন আগে উচ্ছেদ করতে হবে। টোল আদায় ডিজিটাল করা অথবা অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের দাবিও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. দেলোয়ার মিঞা বলেছেন, এবারের ঈদে আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাবো। একইসঙ্গে যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তার কোনও শঙ্কা যেন না থাকে সেজন্য আমরা সারা দেশের মহাসড়কে টহল, চেকপোস্টসহ নিরাপত্তা জোরদার করছি। এবার সুন্দর ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।