
মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা প্রতারিত ৩ হাজার শ্রমিক জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে অভিযোগ করে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর অভিযোগ সেল থেকে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবং শ্রমিকদের (উভয়পক্ষ) উপস্থিতিতে শুনানি করে প্রায় আড়াই হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তির পর ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মসংস্থান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে জানান, ২০২৪ সালে বিদেশগামী ও বিদেশে যেতে না পারা কর্মীদের পক্ষ থেকে ৭ হাজার ৯৪৬টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। তার মধ্যে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কলিং ভিসা, টিকিট কাটাসহ সব কিছু হওয়ার পরও দেশটিতে প্রায় ১৮ হাজার কর্মী যেতে পারেননি। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের মধ্য থেকেই বিএমইটিতে অভিযোগ জমা পড়েছিল ৩ হাজার ৩০৮ জন কর্মীর।
তারা বলেন, এসব অভিযোগ ব্যুরোতে নিয়ম অনুযায়ী জমা হওয়ার পর শ্রমিকদের বিদেশ পাঠানোর সাথে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মীদের নামে চিঠি ইস্যু করা হয়। তাদের নির্ধারিত তারিখে হাজির হতে বলা হয়। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি চলে। একাধিকবার শুনানি শেষে বিচার সালিসের মাধ্যমে ২ হাজার ৩৮৬টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা এখনো ৯২২টি অভিযোগের আবেদনের শুনানি চলমান রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে জানান, প্রতারিত শ্রমিকদের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে এজেন্সির মালিকদের আমরা চিঠি দিয়ে অফিসে আসতে বলি। এরপর তাদের স্টেটম্যান গ্রহণ করি। দুই পক্ষের বক্তব্য নেয়ার পর কর্মীদের নায্য ক্ষতিপূরণের টাকার পরিমাণ তাদেরকে দিতে বলি। যারা দিতে রাজি হচ্ছেন তাদেরটা ব্যুরোতে মীমাংসা করে দিচ্ছি। যারা কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করে তাদের বিষয়টি সুপারিশসহ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, এভাবে শুনানি করে মালিকদের কাছ থেকে প্রতারিত শ্রমিকদের কাছে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৫ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায় করতে সক্ষম আমরা হয়েছি। খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে কর্মকর্তারা জানতে পারেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সাথে মূলত ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠানোর সাথে জড়িত ছিল। এর মধ্যে দেখা যায়, তাদের নামে (রিক্রুটিং এজেন্সি) এলোকেশন ও চাহিদাপত্র আসলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের কাছে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছে। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার মধ্যে আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল, প্রভাতী ইন্টারন্যাশনাল, থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল, রিক্রুটিং এজেন্সি বিনিময়, দামাসি, আহাদ ইন্টারন্যাশনাল, মাস ট্রেড অন্যতম। মাস ট্রেডের বিরুদ্ধে ২১ জন কর্মী আলাদা আলাদাভাবে ২১টি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা হচ্ছে ১০১টি। এ ছাড়া সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী কারাবন্দী ইমরান আহমদ ও সাবেক সিনিয়র সচিব আহমদ মুনিরুছ সালেহিন এই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী মিসেস কাশমিরি কামালের দুটি প্রতিষ্ঠান, (মেসার্স অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স অরবিচটাল এন্টারপ্রাইজ), সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্নিদ্ধা ওভারসীজ লিমিটেড, সাবেক এমপি লে. জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডসহ মোট ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। এই ১২ এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী গিয়েছে মোট ৬৭ হাজার ৩৮০ জন। যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলসহ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে মোট ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পৌনে ৫ লাখ শ্রমিক গিয়েছিল। সেই হিসাবে এখনো ৮৯টি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম দুদকের মামলার সুপারিশে আসেনি। এই প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তের কাছে একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নিজের নাম না জানিয়ে শুধু বলেন, মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করে যতগুলো রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর প্রসেসিং কাজ করেছিল তাদের সবার নামই মামলার তালিকায় চলে আসবে। তবে ধাপে ধাপে আসবে বলে শুনেছি। আগামী রোববার অথবা সোমবার আরো কিছু ্এজেন্সির নাম আসতে পারে।