Image description
♦ ছয় মাসে আরোপ হয়েছে শেখ হাসিনাসহ ৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ♦ ১০ হাজারের বেশি আদেশ হয়েছে সম্পত্তি ক্রোকের

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২৯ আগস্ট প্রথম দলটির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ আট মন্ত্রী ও ছয় এমপির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত। এরপর একে একে প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন ১০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া ২৫০ জনের আয়কর নথি জব্দের আবেদন  মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি বের হতে থাকে। বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি করে তারা অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। দেশে থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা বিদেশে অর্থও পাচার করেছেন। এখন তারা সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। এজন্য মামলার তদন্ত সংস্থা তাদের অবৈধ অর্জিত সম্পদ জব্দ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করছে। আদালত সে আবেদনগুলো মঞ্জুর করেছেন। তিনি আরও বলেন, গত ছয় মাসে আওয়ামী লীগের প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এ ছাড়া সম্পত্তি ক্রোকের বিষয়ে ১০ হাজারের বেশি আদেশ হয় আদালত থেকে। আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ এসেছে ২৫০টির বেশি। সংশ্লিষ্ট আদালতের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর জিআরও শাখা সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাসে ৩০০ থেকে ৩২০টি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আবেদন মঞ্জুর করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে একই ব্যক্তির একাধিকবার সম্পত্তি ক্রোক এবং তাদের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এখনো কয়েক শ বিভিন্ন পিটিশন আদালতে জমা রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত শুনানি হবে বলে জানান সূত্রটি।

দেশত্যাগের পর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আইন অনুযায়ী দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করছে। আদালত তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দিচ্ছেন। তবে দেশ ছাড়ার আগে অপরাধীদের ধরতে না পারাটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা বলে মনে করেন তিনি। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাধন চন্দ্র মজুমদার, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, কামাল আহমেদ মজুমদার, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তাঁর স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেন, সাফিয়া তাসনিম খান, শাফি মোদ্দাছির খান, সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নসরুল হামিদ বিপু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জুনাইদ আহমেদ পলক। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্যরা হলেন সাবেক মন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, ইমরান আহমেদ, মো. এনামুল হক, স্বপন ভট্টাচার্য, টিপু মুনশি, ডা. এনামুর রহমান, আনিসুল হক, মো. তাজুল ইসলাম, ফরিদুল হক খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, মুজিবুল হক, শ ম রেজাউল করিম, মো. জাহিদ আহসান রাসেল, মো. মহিববুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, হাসানুল হক ইনু; সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর, মো. আবুল কালাম আজাদ, শাহীন চাকলাদার, মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী, মির্জা আজম, মো. শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বেনজির আহমেদ, কাজী নাবিল আহমেদ, শহিদুল ইসলাম বকুল, এ কে এম সরওয়ার জাহান, শেখ আফিল উদ্দিন, মেহের আফরোজ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ, শেখ হেলাল উদ্দিনসহ প্রমুখ।

সম্পত্তি ক্রোকের আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের এমপি সাঈদ খোকন, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আশরাফুল আলম প্রমুখ। আয়কর নথি জব্দের আদেশপ্রাপ্তরা হলেন সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাধন চন্দ্র মজুমদার, জাহেদ মালেক, তাজুল ইসলাম ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।