
ধারাবাহিকভাবে কমছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন। গ্যাসের চাহিদা পূরণে বাড়ানো হচ্চে উচ্চমূল্যে আমদানীকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ। কিন্তু ডলারসংকটের কারণে সরকার চাইলেও বাড়তি এলএনজি আমদানি করতে পারছে না। এতে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে বড় ঘাটতি থাকছে।
এ অবস্থায় সরকার আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) এলএনজি কিনতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঋণ নিচ্ছে। ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার বা চার হাজার ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ঋণ দিতে আগ্রহী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আগ্রহপত্র আহ্বান করে শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় ঋণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ডলারের সংকট থাকায় এলএনজি আমদানি বিল নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এখনো এলএনজি বিল বকেয়া ২০ কোটি ডলারের বেশি।
বিল বকেয়া বাড়তে থাকায় এলএনজি সরবরাহে আগ্রহী হচ্ছে না বিদেশি কম্পানি। ঋণসহায়তা পেলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা।
২০১৮ সালের পর থেকে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকে। ঘাটতি পূরণে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। গত বছরও দিনে গ্যাস উৎপাদিত হতো ২০০ থেকে ২১০ কোটি ঘনফুট।
এলএনজি আমদানি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতারের রাস গ্যাস ও ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল থেকে এলএনজি আনছে আরপিজিসিএল। ২০১৮ সালের এপ্রিলে দেশে প্রথম এলএনজি কার্গো (জাহাজ) আসে কাতার থেকে।
আর ওমান থেকে প্রথম সরবরাহ আসে ২০১৯ সালে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এলএনজি আমদানির পেছনে খরচ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। চড়া দামের এলএনজি কিনতে গিয়ে চাপে পড়েছে জ্বালানি খাত। এর আগে এলএনজি কিনতে বিভিন্ন সময় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ নিয়েছে সরকার।
এদিকে এলএনজি বিলের মতো ডলারসংকটে দেশে সর্বোচ্চ গ্যাস উৎপাদনকারী মার্কিন কম্পানি শেভরনের বিলও নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। শেভরন গ্যাস বিল বাবদ পাবে ১৫ কোটি ডলারের বেশি। গ্যাস বিলের মতো ডলারসংকটে বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
এদিকে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চলতি অর্থবছরের বাকি চার মাসের জন্য চাহিদা আছে ৫০০ কোটি ডলারের। এটি এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বকেয়া পরিশোধে হিমশিম খেয়ে এখন বহুজাতিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বকেয়া থাকার কারণে ভালো কম্পানি এলএনজি সরবরাহে আগ্রহী হচ্ছে না। চাহিদা পূরণে আমদানি বাড়াতে হচ্ছে।
তাই বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঋণ নেওয়া হচ্ছে। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঋণ নেওয়ায় সুদের হার বেশি হবে না। এ ছাড়া এলএনজি কেনার খরচ কমাতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বাড়ানো হবে। ব্রুনেই ও সৌদি আরামকোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।